নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।
(পূর্ব প্রকাশনার পর- ২)
দুই / (সম্পুর্ন একত্রে )
“ না পিনা হারাম হ্যায়, না পিলানা হারাম
পি কে হোস্ মে আনা হারাম হ্যায় । ”
বেশ কাটছিলো দিনগুলি । এক একজনকে এক এক রকমের খেলায় মজিয়ে রেখেছিলাম ।
খেলছিলাম এক এক রকমের খেলা । নেশার ঘোর যে সর্বনাশা । মাঝখানে ঐ ব্যাপারটা না ঘটলে একটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যেত । কে বুঝেছিলো তখন ! এভাবে ফেঁসে যাবো বুঝতে পারিনি । কেন যে এমন একটা জঘণ্য মিথ্যে দিয়ে শুরু করলাম ব্যাপারটা ! নিজের সত্যিকারের জীবনটাকে ঐ একজনের কাছে মিথ্যে বানিয়ে দিলাম ।
এটা কি আমার একার দোষ, দোষ তো নভেরা’র ও । ও তখন এই নতুন খেলায় আমাকে ঠেলছিলো বলেই না ! এতো লজ্জা আমি এখোন কোথায় রাখবো । এভাবে হেরে গেলাম, খুব বিশ্রী ভাবে ! পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষের কাছে হলেও খুব নোংরা হয়ে গেলাম যে । যাকে ভালোবাসিনি, শুধু অভিনয় করে গেছি, তার জন্যে আমার এতো ভাবনা কিসের ! এতো কষ্ট কেন ! একটা নিষিদ্ধ নেশার ঘোর থেকে কেন যে বেড়ুতে ইচ্ছে করছেনা !
নিজেকে ধরা না দিয়েও বেশ তো চলছিলো প্রেম প্রেম খেলা । ক’জনার সাথে যে এরকম খেলা খেলছিলাম, নিজেরই মনে নেই ।
ইন্টারনেটে এই এক সুবিধে । হাযারো সাইট রয়েছে বন্ধুত্ব পাতানোর । নিজের একটা প্রোফাইল খোলো, চোখে বা মনে ধাঁধা লাগে এমন একখানা রহস্যজনক ছবি দাও, দেখবে পতঙ্গের মতো প্রজাপতি হাজির । তারপর বাঁধভাঙ্গা প্রেমের জোয়ার । যতোদিন ভালো লাগে চালিয়ে যাও ।
শ্লীল-অশ্লীল যা কিছু আছে মেইলে বা ছবিতে তা পাঠাতে থাকো । দেখবে, শরীর-মন কেমন কেমন যেন শিরশির করে উঠছে । এ এক ধরনের নিষিদ্ধ খেলা, নেশার মতো । এরপরে একদিন না বলে-কয়ে ডুব দাও । দু’পক্ষই জানে, এরকম খেলা হঠাৎ করেই জ্বলে উঠে আবার হঠাৎ করেই নিভে যায় ।
দমকা বাতাসের মতো । একটুখানি ঘূর্ণি তোলা, উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সবকিছু তারপরেই সুনসান চারদিক । নো হার্ড ফিলিংস্ ।
নভেরা’র পাল্লায় না পড়লে এ জগতটা আমার জানা হতোনা । কেমন যেন একটা নেশায় পেয়ে গেছিলো ।
আসলে পুরুষগুলো কি বোকা ! নাকি বোকা বোকা ভান করে থাকে ? সট্কেও পরে কেউ কেউ মিথ্যের সত্যটা বুঝতে পেরে । আমিও তো কতজনকে সিক্নীর মতো ঝেড়ে ফেলেছি মজাটা লুটে নিয়ে । কিন্তু এ ভাবে তো কেউ বলেনি আমাকে কোনদিন । আমার নির্জলা মিথ্যেটা বুঝতে পেরেও সট্কে পরেনি বরং আরো বেশী কাছে এসেছে । আরো গভীর করে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখেছে নিজের কাছে ।
সবার সাথে তো শুরু থেকেই বানানো গপ্পো বলে গেছি । এক একজনের কাছে একেক রকম । এই ফাঁদটা পাততে গিয়েই যতো বিপত্তি । কেন যে অজস্র মিথ্যের মধ্যে আসল নিজেকে কিছুটা মিশেল দিয়ে তাকে কাছে টানলাম ! আসলে সবটাই কি নভেরা’র দোষ, আমার নিজের কি কোনই ভুমিকা ছিলোনা সেখানে ! একটু যেন মন কেমন কেমন করা !
