রাজা
এইটার বাংলা নামঃ লাল শাক
অতি জনপ্রিয় শাক গুলির একটা
ইংরেজীতে বলেঃ Red Amaranth
আবার এয়ার বেইজের গপ্পো।
এয়ার বেইজে কাজ করার সময় গার্ডেনিং এর সুপারভাইজার ছিলো এক বাঙ্গালী। বেশ বয়স তার প্রায় ৬০-৬৫ বৎসর বয়স অনুমানিক। একহারা লম্বা মজবুত শরীরের সঙ্গে ধবধবে সাদা দাড়ি খুব সুন্দর মানিয়ে গেছে। ভরাট করা গমগমে কন্ঠস্বরে যখন তার লোকদের বিভিন্ন নির্দেশ দেয় দূর হতে দেখতে বড় ভালো লাগে।
অতি বিনয়ী এই ভদ্রলোক ব্যবহার সবার সঙ্গে অতি মোহনীয়। অসম্ভব ছিল তার বিশ্লেষন ক্ষমতা। দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতায় কারও কাছ থেক কিভাবে কাজ আদায় করতে হয় তা ছিল নখদর্পনে। আমারদের অতি প্রিয় এই লোক ছিল সমস্ত আসরের মধ্যমনি। আমর সবাই তাকে নান বলে ডাকতাম।
সে ছিল আমাদের সবার কমন নানা। যৌথ যে কোন কাজেই তাকে পাওয়া যেত সবার আগে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও তার মুখ থাকতো সর্বদা হাস্যোজ্জল।
এয়ারবেইজের ভিতর একটা ট্রেনিং সেন্টার ছিল। অনেক টা আমাদের দেশের ক্যাডেট স্কুলের মতো।
সেখানে প্রতি বছর গ্রাজুয়েশান ডে তে ঐ দেশের কোন মন্ত্রী বা বাদশাহ এসে ক্যাডেটদের মাঝে সার্টিফাকেট বিতরণ করতো। ঐ গ্রাজুয়েশন ডে উপলক্ষে প্রতি বছর এয়ার বেইজের ভিতরের রাস্তার মঝের আইল্যান্ডে ফুল গাছ লাগানো, কানাকারপাশ গাছগুলো ছেটে ছেটে সুন্দর করে তুলা হতো। এই জন্য প্রায় দের মাস আগে হতে শুরু হতো প্রস্তুতি। যথারীতি একবার এই গ্রাজুয়েশন ডে জন্য প্রস্তুতি চলছে । রাস্তার আইল্যান্ড গুলোতে মাটি ও কম্পোস্ট সার সহ ফুল গাছে বেড তৈরী করা হয়েছে।
যথারীতি ফুল গাছ ও লাগেনো হলো। একদিন ঐ দিক দিয়ে যাওয়ার সময় নানা আমাকে ডাক দিল। বললো রাজামশাই একটা বুদ্ধি আসছে মাথায় কেমন হয় কন তো দেখি। আমি বললাম বলেন বুদ্ধিটা শুনি। সে বললো এইবার ফুল গাছ কিছু কম আসছে।
পুরা জায়গা কভার করা যাচ্ছে না। তাই চিন্তা করলাম ওর ফাকে ফাকে লাল শাক লাগিয়ে দেই । ফুলের গাছের মাঝে লাল রং এর শাক দেখতে ভালই লাগবে কি বলেন। রাস্তার সৌন্দর্য্য ও বৃদ্ধি পাবে আর খাওয়ার কাজ এ চলবে। আমি বললাম নানা বুদ্ধি খারাপ না।
এতো লাল শাকের বীচি পাইবেন কই। নানা আমাকে বললো তার এক নাতি ( একই কোম্পানীর লোক) বাংলাদেশ থেকে আসবে তাকে বলে দিলেই লালশাকের বীচি নিয়ে আসবে। আমি বললাম যা ভালো বুঝেন করেন। ( আমি এইচ আর এ কাজ করি বিধায় সবাই কিছু করার আগে আমারে জানায় যাতে পরবর্তীতে একটু সুবিধা পায় )
যথারীতি নানা পুরা এয়ারবেইজের সমস্ত রাস্তার মাঝখানে লাগিয়ে দিল লাল শাক। কিছু দিন পর যখ লাল শাক গুলি একটু বড় হলো ফুল গাছের মধ্যে তেক লাল শাক কে আর লাল শাক বইল্যা মনে হয় না।
মনে হয় পাতা বাহারের কোন প্রজাতি ফুল গাছের মধ্যে লাগানো হয়ছে। এয়ার বেইজ কমান্ডার দেখে প্রশংসা করলো। সবাই খুব প্রশংসা করতে লাগলো। গ্রাজুয়েশন ডে এসে পড়লো। যার জন্য নান একটু ভয়ে ভয়ে ছিল কি আবার মন্ত্রী এসে কি না বলে।
যাইহোক কিছু বললো না। গ্রাজুয়েশন ডে অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবেই কোন ঝামেলা ছাড়া শেষ হলো। নানা হাফ ছেড়ে বাচলেন।
এর পর শুরু হলো ভক্ষন পর্ব। প্রায় এক মাস ধরে কোম্পানীর সমস্ত লোকের শাকের চাহিদা মেটানো হলো রাস্তার মাঝের লাল শাক দিয়ে।
রাস্তার ধারে গাছের পাতার মধ্যে যদিও সীসার পরিমান বেশী থাকে কে মানে এই সব তাজা শাকের লোভে সব ভুলে সবাই খায়। এর পর থেকে যথারীতি প্রতি বছর লাল শাক লাগেনো হয়। খাওয়াও হয়।
জানি না এখন কেমন আছে নানা ও তার লাল শাক প্রকল্প। জানি না এখনও লাল শাক লাগানো হয় কিনা ।
নানা, তোমাকে মিস করি।
যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।