আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলাপের সৌরভে আছ তুমি !!!

ভালবাসা মানে অন্যের ভালত্বে বাস করা অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকতেই ফোন বেজে উঠলো । কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফোন উঠাল রিনি, ওপাশ থেকে এক রাশ কথা শুরু ওর বোন মৌমিতা, কি রে আমি তোকে আজ খুঁজছি সারাদিন কোথায় থাকিস? আমার খুব দরকার চলে আয় এক্ষুনি । বল না আমি মাত্র ঢুকলাম রে খুব ক্লান্ত আজ ,রিনি বলল । . নাহ তুই আয় জরুরি বলেই আসতে বলছি আয় । এই বলেই কেটে দিল লাইন মৌমিতা .।

কি আর করা একটু ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে । সবে সন্ধ্যা হয়েছে, স্ট্রিট লাইট এর আলো আর গাড়ির হেডলাইট এর আলো সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে কিন্তূ রাস্তায় জ্যামএ এই ভালো লাগাটুকু বিরক্তির উদ্রেগ করলো । রিনির সিটেই ইচ্ছে হলো শুয়ে পরে সারাদিন বড্ড খাটুনি গেছে আজ । অনেকটা সময় পর ওর বাসায় এলো । বেল টিপতে হলনা ওই দরজা খুলে দিল ।

রিনি বসার ঘরে বসলো, মৌমিতা একরাশ কাগজ এনে ওর হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, দেখ এ গুলো , আমি তোর খাবার নিয়ে আসছি । সব গুলো রিপোর্ট মৌমিতার একটা একটা করে পড়ছে রিনি কোনো কিছুই নাই এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেল,টিউমার হার্টএ । থমকে গেল সে , এটা যে অপেরাসন লাগবেই নিশ্চিত । যাই হোক ও এলে রিনি মৌমিতাকে বলল শোন, তুই কাল আমার হাসপাতালে আয় ডাক্তার দেখা আরো কিছু পরীক্ষা কর । কারণ রিনির ও বিশ্বাস হচ্ছিল না ।

কিন্তূ মৌমিতা সিদ্ধান্তই নিয়েই নিয়েছে অপারেসন করবেই, তাকে ডাক্তার বলেছেন সব । রিনিকে ডেকেছে ওর হাসপাতালে হার্ট এর অপারেসন ভালো হয় তাই । মৌমিতা তিন ছেলে মেয়ের মা ওর হাসবেন্ড কয়েকবছর বিছানায়, ডান দিক অবশ ,হাঁটতে পারেনা , স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে ,কথা অস্পষ্ট্‌ .এমন কি নিজের সাইন টাও দিতে পারেন না , পেশায় ইন্জিনিয়ার । ৬/৭ বছর হল এমন অবস্থা স্ট্রোক করেছিলেন । মৌমিতা চাকুরী ছেড়ে স্বামী সেবা করছে, সংসার করছে ও এখন কেমন হয়ে গেছে চোখের নীচে কালি জমছে বেশ ভারিক্কিও হয়েছে এখন ।

ভাবতে ভাবতে বহুদূর চলে গেল রিনি । এই তো সেদিন মনে হয় । মা ওকে মেডিকেল কলেজে থেকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে বললেন, এই নে ছবিটা দেখ ওতো অবাক ,একটি ছেলের ছবি । একটু দুষ্ট ছিল রিনি হি হি করে হেসেই দিল। কি বল না কেমন দেখতে ? মা বললেন, রিনি বলল , ব্যাঙ এর মতন দেখতে ।

কি বললি ? বলছি তো তো ব্যাঙ । রিনি নির্বিকার ভাবে উত্তর দেয় । মা দিলেন এক ধমক কি বলিস ? এ একজন ইঞ্জিনিয়ার দাঁড়া ,তোর বাবা আসুক আজ । সেই রাতেই রিনির বাবা এলে মা বলেছিলেন বাবা হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিলেন বললেন, তোমার মাথা কি খারাপ? একজন ডাক্তার আর একজন মিলবে কি ? আর রিনির বিয়ে আরো পরে হবে । শুনে ত রিনি মহা খুশি মায়ের চিন্তা বাড়ল কারন রিনিকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই ।

