আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা) এক (সম্পূর্ন ) “ …. আমারে যে জাগতে হবে কি জানি সে আসবে কবে যদি আমায় পড়ে তাহার মনে । ” সেখানে না ছিলো আকাশ, না মাটি । শুধু বৃষ্টি ছিলো ।

সে আমাকে ধূঁয়ে দিচ্ছিলো । ফুঁড়ছিলো তীরের মতো । আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো । আমার সারাটা জীবন জুড়ে যেন আমি শুধু ভিজে যাচ্ছিলাম । এবং তখনি ধীরে ধীরে শিখছিলাম কি করে ঘৃনা করতে হয় ।

ঘৃনা শব্দটাকে আমার বড় ভয়, বড় অপরিচিত । অথচ তাকে নিয়েই আমাকে এখন চলতে হবে, ফিরতে হবে । আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে যে সে, সিন্দবাদের দৈত্যের মতো ঠিক ঘাড়টাতে চেপে বসে আছে । আমি কি সেখান থেকে আবারো পুরোনো ভালোবাসার ঘরে ফিরে যেতে পারবো ! স্বাভাবিক কোথাও ! যেখানে আমি ছিলাম এতোদিন, নিজের মনে নিজেই ? বাসের জানালার ধারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে অন্যমনষ্ক ভাবেই আমার মনে হচ্ছিলো, এধরনের গাল্পিক চিন্তাভাবনা আমাকে মানাচ্ছে কিনা। আমার যা বয়স তাতে সেই বয়সের ঘরে রোমান্টিসিজ্ম এর জন্যে কোনও জায়গা ফাঁকা আছে কিনা ।

বিচিত্র মানুষের মন, নৌকার মতো , বয়েই চলে । কোনও নৌকাই একই ঘাটে নোঙ্গর ফেলে চিরদিন বসে থাকেনা । না নদীতে, না জীবনে । শীলা তো আমাকে একটা সুন্দর শায়র পাঠিয়েছিলো এসএমএস করে । লিখেছিলো, “ তোরনা হোতা তো, রিস্তে হম্ না বনাতে / ভরসা না হোতা তো, আপনে দিল কা হিসসা না বনাতে।

” শীলা বোধহয় এখন তা ভুলে গেছে যে, এরকম একটি আবেগময় এসএমএস পাঠিয়ে সে তার ঐ মূহুর্তের মনটাকে আমার হাতে কি নির্বিধায় তুলে দিয়েছিলো । সে কি তখন জানতো, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটিই সে করে ফেলেছে ! হয়তো জানবে ও না কোনদিন । আরো অনেক অনেক সুন্দর শায়র সে আমাকে পাঠিয়েছিলো । আমি তাকে আমার বয়সের কথা তুলে মুঠোফোনে বলেছিলাম, এভাবে আবেগে ভেসে যেওনা । সে হয়তো ভাসতেই চাইছিলো ।

আমার বয়সের তোয়াক্কা করেনি । কে জানে কেন ! বলেছিলো, “মানুষ ভালোবাসে বয়স দেখে নয় । বারবার আমাকে বয়সের কথা বলবেনা ” । সে কি তার রাগ ! আমি মেইলে লিখেছিলাম, “ তোমার মতোন এই এতোটুকু এক মেয়ে এতো শক্তি কোথায় পেলে ?” উত্তরে লিখেছিলো, “ সে আমার প্রেম ” । হ্যা, সেই প্রেম ।

যে প্রেমে তাজমহলের বীজ লুকানো ছিলো । যে প্রেমে ধংশ হয়েছিলো সুন্দরী ট্রয়নগরী । হ্যা, এই সেই প্রেম, যে প্রেমে পেত্রার্ক তার অদেখা লরাকে কালজয়ী করে গেছে ইতিহাসের পাতায় । শীলাও আমার অদেখা । আমি শীলাকে কখনো দেখিনি ।

এ জীবনে তার দেখা পাবো, এমনটাও মনে হয়না । আজকের ইলেক্ট্রনিক জমানায় এই এক সুবিধে, হাতের কাছেই মোবাইল, ডেস্কটপ্-ল্যাপটপ্ আছে, যতো খুশি কথা বলো । এসএমএস করো, অনলাইনে মেইল করে তুলে ধরো নিজেকে । সত্য-মিথ্যে বলে যাও, জানার উপায় নেই । এ যেন এক আলাদা জগৎ ।

