নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।
শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)
(পূর্ব প্রকাশনার পর )
এক / (শেষ অংশ )
সেদিন বিজলী চলে গেল । হঠাৎ হঠাৎ বিজলী চলে যাওয়া আজকাল একটা ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন । সরকারী ফ্যাশান ।
সারা বিশ্ব যেখানে “কর্পোরেট” কালচারে অভ্যস্ত সেখানে আমরা “করাপশান” কালচারে আকন্ঠ নিমজ্জিত । নইলে চল্লিশটি বছর পেছনে ফেলে এসেও বিদ্যুতের বেলায় আমরা দু’পা ও এগুতে পারলামনা কেন ? এ ফ্যাসানে অভ্যস্ত হ’য়ে গেছি । ভালো যে আমার এখানে জেনারেটর আছে । অনেক অফিসেই আছে। সে জেনারেটর ও যেন আজ আমার সাথে শত্রুতা করবে বলে ঠিক করে রেখেছে ।
আমার পিওন এসে বলে গেল, ডিজেল নাকি নেই, ফুরিয়ে গেছে । আনতে গেছে কেউ একজন । শীলার সাথে এখন তাহলে যোগাযোগ বন্ধ থাকবে কতক্ষন । গত ক’দিনে যোগাযোগ ছিলোনা । শীলাই বলেছিলো, “আমার ননদকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে, যোগাযোগ করতে পারছিনে” ।
মেঘেমেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে থাকে বৃষ্টির প্রতীক্ষা । প্রতীক্ষিত বৃষ্টি না এলে কি হয় ? আমি চেয়ে আছি একফোঁটা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে । আকন্ঠ তেষ্টায় আমার বুকের জমিনে হাহাকার । রবীন্দ্রনাথের গান মনে এলো, “ চক্ষে আমার তৃষ্ণা ওগো, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে ….” । আমি তাকে লিখলাম, “ হোয়্যার আর য়্যু ?” ছোট্ট করে ।
বৃষ্টি এলো সময়ের অনেক পরে, শীলার এসএমএস হয়ে, “ রাতে কথা হবে ”।
সে রাত আর আসেনি !
একদিন সকালে শীলা লিখলো, “ দিস্ মর্নিং গড ইরেজড্ অল মাই মেমোরী এন্ড আস্কড্, “ ডু য়্যৃ রিমেমবার এ্যানি ওয়ান নাও ?” আই টোল্ড হীম ইয়োর নেম । গড স্মাইলড এন্ড সেড, “সাম ভাইরাস কান্ট বী ডিলিটেড” । এতো সুন্দর করে বলতে পারা ভালোবাসার কথা সে শিখলো কোথায় ! কে তাকে শেখালে এসব ! এগুলোই কি ছিলো শীলাকে ভালোলাগার কারন ! একমাত্র কারন কি ? কে জানে !
আমার একটু আধটু লেখার বাতিক ছিলো একসময়, আছে হয়তো এখোনো । নইলে এ লেখা লিখতেই বা বসলাম কেন ? সে বীজ এতো বছরের ঘর-সংসার, চাল-ডাল-নুন এর হিসেব কষতে কষতে, অফিস-আদালত আর নাগরিক সুযোগ সুবিধার পেছনে ছুটতে ছুটতে বাসের হ্যান্ডেল ঝোলা হয়ে একবারেই যে মরে যায়নি, তাতেও যে এখনও কচিকচি পাতারা মাথা তুলতে পারে বুঝলাম শীলার কাছে এসে ।
সাহিত্যের বাতাস একবার যার গায়ে লেগেছে, লোকে বলে; তার ইহকাল-পরকাল গেছে । আমার ইহকাল তো গেছেই, শীলার প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে ভেসে গেছে এতোকালের আবাদি জমিনও । আমার অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যত, প্রতিদিন সকালে শীলার পাঠানো এসএমএস এর পাখনায় ভর করে কোথায় যে হারিয়ে গেল !
দেখলাম, একদিন শীলার কোনও সাড়া না পেলে আমার বুকের ভেতর কেবল একটা ধূ-ধূ মাঠ পরে থাকে। চৈত্রের দামাল বাতাসের ঘুর্নি বয়ে যায় সাই সাই করে । নিকোটিনে ঝাঝরা ফুসফুসে যেন বাতাসের টান ধরে।
নিষিদ্ধ কিছুর গন্ধ পেলে ছেলেবেলায় রক্ত যেমন ছলকে ছলকে ওঠে সবার, আমার ও তেমন হতে শুরু করলো কি ! এ বয়সে এ কোন খেলায় জড়িযে গেলাম আমি ! ফ্রয়েড সাহেব তো তাহলে মিথ্যে বলেননি – মানুষের সব কাজের পেছনেই আছে, কাম ! আসলেই কি !
শীলার ছবিতে তার মুখের হাসি, মুঠোফোনে তার ভাঙা গলার স্বরে আমাকে শুধানো, “ লাঞ্চ করেছ ? বাসায় পৌঁছে ফোন করবে, ঠিকমতো পৌছেছ কিনা, চিন্তায় থাকবো ” এইসব ই কি আমাকে পাগল করার জন্যে! আমি বললাম –
- “ পাগল হতে আমার বাকী কি থাকলো ?”
- “ পাগল আমার ! তুমিই তো পাগল বানিয়েছ আমাকে আগে ” শীলার পরিষ্কার জবাব । “ এতো ভালো আমাকে বেসোনা……… ” ।
-
এ কথা কেন বলেছিলো শীলা !
( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন তিন/চার দিন )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।