সেদিন গুমোট গরম ছিলো । ইলেক্ট্রিসিটি নেই বলে ঘামছিলাম খুব ।
আমার আবার ঐ একটি দোষ, গরম সইতে পারিনা একদম । নাক ঘেমে যায় সবার আগে । নাক ঘামলে নাকি ভালোবাসা পাওয়া যায়, সবাই খুব ভালোবাসে । তাই কি ! এইমাত্রই তো একজনের সাথে এই ভালোবাসা-ভালোবাসা খেলাটাই খেলছিলাম, তাকে কি ভালোবাসা বলে ? টোয়েন্টি - টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো খন্ডকালীন খেলা । অথচ দারুন উত্তেজনাময় ।
দু’জনেই বেশ জানি এটা ফাঁকি । তারপরেও খেলতে হয় । নেশার লাটিম ঘুরতেই থাকে যে । ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল , নইলে ব্যাটাকে আর একটু নাচাতে ইচ্ছে ছিলো । আর তক্ষুনি নভেরা এসে হাজির ।
নভেরা এলে সময় যে কোথা দিয়ে কেটে যায়, টের পাইনা কেউ । ঘর সংসারের কাজ বাক্সবন্দী পড়ে থাকে । কি উচ্ছল, প্রানবন্ত মেয়ে । আমার মাঝে মাঝে ওর মতো হ’তে ইচ্ছে করে । সেদিন নভেরাই বলেছিলো, “শীলা, এতোদিন তো কেবল লালটু আলু আলু মার্কা অল্প বয়েসী ছেলেদের সাথে প্রেম প্রেম খেলেছিস ।
এবার একজন বেশী বয়সের পুরুষ ধর । দেখবি আলাদা এক মজা । বয়স্ক পুরুষের প্রেম যখন উৎলে ওঠে না, তখন দেখবি তোর দু’কুল ভেসে গেছে। এবার দেখি একা একা তুই কদ্দুর যেতে পারিস সাঁতরে । ”
আমি যে কোথাও যেতে পারিনি ।
আমি যে ডুবতে বসেছি । এতো লজ্জার পরে তো আমার ডুবে মরার ই কথা ছিলো ।
কেন যে আমি তাকে লিখতে গেলাম, “য়্যু রিমাইন্ড মি অব সামওয়ান ভেরী ক্লোওজ ট্যু মাই হার্ট । আই লভ্ড হিম ইন মাই য়্যুনিভার্সিটি লাইফ বাট দ্যাট ওয়্যজ ওয়ান সাইডেড ওনলি, ফ্রম মাই সাইড । ” তিন তিন বার আমি তাকে তার প্রোফাইলে নক্ করেছি ।
প্রথমবারে সাড়া না পেয়ে জেদ চেপে গিয়েছিলো । শেষে যখন তার সাড়া মিললো, বুঝলাম জিতে গেছি । সে আমার দেয়া এ্যাড্রেসে লিখেছিলো, “হ্যা, ওকে । বন্ধুত্ব হ’তে পারে”।
আমি তড়িঘড়ি মেইলে তাকে অন্য একটি ম্যাসেঞ্জারের এ্যাড্রেস দিয়ে বললাম, এক্ষুনি চ্যাটে কথা বলো ।
আমার সেলফোনের নম্বর দিয়েছিলাম, দিয়েছিলাম একটা ছবি । তার বয়স তো আমি জানি ই, বিস্তর ফারাক । তোয়াক্কা করলাম না । প্রথমেই তুমি সম্বোধন । একটু ভয় ছিলো মনে, যদি ধরা পড়ে যাই ।
আমার ভাঙা স্বর সেদিন কি আরো ভেঙে গেছিলো ! ওপাশ থেকে এক মায়া ঝরা কন্ঠের আকুলতা যেন আমার এই অপূর্ণতাকে ঢেকে দিলো পূর্ণতার সুতো বুনে বুনে ।
সে একটি রাত গেছে আমার । কী মধুর, কী আশ্চর্য্য একটি রাত । সে রাত যেন কোজাগরী পূর্ণিমার রাত । বসন্ত বাতাসের সাই সাই রাত।