বসন্ত বাতাসের মতো । গিরগিটির মতো রঙ বদলানো শুধু , ক্যামেলিয়ন । আনন্দ যতো তারো চেয়ে বেশী ব্যথা, হৃদয় ভাঙ্গার গল্প । এ আমার অনুমান । কোনও ষ্ট্যাটিষ্টিকস্ নেই ।

ইন্টারনেটের এক সাইটে আমাকে খুঁজে বের করেছিলো শীলা । বন্ধুত্বের জন্যে আমার সাইটে ক্লিক করেছিলো তিন তিনবার । আমার চোখ এড়িয়ে গেছিলো তা । আসলে এড়িয়ে গেছিলো কি ! কিন্তু প্রেমের দেবী ভেনাস যদি কারো দিকে একবার তার তীরটি ছোঁড়েন, তার যে ধরা না পরে উপায় নেই । তাকে যে রক্তাক্ত হতেই হবে ! আমার ভাগ্যদেবতা সেদিন কি হেসেছিলেন ভেনাসের এই পাগলামী কিম্বা তার সেন্স অব প্রোপরশান এর অভাব দেখে ? মানুষ একটা অদ্ভুত জীব ।

কতো রঙের মানুষই তো দেখলাম জীবনে । জীবনের ঘাটে ঘাটে হরেক মুখ, হরেক কিসিম । যাকে মনে হয়েছিলো নেহাত গোবেচারা, নিতান্তই হদ্দ, সে ই হয়তো দেখা গেল এক তুখোর পান্ডিত্যের ভারে নুয়ে আছে । আবার যাকে মনে হয় তুখোর কিছু, ওজনদার, দেখা গেল তার ভেতরটা নর্দমায় ভরা – আবর্জনাময় পানা পুকুর । ফাঁকা, ভেতরটা শুধু ফাঁকা ।

হাযারো কিসিমের মুখের ভেতরে নিজের মুখখানিই বা আলাদা করি কি করে ! কি এক অদৃষ্টের ইঙ্গিতে ক্লিক করে বললাম, হ্যা, ওকে, বন্ধুত্ব হ’তে পারে । শীলা সেদিন ই আমাকে তার মেইল এ্যাড্রেস দিয়েছিলো । দিয়েছিলো তার মুঠোফোনের নম্বর । জোর তাগিদ ছিলো এক্ষনি যেন আমি তার দেয়া নম্বরে কথা বলি । এই সন্ধ্যাশেষের যৌবনে একটা নিষিদ্ধ স্পর্শের ছোঁয়ায় শিহরিত হচ্ছিলাম ।

একটা তীব্র নেশার ঘোরলাগা দিন যেন গেল আমার । কাম, নাচায়নি এমন মানুষ কোথাও থুঁজে পাওয়া যাবেনা । বাসের সামনের সীটগুলোতে শীলার বয়েসী কিম্বা আরো কম বয়সের মেয়েরা বসে আছে । আমার শীলার কথা মনে হলো । এদের কারো সাথেই ওর মিল নেই ।

শীলার মতো বুদ্ধিমতি মেয়েও সম্ভবতঃ এদের মধ্যে নেই । কী তার অনুভব, পান্ডিত্যের কী গভীরতা তার । এদের কারো সাথে মনে হয় মিলবেনা । আমি অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম একদিন – আচ্ছা , তুমি কে বলোতো ! তোমার এই সবে ত্রিশ পেরুনো বয়সে এতো কিছু তুমি জানলে কি করে একজন বঙ্গললনা হয়ে ? আর একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার সারাটি দিন কি করে কাটে । পেছন থেকে কে এক পুরুষকন্ঠ বললেন, এই যে জানালাটা বন্ধ করুন, দেখছেন না বৃষ্টির ছাট আসছে ।

রাগ হলেও রাগতে পারা গেলনা । এটা পাবলিক বাস । আমার একার ইচ্ছেটা এখানে অচল । আমিতো ভিজতে চাইছিলাম, একটু ভিজতে চাইছিলাম । লোকে পাগল বলে বলুক, জানালার বাইরে একটা হাত বের করে বৃষ্টির জলও ধরছিলাম ।

