নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । (পূর্ব প্রকাশনার পর )
তৃতীয় অধ্যায় / (প্রথম অংশ )
। । পেয়ার কে লিয়ে, চারও পল্ কম নহী থে
কভী হম্ নহী থে, কভী তুম্ নহী থে ।
।
কার কথা দিয়ে যে শুরু করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা । অনেকের কথা দিয়েই শুরু করা যায় । সুশান্তকে দিয়ে আরম্ভ করতে পারলে হয়তো ভালো হ’তো । কিন্তু তাহলে যে অনেক পেছন থেকে শুরু করতে হয় ।
সুশান্ত আমার কে, এ কথা তো উঠবেই । কেমন করেই বা ওর সাথে আমার দেখা আর তার থেকে পরিচয় এসব কথা ঘুরে ফিরে আসবেই । আমি যে আসলে গিয়েছিলাম ডাঃ ওয়াদুদ সাহেবের কাছে এ কথাও আমাকে বলতে হবে । তার’চে নিজের কথা দিয়েই শুরু করা নিরাপদ আর ভালো তো বটেই ।
আমি নভেরা ।
নভেরা কবির । কবির আমার বাবার নাম । নভেরা শব্দের ঠিক অর্থটি আমার জানা নেই । হাতের কাছে যে অভিধানগুলো আছে তাতে খুঁজে খুঁজে নভেরা শব্দটি পাইনি । কাছাকাছি যা পেয়েছি তার একটি “নবোঢ়া” অর্থাৎ নববধূ বা নতুন বৌ ।
আর একটি হলো “নভোরজঃ” মানে কুয়াশা । প্রথমটি হতে আমার বয়েই গেছে ! দ্বিতীয়টিই আমার পছন্দ । একটা অস্পষ্ট ভাব আছে তার, কুয়াশা বললেই একটা অস্পষ্টতা, একটা রহস্যময়তা বোঝায় যেন । এই অর্থটি আমার কাছে ভালোলাগার কারন কি, আমি নিজেই নিজের কাছে অস্পষ্ট, তাই ? এটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি । কুলকিনারা পাইনি ।
তবে ধারে কাছের সবাই বলে আমাকে নাকি ঠিক বোঝা যায়না । কেন বলে বুঝিনা । দিব্যি সবার সাথে জম্পেশ করে মিশছি, আড্ডা দিচ্ছি, মুখ গোমড়া করে রাখিনি কখোনও । আমার প্রচুর বন্ধু । কারো সাথে বন্ধুত্ব বিলোতে আমি কার্পন্য করিনা ।
পৃথিবীর পথে পথে যেথায় যেটুকু আনন্দ ছড়ানো আছে আমি তা দু’হাত ভরে তুলি । ফাল্গুনে যেমন আমগাছ মুকলে মুকুলে ছেয়ে যায়, তারপর ধীরে ধীরে গর্ভবতী হয়ে নুয়ে পড়ে ভারে, আমিও তেমনি অজস্র আনন্দে ছেয়ে তুলি মনের আকাশ । সুখের গর্ভসঞ্চারে টৈ-টুম্বুর থাকি সারাক্ষন । রাতের নির্জনে একাকী নত হই গর্ভসঞ্চারের ভারে । তখোন একটু দুঃখও কি থাকে সেখানে ।
অনেক কথা একসাথে ভীড় করে আসে যা ভুলে যাওয়া দরকার । ঘটনাগুলো যে নোংরা বা বিচ্ছিরি ধরনের কিছু এমোনটা নয় । আবার তা এমোনও নয় যে ঠেলে সরিয়ে দিলেই সাফ হয়ে গেল জঞ্জাল । আমরা তো জীবনের অজস্র কথার অনেক কিছুই ভুলে যাই । সব কথা কি আমাদের মনে থাকে ! কিছু কিছু হয়তো থাকে যাদের তাড়াতে গেলেও আবার ঘুরে ফিরে চলে আসে না চাইতেও ।
কে জানে, আমার মনে কি থাকে ! তবে আমার যে একটা অসুখ আছে ! এরকম অসুখ যে আর কারো হয়না এমোন নয় । পঁচিশ বছর বয়সে এসে তাই আমার প্রথম মনে হয়েছিলো, অনেক কথাই আমার ভুলে যাওয়া উচিৎ ।
আমার বয়েস এখোন ত্রিশ ছুঁইছুঁই । এই যাহঃ, বয়েসের কথা বলে ফেললাম । মেয়েদের নাকি বয়েস বলতে নেই ।
আমার এক দুর সম্পর্কের ফুপু প্রায়ই নসিহৎ করতেন - “ এই মেয়ে, কাউকে তোর বয়স বলেছিস ? খবরদার কাউকে নিজের বয়স বলবিনা কখোনও । ”
- “বয়স বললে কি হয়, ফুপু ? মরে যাবো তাড়াতাড়ি ?”
