নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । (পূর্ব প্রকাশনার পর- ২)
দুই / (শেষ অংশ )
সেদিন ও ইলেক্ট্রিসিটি ছিলো না । ইলেক্ট্রিসিটি কখন আসবে বা যাবে এগুলো এখন সম্ভবত সবার জানা । তাই আগেভাগেই হাতের কাজগুলো গুছিয়ে রেখেছি যাতে রাতের বেলা হাতে কোনও কাজ জমে না থাকে ।
ইন্টারনেটে যেন বসা যায় । আমার যে না বসলেই নয় । কেউ কিছু মনে করবে ? আমার মতো একটি মেয়ে রাতের বেলা ভদ্রস্থ সময়ের বাইরেও ইন্টারনেটে ঘন্টা কাবার করে দেবে, এতে তো মনে করার অনেক কিছুই থাকে । আমার এখানে মনে করার কেউ নেই । থাকলেও কেয়ার করি না ।
তারা জানে আমি কি চীজ ।
জানালার পর্দ্দা খানিকটা সরিয়ে সামনের খোলা জায়গাটাতে চোখ রেখে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েছিলাম । অন্ধকার তখোন সবে ঘষামাজা করে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছিলো ধীরেধীরে আরো কৃষ্ণকলি হয়ে উঠবে বলে । আমার মতোই নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছিলো বোধহয় তারও মনের গভীরে কোথাও । প্রতিদিনই এমোন করে নিজেকে মেলে ধরে সাঁঝের অন্ধকার ।
মনটা ভালো লাগছিলো না । ক্লান্তি যেন একটু একটু করে শরীর বেয়ে উঠছিলো । পরিশ্রমের ক্লান্তি, নাকি মনের গ্লানি থেকে উঠে আসা অবসাদ ঘিরে ধরতে চাইছে ! যে খেলাটার নেশা শুরু থেকে এ পর্য্যন্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে রক্তের ভেতর আবেশে নীল হয়ে উঠছিলো তাকে যে এখন আলবিদা বলার সময় হয়ে এলো । একটা কষ্ট । দুঃখ রোমন্থনেরও একটা নিকষ ভালোলাগা আছে ।
যন্ত্রনা যখন তীব্র যন্ত্রনাময় হতে থাকে তখোন যেন শরীরে কেমন নেশার ঝিম আসতে থাকে । মন তখোনই যেন বলে - আরো আরো । এ যেন হাতের শিরায় ড্রাগ পুশ্ করার মতো । শুধু ঝিম মেরে থাকো । কষ্টের জঠরে জন্ম নেয়া একটা আনন্দ যেন শিরশির করে বইতে থাকে সারা ধমণীতে ।
একটা আনন্দবোধ হতে থাকে ভেতরে ভেতরে । এ আনন্দ বোধহয় সুখভোগের আনন্দের চেয়েও অনেক তেজী । অন্য রকম চরিত্র এর । ঠিক বোঝানো যায়না তার মাত্রা । যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে গলছে এক একটা ধারা ।
আবার নতুন করে শেষের অভিনয়টুকু করতেও ইচ্ছে করছেনা । কদিন থেকেই আস্তে আস্তে জাল বুনে যাচ্ছিলাম বিচ্ছেদ এর । তাকে লিখেছিলাম কথা বলা যাবেনা, ব্যস্ত থাকতে হবে ক’দিন । সে লেখার পর থেকেই মাঝে মাঝে মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে । এভাবে না হয় ক’দিন চালিয়ে নেয়া যাবে, তারপরে ! শেষের ঘাতক তীরটি কি ধরনের বিষ মাখানো হবে ! কোথায় বিঁধবে তা !
ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসা নভেরার গলা শুনতে পাচ্ছি ।
আমার মেয়েকে ডাকছে । বড় অদ্ভুত মেয়ে । আমি ওর তল খুঁজে পাইনা । কি ঘোরের মাঝে যে থাকে সারাদিন ।
- “শীলা, তুই বারান্দায় কি করছিস রে একা একা ?” নভেরার গলা ।
- “কিস..ছু নারে । বারান্দায় আসবি ?” বলতে বলতে বারান্দা থেকে ঘরের দিকে ফিরে দাঁড়াই ।
মেয়েকে কোলে নিয়ে বরং নভেরাই এগিয়ে আসে ।
- কি রে, কি হয়েছে তোর ? মুখখানা শুকনো দেখাচ্ছে ।
ভালো করে নযর করে দেখে নভেরা ।
ও যখোন এভাবে তাকায় আমার খুব ভয় করে । যেন ভেতরটা পড়ে নিতে চায় । ভাগ্যিস আলো নেই । গাঢ় হবো হবো অন্ধকারে আমি অন্যদিকে ফিরে কিছু যেন লুকোনোর চেষ্টা করি ।
- ওম..মা, তুই কাঁদছিলি নাকি ?
নভেরার কথায় চমকে উঠি ।
চোখ কি জ্বালা করে একটু, শিরশির ! কথা ঘুরাতে চেষ্টা করি –
- বা… রে কাঁদবো কেন ?
- বাজে কথা বলিস না । তোর চোখে জল ।
- অন্ধকারে তুই কি থেকে কি দেখছিস, তুই ই জানিস । চোখে কি যেন একটা গেল, পোঁকা-টোকা হবে
হয়তো । তুই একটু দেখতো, কি গেল ।
বলতে বলতে এগিয়ে আসি নভেরার দিকে । সামিয়া নভেরার কোল থেকে ঝপ করে নেমে আমার গলা ধরে ঝুলে পড়ে । কি হয়েছে, মামনি ? দেখি দেখি । এই আর এক মেয়ে, নভেরার ট্রেনিং পেয়ে পেয়ে পাক্কা বুড়ী হয়ে যাচ্ছে । আমার বড় আদরের ।
সামিয়াকে নিয়ে তখনই আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি । নভেরার জেরা থেকে বাঁচতে চাইছি কি ! অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নভেরা দু’টো হাত বুকের ঢালুর নীচে আড়াআড়ি ফেলে রেখে চুপচাপ আমাকে দেখতে থাকে । পিছন ফিরে দাঁড়াই তবুও অনুভব করি নভেরার ছোট হয়ে আসা চোখদু’টো আমার পিঠে আমুল বিঁধে যাচ্ছে । অস্বস্তি লাগছে খুব । এযাত্রা ওর হাত থেকে নিস্কৃতি পাবো কিনা ভেবে একটু আৎকে উঠতে হয় ।
আর তখনই নভেরার গলা, শীলা কথা শুনে যা ।
শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল কি !
নভেরা আমার ছোটবেলার বন্ধু । পাশাপাশি ঠিক নয় এক পাড়াতেই ছিলাম অনেকদিন, স্কুলেও । নভেরা ছাড়াও আরো বন্ধু যে ছিলোনা তা নয় । তবে কেন যে ওকেই বেশী পছন্দ ছিলো আজও বুঝে উঠতে পারিনি ।
এরকমটা কারো কারো বেলায় হয় মনে হয় । ভালো লেগে যায় কাউকে কোনও কারন ছাড়াই । আবার কোন কারনটা ছেড়ে কোন কারনটা বেশী জোড়ালো তাও খুঁজে পেতে বিড়ম্বনা । মনিকা তো একদিন বলেই বসলো, কি দেখলি নভেরার মধ্যে যে ওকে ছাড়া তোর একদম দিন কাটেনা ? তারপরেই ওর সহজাত মিস্টি গলায় গেয়ে উঠেছিলো, “ আমার দিন কাটেনা । রাত কাটেনা ….” ।
আর খিলখিল হাসি । নভেরার মধ্যে আসলে কি ছিলো যা আমাকে টানতো ? আজও বুঝে ওঠা হোলনা আমার । তবে ও যে একলহমায় আমার ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারে, এটাতেই আমার যতো ভয় ।
নভেরা যাচ্ছেনা কেন… ?
( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন তিন/চার দিন ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।