আনমনে অনুভব করছিলাম তার ছোঁয়া । জলের মতো পেলব, কোমল, স্বচ্ছ আর কি আছে? কার আছে তারই মতো বুকের ভেতরে একাধারে উষ্ণ ওম আর শীতলতা, তারই মতো কঠিন বরফ হৃদয় ! নেই । জলের মতো আর কেউ নেই । পেছনে ঘাড়টা ঘুরিয়ে যিনি জানালাটা বন্ধ করতে বলেছিলেন, তার দিকে তাকালাম । শীলার বয়েসী হবে আবার বেশীও হতে পারে ।

আবেগ নেই বোঝা গেল । জীবনে কোনদিন বৃষ্টির জলে ভেজেনি এমন একটা ভাব তার মুখে, আচরনে । আবেগশূন্য মানুষ দিয়ে পৃথিবীর কিচ্ছু হবেনা । নীল-সবুজ পৃথিবীটা একদিন এদেরই জন্যে হলদে বিবর্ণ হয়ে যাবে । আমি তাকে মনে মনে ক্ষমা করে দিলাম।

বললাম , স্যরি । শীলা ওর মতো নয় । শীলার প্রচন্ড আবেগ ছিলো । আমাকে একবার লিখেছিলো – “ সময় হলে পালিয়ে এসো ইচ্ছা ডানায় ভেসে / আমার সঙ্গে যাবে তুমি মোন খারাপের দেশে ? ” । আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, তক্ষুনি ডানায় ভেসে ভেসে ওর কাছে চলে যাই ।

হায়, আমি যদি পাখি হতে পারতাম ! কিন্তু আমি যে ওর ঠিকানা জানিনে । ও আমাকে ঠিকানা দেয়নি । ইলেকট্রনিক প্রেমে কেউ কাউকে সত্যিকার ঠিকানা দেয়না । গভীর গোপন নিষিদ্ধ প্রেমে এটুকু রহস্য না থাকলে বোধহয় জমেনা, আকর্ষন থাকেনা । তবে ইন্টারনেটে চ্যাট করতে করতে ওর একটা ছবি মেইলে পাঠিয়েছিলো প্রথমদিনেই ।

মিষ্টি, ভরাট একটি মুখ । চোখে তার অসীম মায়া । ভুমধ্যসাগরের মতো গভীর নীলরঙ ছিলো সেখানে । অঁরি মাতিস্‌ এর প্রিয় গাঢ়নীল এর ছোঁয়া । তার ছদ্মনামের সাথে বেশ মিল ।

রাঙাঠোটে একটুকরো দুষ্ট হাসি ধরা ছিলো সে ছবিতে । আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এ মেয়ের সাথে নিষিদ্ধ প্রেমের খেলাতেও আমি যে বড়ই বেমানান । তাকে দেখে হাযার হাযার টগ্বগে তরুন যে কোনও মূহুর্তে যুদ্ধে যেতে ও রাজী হয়ে যেতে পারতো । আমার যে যুদ্ধে যাবার বয়স নেই ! আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে ! “ কুকুরের গলায় মুক্তোর মালা ” ? নাহ্ , এ উপমাটা আমার এখানে দেয়া ঠিক হয়নি । সাধারন্যে খুব বেশী প্রচলিত ।

বহু ব্যবহারে মলিন, ত্যানা ত্যানা । শীলার মতো চৌকস একটি মেয়ে যাকে মালা দিয়েছে, তার জন্যে এ উপমাটা বেশ অভদ্র অভদ্র লাগছে । শীলা যদি এই লেখাটি কোনদিন পড়ে তবে দুঃখ পাবে উপমা ভান্ডারে আমার দারিদ্রতা দেখে । একটা ভালো উপমা আমি কোথায় পাবো ! আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে জানতে দেরী হয়নি । শীলা লিখেছিলো, তোমাকে দেখে আমার আর একজনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো ।

