নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।
শুদ্ধতম পরকীয়া
আহমেদ জী এস
[এই সামুতে গল্প কবিতার বেশ চল । তাই রি-পোষ্ট করার দুঃসাহস করে ফেললুম ]
এক / (প্রথম অংশ )
“ …. আমারে যে জাগতে হবে
কি জানি সে আসবে কবে
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে । ”
সেখানে না ছিলো আকাশ, না মাটি ।
শুধু বৃষ্টি ছিলো । সে আমাকে ধূঁয়ে দিচ্ছিলো । ফুঁড়ছিলো তীরের মতো । আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো । আমার সারাটা জীবন জুড়ে যেন আমি শুধু ভিজে যাচ্ছিলাম ।
এবং তখনি ধীরে ধীরে শিখছিলাম কি করে ঘৃনা করতে হয় ।
ঘৃনা শব্দটাকে আমার বড় ভয়, বড় অপরিচিত । অথচ তাকে নিয়েই আমাকে এখন চলতে হবে, ফিরতে হবে । আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে যে সে, সিন্দবাদের দৈত্যের মতো ঠিক ঘাড়টাতে চেপে বসে আছে । আমি কি সেখান থেকে আবারো পুরোনো ভালোবাসার ঘরে ফিরে যেতে পারবো ! স্বাভাবিক কোথাও ! যেখানে আমি ছিলাম এতোদিন, নিজের মনে নিজেই ?
বাসের জানালার ধারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে অন্যমনষ্ক ভাবেই আমার মনে হচ্ছিলো, এধরনের গাল্পিক চিন্তাভাবনা আমাকে মানাচ্ছে কিনা।
আমার যা বয়স তাতে সেই বয়সের ঘরে রোমান্টিসিজ্ম এর জন্যে কোনও জায়গা ফাঁকা আছে কিনা ।
বিচিত্র মানুষের মন, নৌকার মতো , বয়েই চলে । কোনও নৌকাই একই ঘাটে নোঙ্গর ফেলে চিরদিন বসে থাকেনা । না নদীতে, না জীবনে ।
শীলা তো আমাকে একটা সুন্দর শায়র পাঠিয়েছিলো এসএমএস করে ।
লিখেছিলো, “ তোর্না হোতা তো, রিস্তে হম্ না বনাতে / ভর্সা না হোতা তো, আপ্নে দিল কা হিস্সা না বনাতে। ” শীলা বোধহয় এখন তা ভুলে গেছে যে, এরকম একটি আবেগময় এসএমএস পাঠিয়ে সে তার ঐ মূহুর্তের মনটাকে আমার হাতে কি নির্বিধায় তুলে দিয়েছিলো । সে কি তখন জানতো, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটিই সে করে ফেলেছে ! হয়তো জানবে ও না কোনদিন । আরো অনেক অনেক সুন্দর শায়র সে আমাকে পাঠিয়েছিলো ।
আমি তাকে আমার বয়সের কথা তুলে মুঠোফোনে বলেছিলাম, এভাবে আবেগে ভেসে যেওনা ।
সে হয়তো ভাসতেই চাইছিলো । আমার বয়সের তোয়াক্কা করেনি । কে জানে কেন !
বলেছিলো, “মানুষ ভালোবাসে বয়স দেখে নয় । বারবার আমাকে বয়সের কথা বলবেনা ” ।
সে কি তার রাগ ! আমি মেইলে লিখেছিলাম, “ তোমার মতোন এই এতোটুকু এক মেয়ে এতো শক্তি কোথায় পেলে ?”
উত্তরে লিখেছিলো, “ সে আমার প্রেম ” ।
হ্যা, সেই প্রেম । যে প্রেমে তাজমহলের বীজ লুকানো ছিলো । যে প্রেমে ধংশ হয়েছিলো সুন্দরী ট্রয়নগরী । হ্যা, এই সেই প্রেম, যে প্রেমে পেত্রার্ক তার অদেখা লরাকে কালজয়ী করে গেছে ইতিহাসের পাতায় ।
শীলাও আমার অদেখা ।
আমি শীলাকে কখনো দেখিনি । এ জীবনে তার দেখা পাবো, এমনটাও মনে হয়না ।
আজকের ইলেক্ট্রনিক জমানায় এই এক সুবিধে, হাতের কাছেই মোবাইল, ডেস্কটপ্-ল্যাপটপ্ আছে, যতো খুশি কথা বলো । এসএমএস করো, অনলাইনে মেইল করে তুলে ধরো নিজেকে । সত্য-মিথ্যে বলে যাও, জানার উপায় নেই ।
এ যেন এক আলাদা জগৎ । বসন্ত বাতাসের মতো । গিরগিটির মতো রঙ বদলানো শুধু , ক্যামেলিয়ন । আনন্দ যতো তারো চেয়ে বেশী ব্যথা, হৃদয় ভাঙ্গার গল্প । এ আমার অনুমান ।
কোনও ষ্ট্যাটিষ্টিকস্ নেই ।
ইন্টারনেটের এক সাইটে আমাকে খুঁজে বের করেছিলো শীলা । বন্ধুত্বের জন্যে আমার সাইটে ক্লিক করেছিলো তিন তিনবার । আমার চোখ এড়িয়ে গেছিলো তা । আসলে এড়িয়ে গেছিলো কি ! কিন্তু প্রেমের দেবী ভেনাস যদি কারো দিকে একবার তার তীরটি ছোঁড়েন, তার যে ধরা না পরে উপায় নেই ।
তাকে যে রক্তাক্ত হতেই হবে ! আমার ভাগ্যদেবতা সেদিন কি হেসেছিলেন ভেনাসের এই পাগলামী কিম্বা তার সেন্স অব প্রোপরশান এর অভাব দেখে ?
মানুষ একটা অদ্ভুত জীব । কতো রঙের মানুষই তো দেখলাম জীবনে । জীবনের ঘাটে ঘাটে হরেক মুখ, হরেক কিসিম । যাকে মনে হয়েছিলো নেহাত গোবেচারা, নিতান্তই হদ্দ, সে ই হয়তো দেখা গেল এক তুখোর পান্ডিত্যের ভারে নুয়ে আছে । আবার যাকে মনে হয় তুখোর কিছু, ওজনদার, দেখা গেল তার ভেতরটা নর্দমায় ভরা – আবর্জনাময় পানা পুকুর ।
ফাঁকা, ভেতরটা শুধু ফাঁকা । হাযারো কিসিমের মুখের ভেতরে নিজের মুখখানিই বা আলাদা করি কি করে ! কি এক অদৃষ্টের ইঙ্গিতে ক্লিক করে বললাম, হ্যা, ওকে, বন্ধুত্ব হ’তে পারে । শীলা সেদিন ই আমাকে তার মেইল এ্যাড্রেস দিয়েছিলো । দিয়েছিলো তার মুঠোফোনের নম্বর । জোর তাগিদ ছিলো এক্ষনি যেন আমি তার দেয়া নম্বরে কথা বলি ।
এই সন্ধ্যাশেষের যৌবনে একটা নিষিদ্ধ স্পর্শের ছোঁয়ায় শিহরিত হচ্ছিলাম । একটা তীব্র নেশার ঘোরলাগা দিন যেন গেল আমার । কাম, নাচায়নি এমন মানুষ কোথাও থুঁজে পাওয়া যাবেনা ।
( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন দু'তিন দিন )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।