এরকমের রাত আমার আর কাটেনি কারো সাথে । মরি টেনে নেয়া বাঘিনির মতো আমি তাকে টেনে নিয়েছিলাম, আগলে রেখেছিলাম । বুঝলাম , আমি নিজেই নিজের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি । কিন্তু ততোক্ষনে ঢিল ছোঁড়া হয়ে গেছে । আমার পাঠানো লম্বা মেসেজটিতে যে কাহিনী আমি তাকে লিখেছি, তা যে তাকে কোনও ভাবে রেখাপাত করেছে কি করেনি, প্রথম রাতের আলাপে তার কনাটুকু রেশ ও আমাকে সে পেতে দেয়নি ।
তার গভীর সঘন, সহজিয়া বাক্যালাপ তাকে অনন্য করে তুলছিলো । সোজা-সাপ্টা, সাহসী, সংকোচহীন । একদম আলাদা । এরকম মানুষের দেখা আমি পাইনি ।
ন্ .. না তার সাথে আমার দেখা হয়নি ! এরকম একজন মানুষের সাথে আগে কখনও যোগাযোগ হয়নি, এটাই বোঝাতে চাইছি ।
পরের দিন খুব সকালেই তাকে এসএমএস করে লিখলাম, “ এ কাপ অব হট্ কিসেস……” ।
আমিও কি আবেগে ভেসে যাচ্ছিলাম !
নিজেকে সমর্পন করার এ কি তীব্র আকুতি আমার মধ্যে ! যে আমি দিনের পর দিন প্রেম প্রেম খেলা খেলে গেছি অনেকের সাথে অবলীলায়, সে আমার কি হ’লো আজ ! মিথ্যে দিয়ে যার শুরু হয়েছিলো, আমি তাকে সত্যের কাছাকাছি টেনে আনলাম কেন ! আমার কি মতিভ্রম হয়েছে ? এতোদিন তো কেবল নেশাই ধরিয়ে দিয়েছি অনেকের , এবার যে আমি নিজেই নেশার ঘোরে মাতাল । দিকশুন্যহীন এ কোন অথৈ পাথারে এসে পড়লাম আমি ! আমার হোশ ফিরবে তো !
অনলাইনে তার প্রোফাইল পড়ে কারো বন্ধুত্ব পাতানোর কথা নয়, শুধু তার বয়সের কারনে । বিশেষ করে ইয়াং মেয়েদের তার প্রতি আকর্ষনের কোনও কারন নেই । বিদেশী মেয়েদের কথা আলাদা ।
ওরা নাকি বয়েসের তোয়াক্কা থোরাই করে । আমাদের বাঙালী মেয়েদের এদিকে সূচীবাই আছে । যদিও প্রোফাইলে দেয়া নিজের ছবিতে অনেক তরুন দেখাচ্ছিলো তাকে । বেশ স্লীম লাগছিলো দেখতে, তরুন কেউ । বয়েস বোঝা যাচ্ছিলো না ।
অথচ বয়সের ঘরে অন্য অঙ্ক লেখা । ইচ্ছাকৃত ভাবেই বয়স ভাড়িয়েছে ? চেহারাও আহামরি কিছু নয়, প্রথম দর্শনেই ভালোলাগার হয়তো কোনও কারন নেই । আমার কেবল তার প্রোফাইলে লেখা একমাত্র লাইনটা খুব ভালো লেগেছিলো । সচারচর যা কেউ লেখেনা । নিজেকে সবাই খুব উঁচুতে তুলে ধরতে, নিজের গুনগান গাইতেই ব্যস্ত সব সময় ।
এক একজন যেন স্বয়ং ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির, চরিত্রে রামচন্দ্র । এখানে তার ছিটেফোঁটাও নেই।
কেবল একটি লাইনে নিজেকে সে তুলে ধরেছে এভাবে, “ আমি যা, আমি তাই ” ।
ক’জনার বুকের সাহস আছে এভাবে লেখার । আমার ভালো লেগেছিলো, আর তাকে একটু বাজিয়ে দেখতে দারুন ইচ্ছে করছিলো ।
তিন তিনবার তাকে আমি আমন্ত্রন পাঠিয়েছি সাড়া মেলেনি ।
রাগ করে কিনা ! কোনও তরুনীমেয়ের আহ্বানে সাড়া দিতে কোনও পুরুষের এতো সময় লাগার কথা নয় । আমাকে বাজিয়ে দেখতে চাইছিলো কি ! বরং আমিই তো বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম তাকে ।
