আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা) আহমেদ জী এস । । এক / (দ্বিতীয় অংশ ) (পূর্ব প্রকাশনার পর ) বাসের সামনের সীটগুলোতে শীলার বয়েসী কিম্বা আরো কম বয়সের মেয়েরা বসে আছে ।

আমার শীলার কথা মনে হলো । এদের কারো সাথেই ওর মিল নেই । শীলার মতো বুদ্ধিমতি মেয়েও সম্ভবতঃ এদের মধ্যে নেই । কী তার অনুভব, পান্ডিত্যের কী গভীরতা তার । এদের কারো সাথে মনে হয় মিলবেনা ।

আমি অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম একদিন – আচ্ছা , তুমি কে বলোতো ! তোমার এই ত্রিশ না পেরুনো বয়সে এতো কিছু তুমি জানলে কি করে একজন বঙ্গললনা হয়ে ? আর একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার সারাটি দিন কি করে কাটে । পেছন থেকে কে এক পুরুষকন্ঠ বললেন, এই যে জানালাটা বন্ধ করুন, দেখছেন না বৃষ্টির ছাট আসছে । রাগ হলেও রাগতে পারা গেলনা । এটা পাবলিক বাস । আমার একার ইচ্ছেটা এখানে অচল ।

আমিতো ভিজতে চাইছিলাম, একটু ভিজতে চাইছিলাম । লোকে পাগল বলে বলুক, জানালার বাইরে একটা হাত বের করে বৃষ্টির জলও ধরছিলাম । আনমনে অনুভব করছিলাম তার ছোঁয়া । জলের মতো পেলব, কোমল, স্বচ্ছ আর কি আছে? কার আছে তারই মতো বুকের ভেতরে একাধারে উষ্ণ ওম আর শীতলতা, তারই মতো কঠিন বরফ হৃদয় ! নেই । জলের মতো আর কেউ নেই ।

পেছনে ঘাড়টা ঘুরিয়ে যিনি জানালাটা বন্ধ করতে বলেছিলেন, তার দিকে তাকালাম । শীলার বয়েসী হবে আবার বেশীও হতে পারে । আবেগ নেই বোঝা গেল । জীবনে কোনদিন বৃষ্টির জলে ভেজেনি এমন একটা ভাব তার মুখে, আচরনে । আবেগশূন্য মানুষ দিয়ে পৃথিবীর কিচ্ছু হবেনা ।

নীল-সবুজ পৃথিবীটা একদিন এদেরই জন্যে হলদে বিবর্ণ হয়ে যাবে । আমি তাকে মনে মনে ক্ষমা করে দিলাম। বললাম , স্যরি । শীলা ওর মতো নয় । শীলার প্রচন্ড আবেগ ছিলো ।

আমাকে একবার লিখেছিলো – “ সময় হলে পালিয়ে এসো ইচ্ছা ডানায় ভেসে / আমার সঙ্গে যাবে তুমি মোন খারাপের দেশে ? ” । আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, তক্ষুনি ডানায় ভেসে ভেসে ওর কাছে চলে যাই । হায়, আমি যদি পাখি হতে পারতাম ! কিন্তু আমি যে ওর ঠিকানা জানিনে । ও আমাকে ঠিকানা দেয়নি । ইলেকট্রনিক প্রেমে কেউ কাউকে সত্যিকার ঠিকানা দেয়না ।

গভীর গোপন নিষিদ্ধ প্রেমে এটুকু রহস্য না থাকলে বোধহয় জমেনা, আকর্ষন থাকেনা । তবে ইন্টারনেটে চ্যাট করতে করতে ওর একটা ছবি মেইলে পাঠিয়েছিলো প্রথমদিনেই । মিষ্টি, ভরাট একটি মুখ । চোখে তার অসীম মায়া । ভুমধ্যসাগরের মতো গভীর নীলরঙ ছিলো সেখানে ।

অঁরি মাতিস্‌ এর প্রিয় গাঢ়নীল এর ছোঁয়া । তার ছদ্মনামের সাথে বেশ মিল । রাঙাঠোটে একটুকরো দুষ্ট হাসি ধরা ছিলো সে ছবিতে । আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এ মেয়ের সাথে নিষিদ্ধ প্রেমের খেলাতেও আমি যে বড়ই বেমানান । তাকে দেখে হাযার হাযার টগ্বগে তরুন যে কোনও মূহুর্তে যুদ্ধে যেতে ও রাজী হয়ে যেতে পারতো ।

আমার যে যুদ্ধে যাবার বয়স নেই ! আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে ! “ কুকুরের গলায় মুক্তোর মালা ” ? নাহ্ , এ উপমাটা আমার এখানে দেয়া ঠিক হয়নি । সাধারন্যে খুব বেশী প্রচলিত । বহু ব্যবহারে মলিন, ত্যানা ত্যানা । শীলার মতো চৌকস একটি মেয়ে যাকে মালা দিয়েছে, তার জন্যে এ উপমাটা বেশ অভদ্র অভদ্র লাগছে । শীলা যদি এই লেখাটি কোনদিন পড়ে তবে দুঃখ পাবে উপমা ভান্ডারে আমার দারিদ্রতা দেখে ।

একটা ভালো উপমা আমি কোথায় পাবো ! আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে জানতে দেরী হয়নি । শীলা লিখেছিলো, তোমাকে দেখে আমার আর একজনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো । য়্যুনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে প্রেমে পড়েছিলাম তার । একতরফা প্রেম । আমি তাকে বলতে পারিনি কখনো ।

বোঝা গেল আমার ভেতরে শীলা তার প্রথম যৌবনের হারানো প্রেমকে খুঁজে পেতে চাইছে ! আমি এখন কি করবো ? এক গভীর দুখঃবোধে কাতর হবো ? লজ্জাবতী পাতার মতো মিইয়ে যাবো লজ্জায় ? পুরুষমানুষের জিন এর ভেতর বোধহয় হার না মানার সহজাত একটা কোড রয়েছে । ক্রোমোসোমাল ডিফেক্ট ! কারো কম কারো বেশী । আমি বলেছিলাম, তোমার ব্যথায় সমব্যথী হওয়া হয়তো চলে কিন্তু আমি তো তোমাকে তোমার হারানো দিনগুলি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবোনা । ও রেগে গিয়েছিলো খুব । যা গেছে তা যাক, বলেছিলো সে ।

বর্তমানের আমাকে আর তাকে নিয়েই ভাবতে বলেছিলো । আরো বলেছিলো, আমাকে নাকি সে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে, তাকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া যেখান থেকে আমার নাকি মুক্তি নেই আমৃত্যু। তীব্র এক সুখের নদী আমার দু’কুল ভাসিয়ে আমার সমস্ত সংস্কারকে ডুবিয়ে একাকার করে দিয়েছিলো । বন্যার জল সরে গেলে শুনেছি, মাটিতে নাকি পলি জমে। ছোটবেলায় বইতেও পড়েছি।

সেখানে তরতর করে আবার নাকি জন্ম হয় গাঢ় সবুজ দূর্বাঘাস । আমার অবহেলায় ফেলে রাখা এতোদিনকার চৌচির হয়ে থাকা মাটিতে পলি জমা শুরু হলো বুঝি। সবুজ ঘাসেরা ডালপালা ছড়াতে থাকলো একে একে । আমি তাকে মুঠোফোনে বললাম, আমি তোমাকে খুউব ভালোবাসি শীলা । ( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন চার/পাঁচ দিন ) এক / (প্রথম অংশ ) Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।