সেই লোকের সাথে অবশেষে মৌমিতা, ওর বোনের বিয়ে হলো সে অনেক বড় ইতিহাস.। রিনি পরদিন চলে এসেছিল হোস্টেলে এসেই পরীক্ষা...। বাসার খবর পেত সবাই ভালো আছে । কেবল একদিন বাবা এসেছিলেন কিছু বলেন নি ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন রিনি ময়মনসিংএ মেডিকেল এ পড়ছে । শেষ পরীক্ষার দিন রুম আসতেই ওর রুম মেট একটি চিঠি এগিয়ে দিল ওকে ।

ওটা পরে অবাক হলো তার প্রিয় বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে ওর পরীক্ষা চলছে তাই জানানো হয়নি তাকে !! তাকে আর কয়েকদিন থাকতে হল ভাইবা ছিল তার । বাড়ি ফিরে দেখে বোনটি নেই । বাবার সাথে চিত্কার করল, শোরগোল করে বাড়ি মাথায় তুলল । মাকে বলল, আমি নেই তাই ওকে বিয়ে দিয়ে দিলে ? বাবা মাথায় হাত রেখে বললেন এখানটায় তো থাকে কাল যাস । তোর পরীক্ষা ছিল বলে তোকে বলা হয়নি ।

তাই বলে বিয়ে বাবা? সেদিন আর ঘুমাতে পারল না রিনি নিজের ঘরের বিছানায় বালিশ আঁকড়ে কাঁদলো শৈশব কৈশোরের সব স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো । বন্ধু ছিল ওরা । এক সাথে ঘুমিয়েছে,খেলেছে । আজ ও আর এক ঘরে নতুন জায়গায় কি জানি কেমন আছে ও খুব ইচ্ছে হয় ছুটে যায় । কিছুতেই নিজেকে মানাতে পারছে না ও।

.ওর বিয়ের বয়স ও হয়নি এখনো পড়া শেষ হয়নি ওর। এর পর অনেক দিন কেটে গেল জীবন এর চাকা ঘুরে গেছে রিনি চাকুরী করে ছোট্ট একটা সংসার তার । . কিন্তূ .ভালই আছে ও নিজের মতন । মৌমিতাটা আজ দেরী করিয়ে দেবে ভাবলো রিনি ডাকে রিনি ওকে । কিন্তূ ও ব্যস্ত তার হাসব্যান্ড কে নিয়ে খাওয়াচ্ছ মনে হয় ।

.ও ভেতর যায়না ওই লোক কে দেখলে ভীষণ রাগ হয় তার । এই মেয়েটার কি ধৈর্য !!! সইবার শক্তি অসীম । হাসব্যান্ড কে ফিজীয়থেরাপি থেকে খাওয়ানো স্নান করানো, সব ও করছে ছেলে মেয়ের দেখা শোনা সব সামলাচ্ছে অর্থের অভাব নেই ওর । .অভাব শান্তির ! সব কিছুই জানে রিনি মৌমিতা ওকে জানাত সব । সুখ পাইনি মৌমিতা ।

ভাবে রিনি, বিধাতা মেয়েদের এমন করে গড়েছেন্‌ , সইবার শক্তি দিয়েছেন অসীম ! এত কষ্ট করে কিন্তূ মুখে মিষ্টি হাসিটি লেগেই আছে মৌমিতার কি গোছানো সব বাড়িতে । তারপর ও নিজ ঘরে পরবাসী র মতন ছিল ও সবেই জানে হাসবেন্ড অসুখে পড়ার পর সব ওর হাতে এখন । ............ কিছুক্ষণ পর মৌমিতা এলে ওকে বুঝিয়ে বলল রিনি , এই এই হাসপাতাল আছে তোরা ঠিক করে আমাকে জানাস । খেয়ে আসতেই হলো ও তো ছাড়বে না যে । তারপর দিনেই ও আর ওর ছেলে এসে উপস্থিত হাসপাতালে ।

কি ব্যাপার ডাক্তার দেখাবে । আগে থেকে সময় নেয়নি কষ্ট করে যোগার করল রিনি । ওর খুবই পরিচিত কার্ডিয়াক সার্জন ওর রিপোর্ট দেখেই বললেন, অপারেসন লাগবে রিনিকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই মৌমিতা বলল আপনি করবেন তো ? কবে করবেন তাই তো আসা .। ডাক্তার একবার রিনির মুখ একবার ওর মুখ দেখছেন । রিনির খুবই নাজেহাল অবস্থা ।

