কি স্বপ্ন দেখছো?
দানিয়েল চমকে উঠলো। কিন্তু পরক্ষনেই মুখে ফুটিয়ে তুললো মৃদু হাসির রেখা।
বলল, ভাবছি এই সাগর আর এ তারকা খচিত নিকষ কালো
আকাশের অসীমত্বের কথা। আমরা কত ক্ষুদ্র-এই সাগর ঐ অসীম আকাশ আর এই বিচিত্র পৃথিবীর মালিক স্রষ্টা না জানি কত মহা শক্তিশালী।
শান্ত ও অনুচ্চস্বরে বলল এমিলিয়া, স্রষ্টাকে তুমি মহ শক্তিশালী মনে কর দানিয়েল?
-আমার স্বীকার করা বা না করার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই এমিলিয়া।
মহা সৃষ্টির মাঝেই যে তার মহা শক্তির সাক্ষ্য নিহিত। স্রষ্টাকে তুমি অস্বীকার কররতে পারো এমিলিয়া?
-কিন্তু স্রষ্টাকে মানতে হলে ধর্মকে মানতে হয়। আর ধর্ম-কে মানতে গেলে দেখ না কত ফ্যাসাদ।
-কোন ধর্ম মানবো ইহুদী, খ্রীষ্টান না মোহামেডান? এত সঙ্গর্ষ আর বৈপরিত্য কেন?
-বৈপরিত্য নেই এমিলিয়া। মুসা, যীশুখ্রীষ্ট আর মোহাম্মদ এর মূল শিক্ষা একই।
ব্যাবহারিক ক্রিয়া কর্মের মধ্যে পার্থক্য আছে শুধু। ,এই এমিলিয়া পার্থক্যকে শাসন্ত্রের পরিবর্তন ও সংশোধনের সাথে তুলনা করা যায়।
-কিন্তু এটা স্বীকার করে নিলে যে ইসলামকে মানব সমাজের জন্য শেষ ও অনুকরণীয় একমাত্র জীবন বিধান বলে মেনে নিতে হয়?
-কিন্তু যা সত্য তাকে আমরা অস্বীকার করবো কেমন করে?
-এটা গুরুতর কথা দানিয়েল । এত সহজে এমন কথা তুমি বলতে পারনা। যাক।
আজ ধর্মের কি সত্যই কোন প্রয়োজোন আছে বলে তুমি মনে কর?
-ধর্মের অর্থ জীবন পদ্ধতি। সুতরাং এ ভূমন্ডলে মানুষের জীবন যতদিন থাকবে ধর্মের প্রয়োজোনও ততদিন থাকবে ।
-জীবন পদ্ধতি আমরা নিজেরাই গড়ে নিতে পারি।
-তা পারি। এ ধরনের জীবন পদ্ধতি ফেরাউন, নম্রুদ, সাদ্দাদ গড়ে তুলেছিল।
প্লাটো ,রুশো, ভল্টেয়ার মানুষের জন্য নতুন জীবন পদ্ধতির দিক নির্দেশ করেছিল। হেগেল, কার্ল মার্ক্স মানব সমাজের জন্য ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আলোকে নতুন জীবন দর্শনের রূপরেখা একে গেছে এবং সে মোতাবেক লেলিন, মাওসেতুং এর নেতৃত্বে রাশিয়া এবং চীনে সর্বাত্মক বিপ্লবও সাধিত হয়েছে। গণতন্ত্রের উপর ভিত্তিশীল এক নয়া সমাজ
পদ্ধতি(অবশ্য প্রকৃতপক্ষে এটা প্রাচীণ গ্রীসীয় সমাজ সভ্যতার নবতর সংস্করণ) পশ্চিমা দেশগুলোতে চালু আছে কিন্তু এগুলোর কোন একটিও কি রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে শান্তির সন্ধান দিতে পেরেছে? শ্রেণী স্বার্থের ধ্বজা তুলে সাম্যবাদের নামে সমাজবাদী দেশগূলো কি জনতাকে দাসে পরিনত করেনি?
আর পুজিবাদী দেশগুলোতে ব্যক্তিস্বার্থ অ ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে লুন্ঠন শোষণের অবাধ সয়লাব বয়ে যাচ্ছে না? অশান্ত অস্থির মানুষকে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমোতে হয় কোন কারনে?
-কিন্তু স্রষ্টার নির্দেশিত জীবন পদ্ধতি সব সমস্যার সমাধান করবে,তার নিশ্চয়তা কি?
-আছে এমিলিয়া সাপের কোন জিনিসকে আমরা ভয় করি?
-বিষদাতকে
-আছা সাপের বিষদাত যদি উপড়ে ফেলা হয়, তাহকে সে আর কোন ক্ষতি করতে পারে কি?
-না পারে না, এমিলিয়া হাসলো, কিন্তু মানুষের বিষদাত তুমি পাবে কোথায়?
-মানুষের বিষদাত তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থপরতা। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে সকল প্রকার বিপর্যয়, অশান্তি ও অনর্থের মূল কারনে মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থপরতা। স্বার্থপরতা অন্যায়ের বাহন আর স্বেচ্ছাচারিতা তার অমোঘ অস্ত্র।
-কিন্তু এ বিষদাতকে তো ভাঙ্গা যায় না।
-ভাঙ্গা যায় না কিন্তু এর বিলুপ্তি ঘটানো সম্ভব। মানুষ যখন এক স্রষ্টার সার্বভৌম ক্ষমতার কাছে মাথা নত করে তখন তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থপরতার কোণ সু্যোগই আর থাকে না। সে সত্যিকারভাবে তখন স্রষ্টার দেয়া বিধানবলীর প্রতিপালনকারী ও প্রয়োগকারী হয়ে দাঁড়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।