য়্যুনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে প্রেমে পড়েছিলাম তার । একতরফা প্রেম । আমি তাকে বলতে পারিনি কখনো । বোঝা গেল আমার ভেতরে শীলা তার প্রথম যৌবনের হারানো প্রেমকে খুঁজে পেতে চাইছে ! আমি এখন কি করবো ? এক গভীর দুখঃবোধে কাতর হবো ? লজ্জাবতী পাতার মতো মিইয়ে যাবো লজ্জায় ? পুরুষমানুষের জিন এর ভেতর বোধহয় হার না মানার সহজাত একটা কোড রয়েছে । ক্রোমোসোমাল ডিফেক্ট ! কারো কম কারো বেশী ।

আমি বলেছিলাম, তোমার ব্যথায় সমব্যথী হওয়া হয়তো চলে কিন্তু আমি তো তোমাকে তোমার হারানো দিনগুলি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবোনা । ও রেগে গিয়েছিলো খুব । যা গেছে তা যাক, বলেছিলো সে । বর্তমানের আমাকে আর তাকে নিয়েই ভাবতে বলেছিলো । আরো বলেছিলো, আমাকে নাকি সে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে, তাকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া যেখান থেকে আমার নাকি মুক্তি নেই আমৃত্যু।

তীব্র এক সুখের নদী আমার দু’কুল ভাসিয়ে আমার সমস্ত সংস্কারকে ডুবিয়ে একাকার করে দিয়েছিলো । বন্যার জল সরে গেলে শুনেছি, মাটিতে নাকি পলি জমে। ছোটবেলায় বইতেও পড়েছি। সেখানে তরতর করে আবার নাকি জন্ম হয় গাঢ় সবুজ দূর্বাঘাস । আমার অবহেলায় ফেলে রাখা এতোদিনকার চৌচির হয়ে থাকা মাটিতে পলি জমা শুরু হলো বুঝি।

সবুজ ঘাসেরা ডালপালা ছড়াতে থাকলো একে একে । আমি তাকে মুঠোফোনে বললাম, আমি তোমাকে খুউব ভালোবাসি শীলা । ষ্টপেজ এসে গেছে, আমাকে নামতে হবে । সামনেই মেয়েদের আলাদা সীট । এও এক ধরনের তামাশা, উওম্যান লিব এর যুগেও ।

নারীরা সমানাধিকার চাইবে, আবার পাশাপাশি তাদের জন্যে আলাদা সুযোগ সুবিধার দাবীও জানাবে । এটা যে পরস্পর বিরোধী, এ বোধটুকুও হয়তো তাদের নেই । এই ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে তারা নিজেরাই যে অজান্তে নিজেদের পুরুষের নীচে নামিয়ে আনছে, নিজেদের অপমানিত করছে এটা কি তারা বোঝে ? এখানে পুরুষ তার প্রতিযোগী নয়, অজান্তে নারী নিজেই নিজেদের প্রতিযোগী । এরা না বুঝুক, আমার ক্ষতি কিম্বা কোনও লাভ নেই । আমার এখন এদেরকে ঘৃনা করার দিন ।

এই একটা বাজে অভ্যেস হয়েছে আমার, সারাটা পথের অনেকটা সময় আমি এদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি । কিঁছু একটা খুঁজি হয়তো । শীলার যে ছবিটি আমার কাছে আছে সেই আদলের কাউকে কি আমি খুঁজছি মানুষের ভীড়ে ! একটা দুরাগত আশা, সুউচ্চ আকাশের অসীম থেকে ডানা ঝাপটে পাখীর মতো একটি ছবির মুখ নেমে আসবে একদিন আমারি চোখের অলিন্দে । দু’হাতে সে মুখখানি তুলে, চোখে চোখ রেখে বলবো, এতোদিন কোথায় ছিলে ! আমার বেলা শেষের কুড়িয়ে পাওয়া একটি নীল মুক্তো যেন । কোথায় লুকোবো তাকে, কোনখানে ।

লোকে বলে নীলা নাকি কারো সয় কারো সয়না । আমার সইবে তো । নামতে হলে মেয়েদের পাশ দিয়েই আমাকে যেতে হবে । যেতে যেতে আমি একবার ঘৃনার দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাতে চেষ্টা করলাম । এক একটি আপাত নিষ্পাপ মূখ ।