যাই হোক উনি বললেন , কবে করতে চান ? ও বলল পরের সপ্তাহের শনিবার । আর একটা ধাক্কা রিনির জন্য । স্যার সব ঠিক করলে বার হয়েই ওকে নিয়ে পরে রিনি , কি রে তুই ? আগে আগে ফর ফর করিস কেন ? এটা তো আর্জেন্ট কিছু না আস্তে ধীরে কর । কে শোনে কার কথা , যাই হোক । যথারীতি ভর্তি হলো রিনির কাজ বাড়লো ।

আর মন খারাপ মৌমিতার বিয়ের পর বাবার বাড়িতেও থাকেনি একদিন যে সে কি করে পঙ্গু স্বামী কে ফেলে থাকবে । রিনি যতই বোঝায় ভালো আছে বোঝে কে ? অনেক রাত এ মৌমিতা ঘুমালে রিনি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো । ভাবছে মেয়েদের জীবন কি? এত বছর এই পঙ্গু স্বামীর সেবা করছে এই কচি মেয়েটা আজ ও মন খারাপ করছে কিন্তূ তিনি ঠিকই ঘুমাচ্ছেন বাড়িতে নরম বিছানায় । এক বার ও কল করলো না এখন পর্যন্ত অথচ এই মেয়েটা ছট ফট করে মরছে । মেয়েটা শান্তি কি বুঝলো না? শান্তির ঘুম অনেক দিন যায়নি ঘুমাক ও ।

. এ সংসার ওকে দু দন্ড শান্তি দেয়নি । আহা ঘুমাক । ওর মনে পরে মৌমিতা খুব আদর করত ওকে বিয়ের পর , বাসায় গেলেই খুব যত্ন করত খাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকত কিছু না খেলেই ধমক দিত। তারপর দু বোন শুয়ে কত কি যে গল্প করত ও রিনির চুলে বিলি কেটে দিত । কোথায় গেল সে সবদিন !!!! একটা পরীর মতন লাগছে ঘুমন্ত মৌমিতাকে , সকালে উঠে নাস্তার ভাবনা নে কে কি খেল ,কার কি লাগবে এসব আপাতত কয়েকদিন বন্ধ থাকবে .।

এই ভাল একটু বিশ্রাম নিক । এই মেয়েটা সংসার স্বামী ছেলে মেয়ে ছাড়া কিছুই বোঝে না কিন্তূ কি পেল? সে কিছু অপমান আর কি ? এত সবের পরও ওর মায়া কমেনি একটুও । ওর নিজের বলে কিছু নেই । এটা কি মানুষের জীবন হলো ? যে জীবনে নিজস্বতা বলতে কিছুই নেই, নিজের একটু ভাববার সময় ও নেই এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ও ঘুমিয়ে পড়ল রিনি । পর দিন নিজের কাজে ডুবে গেল রিনি ।

পর দিন অপারেসন মা কাঁদছে ভাই বোন সব উতলা কাল অপারেসন সবাই রিনি কে খোঁজে । অপারেসনের দিন, খুব ভোর, ৪ টা হবে নার্সে এলো ওকে রেডি করবে বলে ওর গলার চেইন খুলতে বল্লে খেপে গেল ও, রিনি বলল , এগুলো দিতে হয় লক্ষিটি খুলে ফেল । ও বলল জানিস এটা ওর দেয়া প্রথম চেইন কোনো দিন ও খুলিনি । হোক না দে তো..আপুনি । আঙ্গুলের রিংগুলো খুলতে যেতেই সে কিছুতেই দেবে না এবার কেঁদে ফেলল , বলল শোন রিনি আমি পারব না এটা খুলতে ।

অনেক বুঝিয়ে সব গোল্ড এর জিনিস খুলে নিল রিনি কিন্তূ অঝোরে কাঁদছে। সেই যে বিয়ের সময় পরানো রিং গুলো এসব খুলতেই তার আপত্তি যত সব বাজে চিন্তা ! স্বামীর অমঙ্গল ! হায়রে মেয়ে তোর মঙ্গল ভাবছে কে ? কি বলবে সে রিনির মনে হল এ সত্যি ও এত ভালবাসে ওই লোকটাকে কী আছে ওর? ওই লোকটা যদি বুঝত কি ভালবাসে তাকে এই মেয়েটি । অপারেসন ভালই হলো । চোখ খুলেই মৌমিতা নার্স কে বলল , আমার বোনকে ডাকুন , যেতেই বল্‌ল , দে আমার চেইন আমার আংটি হাতের চুরি ICU ও সব দেয়া যায় না বলল রিনি । কেবিনে দিলেই পরিয়ে দেব কত প্রশ্ন ওর হাসব্যান্ড এর কথা ছেলে মেয়েদের কথা ।

