লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। কিন্তু মৃত্যু তো মানুষের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। তবুও তা মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হয়।
অশীতিপরবৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে সেই বেদনাটুকুই অনুভূত হচ্ছে। তিনি যদি আরো দীর্ঘায়িত হতেন, তাতে দেশ একজন যোগ্য লোকের নির্দেশনা পেত, তার ঘনিষ্ট স্বজনরা তার আদর-মমতায় সিক্ত হতেন। কিন্তু নিয়তির অমোঘ বিধানে তাকে পরপারের ডাকে সাড়া দিতে হল। এ মুহূর্তে তাই তার পরিবার-স্বজন-প্রিয়জনের জন্য আন্তরিক সমবেদনা জানাই এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে মরহুম প্রেসিডেন্টের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
দেশে এখন যে-হারে রাজনৈতিক অনৈতিকতা ও দুর্বৃত্তপরায়ণতার স্রোত বয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের প্রবীণ নেতাগণ ছিলেন তুলনামূলকভাবে অনেক সৎ-স্বচ্ছ ও সজ্জন।
জিল্লুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ। দীর্ঘ এ-জীবনে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও একনিষ্ঠতার যে প্রমাণ রাখতে পেরেছেন, তা যদি আমরা অনুসরণ করতে পারি, তাহলে দেশ স্বাভাবিকভাবেই এগিযে যাবে। তার মৃত্যুতে এ মুহূর্তে যে তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে, সেগুলোই তুলে ধরছি।
ক) স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে দেশের রাজনীতিতে অনেক উত্থার-পতন হয়েছে; পদের লোভ, স্বার্থোদ্ধার এবং আত্মরক্ষার নামে কেনাবেচার বেশ রমরমা অবস্থা ছিল। জিল্লুর রহমান ছিলেন এ সব কিছুর বাইরে, অনেক অনেক ঊর্ধ্বে।
আওয়ামী লীগের কঠিনতম সময়ে, সে হোক পঁচাত্তরের ট্রাজেডি কিংবা ২০০৬ সালের অন্তবর্তী সামরিক আঁটুনি, তিনি সামান্য বিচলিত হন নি। এই নৈতিক অবিচলতা-অটলতা থেকে আমাদের শিক্ষার আছে।
খ) স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে রাজনীতি ছিল মূলত মফস্বলকেন্দ্রিক। জিল্লুর রহামনের রাজনীতির সূচনা যেহেতু স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে, তার রাজনীতিও স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। স্থানীয় সুযোগসন্ধানী হাতি-নেতা আর পাতি-নেতারা তাকে ব্যবহার করেছে সত্য, কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভেজাল মানুষ।
এলাকার মানুষের যে কোনো সমস্যার ব্যাপারে তার আন্তরিকতার কমতি ছিল না। সীমাবদ্ধতার এক অদৃশ্য বেষ্টনী চাটুকারদের দ্বারা তৈরি হয়েছিল, এর কারণে জনগণ তার আন্তরিকতার স্পর্শ পায় নি। তাই এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে, রাজধানীকেন্দ্রিক রাজনীতি ত্যাগ করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে যেতে হবে এবং সীমাবদ্ধতার যে-কোনো রকমের বেষ্টনী অতিক্রম করতে হবে।
গ) প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের দেশে এটাই প্রথম। এর পূর্বে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায় যে-দুটি বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে, তা জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখের এবং অবশ্যই কলঙ্কের।
প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে আমাদের দেশে-রাজনীতিতে নতুন একটি ধারার সূচনা হল। আমাদের সর্বান্তকরণের কামনা ও চেষ্টা থাকা উচিত, সে ধারা অক্ষুণœ ও অব্যাহত রাখা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।