এইসব মুখের আড়ালে কিম্বা মনের ভেতরে কি নষ্ট চাঁদের মতো কলঙ্ক লুকিয়ে আছে ? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা । এক একজনের এক এক সাজ । মানুষের সাজগোছের বহর থাকে । যা থেকে তাকে চেনা যায় । বোঝা যায় তার রুচি ।

মুখে কি কিছু লেখা থাকে ? শীলা আমাকে “বুদ্ধু” বলতো । আমি কি সত্যিসত্যিই বুদ্ধু হয়ে গেছি ! আমি কেন বুঝে উঠতে পারছিনা ? ঘৃনা এলোনা আমার । একজন শীলার জন্যে আমি তাবৎ মেয়েদের কে ঘৃনা করতে পারিনা । কিন্তু আমি যে শিখতে চাইছি, কি করে ঘৃনা করতে হয় ! শীলা আমাকে লিখেছিলো, “ ক্যারী অ্যা হার্ট দ্যাট নেভার হেটস্, ক্যারী অ্যা স্মাইল দ্যাট নেভার ফেডস্ , ক্যারী অ্যা টাচ্ দ্যাট নেভার হার্টস্ ” । আমি কি একথা ভুলে যাবো ! এতো ভয়ঙ্কর সুন্দর কথাগুলো সে কেন লিখেছিলো যদি সে নিজেই তা ভুলে যায় ? এতো বড় মিথ্যে দিয়ে সে আমাকে আটকাতে গেল কেন ! ভোরের শিশির বিন্দু যেমন ঘাসের ডগায় রোদের কণক আভা ছড়িয়ে সুন্দর হয়ে ফোঁটে, আবার ঝরে যায় এ ও কি তাই ! ক্ষনেকের ! এই সব সুন্দর সুন্দর কথা কি ছেলে ভোলানো ফাঁদ! আমি সে ফাদেঁ কি ধরা পড়েছিলাম! নইলে আমি কেন তাকে উত্তরে লিখতে গেলাম, “যে হৃদয় আমি ধারন করে আছি তার তল তুমি খুঁজে পাবেনা, আমার মুখের হাসির ব্যপ্তি আকাশের মতো সীমাহীন, কোমল আমার স্পর্শের হাত উষ্ণতা ছড়ায় তাকেই যে অনুভব করার ক্ষমতা রাখে ” ।

এটা পেয়ে মুঠোফোনের বাটনে তার পদ্মকলি আঙ্গুলের ছোঁয়ায় যে লেখাগুলো ফুটে উঠেছিলো আমার ছোট্ট স্ক্রীনে, তা শুধু আমার প্রশংসা । আর আমার এই লেখা পড়ে সে যে মুগ্ধ, তা জানাতেও দেরী করেনি । লিখেছিলো, য়্যু নট অনলি টাচ্ড মাই হার্ট, য়্যু আর ইনসাইড ইট । সেদিন বিজলী চলে গেল । হঠাৎ হঠাৎ বিজলী চলে যাওয়া আজকাল একটা ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন ।

সরকারী ফ্যাশান । সারা বিশ্ব যেখানে “কর্পোরেট” কালচারে অভ্যস্ত সেখানে আমরা “করাপশান” কালচারে আকন্ঠ নিমজ্জিত । নইলে চল্লিশটি বছর পেছনে ফেলে এসেও বিদ্যুতের বেলায় আমরা দু’পা ও এগুতে পারলামনা কেন ? এ ফ্যাসানে অভ্যস্ত হ’য়ে গেছি । ভালো যে আমার এখানে জেনারেটর আছে । অনেক অফিসেই আছে।

সে জেনারেটর ও যেন আজ আমার সাথে শত্রুতা করবে বলে ঠিক করে রেখেছে । আমার পিওন এসে বলে গেল, ডিজেল নাকি নেই, ফুরিয়ে গেছে । আনতে গেছে কেউ একজন । শীলার সাথে এখন তাহলে যোগাযোগ বন্ধ থাকবে কতক্ষন । গত ক’দিনে যোগাযোগ ছিলোনা ।