সেদিন ও ইলেক্ট্রিসিটি ছিলো না । ইলেক্ট্রিসিটি কখন আসবে বা যাবে এগুলো এখন সম্ভবত সবার জানা ।
তাই আগেভাগেই হাতের কাজগুলো গুছিয়ে রেখেছি যাতে রাতের বেলা হাতে কোনও কাজ জমে না থাকে । ইন্টারনেটে যেন বসা যায় । আমার যে না বসলেই নয় । কেউ কিছু মনে করবে ? আমার মতো একটি মেয়ে রাতের বেলা ভদ্রস্থ সময়ের বাইরেও ইন্টারনেটে ঘন্টা কাবার করে দেবে, এতে তো মনে করার অনেক কিছুই থাকে । আমার এখানে মনে করার কেউ নেই ।
থাকলেও কেয়ার করি না । তারা জানে আমি কি চীজ ।
জানালার পর্দ্দা খানিকটা সরিয়ে সামনের খোলা জায়গাটাতে চোখ রেখে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েছিলাম । অন্ধকার তখোন সবে ঘষামাজা করে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছিলো ধীরেধীরে আরো কৃষ্ণকলি হয়ে উঠবে বলে । আমার মতোই নিজেকে মেলে ধরার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছিলো বোধহয় তারও মনের গভীরে কোথাও ।
প্রতিদিনই এমোন করে নিজেকে মেলে ধরে সাঁঝের অন্ধকার ।
মনটা ভালো লাগছিলো না । ক্লান্তি যেন একটু একটু করে শরীর বেয়ে উঠছিলো । পরিশ্রমের ক্লান্তি, নাকি মনের গ্লানি থেকে উঠে আসা অবসাদ ঘিরে ধরতে চাইছে ! যে খেলাটার নেশা শুরু থেকে এ পর্য্যন্ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে রক্তের ভেতর আবেশে নীল হয়ে উঠছিলো তাকে যে এখন আলবিদা বলার সময় হয়ে এলো । একটা কষ্ট ।
দুঃখ রোমন্থনেরও একটা নিকষ ভালোলাগা আছে । যন্ত্রনা যখন তীব্র যন্ত্রনাময় হতে থাকে তখোন যেন শরীরে কেমন নেশার ঝিম আসতে থাকে । মন তখোনই যেন বলে - আরো আরো । এ যেন হাতের শিরায় ড্রাগ পুশ্ করার মতো । শুধু ঝিম মেরে থাকো ।
কষ্টের জঠরে জন্ম নেয়া একটা আনন্দ যেন শিরশির করে বইতে থাকে সারা ধমণীতে । একটা আনন্দবোধ হতে থাকে ভেতরে ভেতরে । এ আনন্দ বোধহয় সুখভোগের আনন্দের চেয়েও অনেক তেজী । অন্য রকম চরিত্র এর । ঠিক বোঝানো যায়না তার মাত্রা ।
যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে গলছে এক একটা ধারা ।
আবার নতুন করে শেষের অভিনয়টুকু করতেও ইচ্ছে করছেনা । কদিন থেকেই আস্তে আস্তে জাল বুনে যাচ্ছিলাম বিচ্ছেদ এর । তাকে লিখেছিলাম কথা বলা যাবেনা, ব্যস্ত থাকতে হবে ক’দিন । সে লেখার পর থেকেই মাঝে মাঝে মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে ।
এভাবে না হয় ক’দিন চালিয়ে নেয়া যাবে, তারপরে ! শেষের ঘাতক তীরটি কি ধরনের বিষ মাখানো হবে ! কোথায় বিঁধবে তা !
ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসা নভেরার গলা শুনতে পাচ্ছি । আমার মেয়েকে ডাকছে । বড় অদ্ভুত মেয়ে । আমি ওর তল খুঁজে পাইনা । কি ঘোরের মাঝে যে থাকে সারাদিন ।
- “শীলা, তুই বারান্দায় কি করছিস রে একা একা ?” নভেরার গলা ।
- “কিস..ছু নারে । বারান্দায় আসবি ?” বলতে বলতে বারান্দা থেকে ঘরের দিকে ফিরে দাঁড়াই ।
মেয়েকে কোলে নিয়ে বরং নভেরাই এগিয়ে আসে ।
- কি রে, কি হয়েছে তোর ? মুখখানা শুকনো দেখাচ্ছে ।
ভালো করে নযর করে দেখে নভেরা । ও যখোন এভাবে তাকায় আমার খুব ভয় করে । যেন ভেতরটা পড়ে নিতে চায় । ভাগ্যিস আলো নেই । গাঢ় হবো হবো অন্ধকারে আমি অন্যদিকে ফিরে কিছু যেন লুকোনোর চেষ্টা করি ।
- ওম..মা, তুই কাঁদছিলি নাকি ?
নভেরার কথায় চমকে উঠি । চোখ কি জ্বালা করে একটু, শিরশির ! কথা ঘুরাতে চেষ্টা করি –
- বা… রে কাঁদবো কেন ?
- বাজে কথা বলিস না । তোর চোখে জল ।
- অন্ধকারে তুই কি থেকে কি দেখছিস, তুই ই জানিস । চোখে কি যেন একটা গেল, পোঁকা-টোকা হবে
হয়তো ।
তুই একটু দেখতো, কি গেল । বলতে বলতে এগিয়ে আসি নভেরার দিকে । সামিয়া নভেরার কোল থেকে ঝপ করে নেমে আমার গলা ধরে ঝুলে পড়ে । কি হয়েছে, মামনি ? দেখি দেখি । এই আর এক মেয়ে, নভেরার ট্রেনিং পেয়ে পেয়ে পাক্কা বুড়ী হয়ে যাচ্ছে ।
আমার বড় আদরের । সামিয়াকে নিয়ে তখনই আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি । নভেরার জেরা থেকে বাঁচতে চাইছি কি ! অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে নভেরা দু’টো হাত বুকের ঢালুর নীচে আড়াআড়ি ফেলে রেখে চুপচাপ আমাকে দেখতে থাকে । পিছন ফিরে দাঁড়াই তবুও অনুভব করি নভেরার ছোট হয়ে আসা চোখদু’টো আমার পিঠে আমুল বিঁধে যাচ্ছে । অস্বস্তি লাগছে খুব ।
এযাত্রা ওর হাত থেকে নিস্কৃতি পাবো কিনা ভেবে একটু আৎকে উঠতে হয় । আর তখনই নভেরার গলা, শীলা কথা শুনে যা ।
শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল কি !
নভেরা আমার ছোটবেলার বন্ধু । পাশাপাশি ঠিক নয় এক পাড়াতেই ছিলাম অনেকদিন, স্কুলেও । নভেরা ছাড়াও আরো বন্ধু যে ছিলোনা তা নয় ।
তবে কেন যে ওকেই বেশী পছন্দ ছিলো আজও বুঝে উঠতে পারিনি । এরকমটা কারো কারো বেলায় হয় মনে হয় । ভালো লেগে যায় কাউকে কোনও কারন ছাড়াই । আবার কোন কারনটা ছেড়ে কোন কারনটা বেশী জোড়ালো তাও খুঁজে পেতে বিড়ম্বনা । মনিকা তো একদিন বলেই বসলো, কি দেখলি নভেরার মধ্যে যে ওকে ছাড়া তোর একদম দিন কাটেনা ? তারপরেই ওর সহজাত মিস্টি গলায় গেয়ে উঠেছিলো, “ আমার দিন কাটেনা ।
রাত কাটেনা ….” । আর খিলখিল হাসি । নভেরার মধ্যে আসলে কি ছিলো যা আমাকে টানতো ? আজও বুঝে ওঠা হোলনা আমার । তবে ও যে একলহমায় আমার ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারে, এটাতেই আমার যতো ভয় ।
নভেরা যাচ্ছেনা কেন… ?
( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন তিন/চার দিন )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।