- “তুই তো বড় ফুঁচকে মেয়ে । এতো কথায় তোর কাজ কি !” বলেছি “বলবিনা, বলবিনা – ব্যাস । “
মেয়েরা নিজেদের বয়েস কেন বলতে চায়না, আমি বুঝিনা । আমার মধ্যে কোনও লুকোচুরি নেই ।
আমার ছোটখাটো আকারের মা’টি এজন্যে কেমন একটা ভয়ে ভয়ে থাকেন আমাকে নিয়ে । লোকে বলে আমার মায়ের মুখটি নাকি আমার মুখে বসানো । ভরন্ত মুখ, নাকের ছাঁদ গ্রীকদের মতো, ভুমধ্যসাগরের মতো নীল চোখ, নীচের ঠোটখানা খানিকটা ভারী হলেও মানিয়ে গেছে মুখের জমিনে । আমার তড়বড়ে স্বভাবের কারনে মা আমাকে তেমন পছন্দ করেন না । মেয়েরা থাকবে শান্ত শিষ্ট, এই তার ধারনা ।
ফলে আমি যা ই করি না কেন একটা দোষ ধরা পরবেই তার কাছে । তবে আমার একটা অসুখ আছে বলেই সম্ভবতঃ আমার বাবা আমার কোনকিছুতেই বাঁধ সাধেন না । বাবাকে আমি এজন্যে বেশী পছন্দ করি । শক্তসমর্থ শরীর তার, বয়েসের তুলনায় অনেক নবীন মনে হয় তাকে । শীলা যে ভদ্রলোকটির সাথে চুটিয়ে প্রেম প্রেম খেলা খেলছে অনেকটা তারই মতো ।
ওহ হো, শীলার কথা বলা হয়নি আপনাদের ।
শীলা আমার স্কুল জীবনের বন্ধু, বাসাও ছিলো একই পাড়াতে । সবচেয়ে কাছের । দু’টি ভিন্নবৃন্তের কুসুম হলেও, একপূজারীর হাতে একই থালায় আছি এখোন । হরিহর আত্মা ।
আমার হেন কিছু নেই যা শীলার অজানা । শীলারও কিছু বাকী নেই আমার জানার । তবে ইদানিং শীলাকে বুঝতে আমার খানিকটা কেমন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে । আমি গেলেই আমার দিকে খুব ঘনঘন তাকিয়ে দেখছে । বাদ দেন, শীলার কথা থাক্ এখোন ।
বলছিলাম বাবার কথা, আর কি প্রসঙ্গ তুললাম । ঐ আমার আর এক দোষ । এক কথা বলতে গিয়ে আর এক কথা বলে ফেলা । আমার বাবা নিয়মিত জগিং করেন । না করে উপায় নেই, ডাক্তার বলেছেন যে ।
প্রশস্ত কপাল, জুলফিতে শুভ্রতার উঁকিঝুকি আছে, লনের ছাঁটা ঘাসের মতো সাদাকালোয় মেশানো দাঁড়ির কারনে মুখটা ভরাট দেখায় । কালো চোখ, সাদা জমিনে হালকা লাল লাল ছোপ । বয়সের কারন আর কোলেষ্টেরল । আমি মাঝে মাঝে তার মুখটির দিকে তাকিয়ে থাকি নির্বোধের মতো । কিছু একটা খুঁজতে চেষ্টা করি ।
যা দেখতে চাই তা পাইনা । বাবা আমাকে দেখলেই হাসি হাসি মুখ করে রাখেন । বলেন – কি রে মা, কিছু বলবি মনে হচ্ছে !
- নাহ, কি বলবো বাবা ।
- তাহলে ওমোন করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন ?
লজ্জা পেয়ে যাই । একথা কি বলা যায়, যা খুঁজছি বা যা তোমার মুখে থাকার কথা; তা নেই কেন ? অথচ আমার মা আবার অন্যরকম ।
কেমন ভাবে যে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন সারাক্ষন । বয়স হয়ে যাচ্ছে অথচ বিয়ে হচ্ছেনা আমার, এই চিন্তা থেকে হয়তো । পৃথিবীর সব মা’য়েরাই বোধহয় আমার মায়ের মতো । ঘরে আইবুড়ো মেয়ে থাকলেই যতো রাজ্যের দুঃশ্চিন্তা মুখের মধ্যে ঝুলিয়ে বসে থাকেন, আবার তার উপর সে মেয়ের যদি কোনও না কোনও রোগ থাকে ।
( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন তিন/চার দিন ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।