শীলাই বলেছিলো, “আমার ননদকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে, যোগাযোগ করতে পারছিনে” । মেঘেমেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে থাকে বৃষ্টির প্রতীক্ষা । প্রতীক্ষিত বৃষ্টি না এলে কি হয় ? আমি চেয়ে আছি একফোঁটা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে । আকন্ঠ তেষ্টায় আমার বুকের জমিনে হাহাকার । রবীন্দ্রনাথের গান মনে এলো, “ চক্ষে আমার তৃষ্ণা ওগো, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে ….” ।

আমি তাকে লিখলাম, “ হোয়্যার আর য়্যু ?” ছোট্ট করে । বৃষ্টি এলো সময়ের অনেক পরে, শীলার এসএমএস হয়ে, “ রাতে কথা হবে ”। সে রাত আর আসেনি ! একদিন সকালে শীলা লিখলো, “ দিস্ মর্নিং গড ইরেজড্ অল মাই মেমোরী এন্ড আস্কড্, “ ডু য়্যৃ রিমেমবার এ্যানি ওয়ান নাও ?” আই টোল্ড হীম ইয়োর নেম । গড স্মাইলড এন্ড সেড, “সাম ভাইরাস কান্ট বী ডিলিটেড” । এতো সুন্দর করে বলতে পারা ভালোবাসার কথা সে শিখলো কোথায় ! কে তাকে শেখালে এসব ! এগুলোই কি ছিলো শীলাকে ভালোলাগার কারন ! একমাত্র কারন কি ? কে জানে ! আমার একটু আধটু লেখার বাতিক ছিলো একসময়, আছে হয়তো এখোনো ।

নইলে এ লেখা লিখতেই বা বসলাম কেন ? সে বীজ এতো বছরের ঘর-সংসার, চাল-ডাল-নুন এর হিসেব কষতে কষতে, অফিস-আদালত আর নাগরিক সুযোগ সুবিধার পেছনে ছুটতে ছুটতে বাসের হ্যান্ডেল ঝোলা হয়ে একবারেই যে মরে যায়নি, তাতেও যে এখনও কচিকচি পাতারা মাথা তুলতে পারে বুঝলাম শীলার কাছে এসে । সাহিত্যের বাতাস একবার যার গায়ে লেগেছে, লোকে বলে; তার ইহকাল-পরকাল গেছে । আমার ইহকাল তো গেছেই, শীলার প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে ভেসে গেছে এতোকালের আবাদি জমিনও । আমার অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যত, প্রতিদিন সকালে শীলার পাঠানো এসএমএস এর পাখনায় ভর করে কোথায় যে হারিয়ে গেল ! দেখলাম, একদিন শীলার কোনও সাড়া না পেলে আমার বুকের ভেতর কেবল একটা ধূ-ধূ মাঠ পরে থাকে। চৈত্রের দামাল বাতাসের ঘুর্নি বয়ে যায় সাই সাই করে ।

নিকোটিনে ঝাঝরা ফুসফুসে যেন বাতাসের টান ধরে। নিষিদ্ধ কিছুর গন্ধ পেলে ছেলেবেলায় রক্ত যেমন ছলকে ছলকে ওঠে সবার, আমার ও তেমন হতে শুরু করলো কি ! এ বয়সে এ কোন খেলায় জড়িযে গেলাম আমি ! ফ্রয়েড সাহেব তো তাহলে মিথ্যে বলেননি – মানুষের সব কাজের পেছনেই আছে, কাম ! আসলেই কি ! শীলার ছবিতে তার মুখের হাসি, মুঠোফোনে তার ভাঙা গলার স্বরে আমাকে শুধানো, “ লাঞ্চ করেছ ? বাসায় পৌঁছে ফোন করবে, ঠিকমতো পৌছেছ কিনা, চিন্তায় থাকবো ” এইসব ই কি আমাকে পাগল করার জন্যে! আমি বললাম – - “ পাগল হতে আমার বাকী কি থাকলো ?” - “ পাগল আমার ! তুমিই তো পাগল বানিয়েছ আমাকে আগে ” শীলার পরিষ্কার জবাব । “ এতো ভালো আমাকে বেসোনা……… ” । - এ কথা কেন বলেছিলো শীলা ! ( চলবে..... অনুগ্রহ করে ২ অধ্যায়ের জন্যে অপেক্ষা করুন )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।