খুব আস্তে আস্তে, ভেন্টিলেটর দেয়া ও বলল সবাই ভালো আছে তুই ঘুমা. । দু দিন পর ও কেবিনে আসতেই জিনিস গুলো দিয়ে দিল রিনি । তারপর ও ভালো হলো বাড়ি ফিরে এল । ডাক্তার তিন মাস সাবধান এ থাকতে বলেছিলেন নার্সিং, খাওয়া এই সব কিছুই ওর পরিবারের লোকদের বুঝিয়েছিল রিনি । রিনি যেত ওকে দেখতে তিন মাস প্রায় শেষ কিন্তূ বড্ড মন খারাপ করত দেখত ও এই শরীরে স্বামীর সেবা করছে ।

কিছু বলতে গেলেই ধমকে দিত । এমন কি ছেলের যখন জ্বর হলো রিনি ফোনে বলল তুই ওর কাছে যাস না । শোনেনি ও বলেছিল, আমি মা তো। ভীষণ মন খারাপ করলো রিনি যখন অপারেসন এর দু মাস পর ও অসুস্থ হলো রিনি কে জানালো না কিছুই বলল না । আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল তিন মাসের মাঝা মাঝি রিনি কে খবর দিল ।

গেল দেখতে ও মৌমীতা গোলাপী ড্রেস পড়া দুবেণী দু পাশে যেন একটা সদ্য ফোটা গোলাপ !! মিষ্টি মেয়েটা ওকে দেখেই রিনি রেগে গেল বলল, তোর তিন মাস অন্যদের কাছ থেকে দুরে থাকতে বলেছে ডাক্তার কেন মানিসনি ? তাই ত আমি আসিনি । নিষ্পাপ হাসি দিয়ে বলল, কিছু হবে না দেখিস ভালো হয়ে যাব । পরদিন এসে কাজ করছে অফিসে ওর ছেলের কল , মা খুব সিক আসো.। কোনো রকমে সিএন জি নিয়ে দৌড়াল রিনি মাকে বলল, স্কয়ারে নাও আমার এটা দূর .এ .। রিনি গাড়ি থেকে নেমেই দেখল ছোট বোনটা ওড়না চাপা দিয়ে কাঁদছে ওকে জড়িয়ে নিয়ে ঢুকলো মা, বড় বোন্‌ ,ওর ছেলে সব বসে , কাউ কে কিছু না বলে ইমার্জেন্সি তে ঢুকে দেখল DC শক দিচ্ছে কেমন ফ্যাকাশে লাগছে ওকে , শরীর ফুলে উঠেছে কিন্তূ মুখে কি নিষ্পাপ হাসি ! ডাক্তাররা ওর পরিচয় শুনে বললেন ,Dead ! এ কথাটা যে কেমন লেগেছে বলতে পারবেনা সেদিন মনে হয়েছে ,হে প্রভু আমি কেন বেঁচে আছি? কেন বাঁচিয়ে রেখেছ তুমি ? বাইরে কি যাব কি করে বলব মাকে ? ওর ছেলেকে? তবুও বার হতেই মা কে বলল নেই !! সবাই নিস্তব্দ যেন জানত সবাই ।

। এসব মাঝেই রিনি সব কিছু ঠিক করে এম্বুলেন্স এ ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরল । ওকে দেখেই ওর হাসবেন্ড চিত্কার করে উঠলো । রিনি নাকি মেরেছে সেই ব্যথা কাকে বোঝায় ? সব চেয়ে কষ্ট হলো যখন ওর আঙ্গুল থেকে আংটি গুলো খুলতে গেল যেনো সে সেদিনের মত বলছে না দেব না হাতের চুরি গলার হার সব খুলল রিনি । খুব কষ্ট হলো খুলতে .কান্না চাপল কোন রকমে কারন ওর ছোট মেয়ে মায়ের ঠান্ডা হয়ে যাওয়া মুখের উপর পাগলের মতন কাঁদছে ।

আর বলছে, কথা বলছ না কেন আম্মু ? আমি ত তোমায় ভাল দেখে গিয়েছিলাম স্কুল বল আম্মু বল। রিনি মেয়ে কে সরিয়ে আনল । কে বোঝাবে ওকে কেন মা গেল আজ । বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল অনেক কিছু । নীরবে সরে গেল ও ।

ওর ঠোঁটে কি মিষ্টি হাসি !!!! বহুদিন ঘুমায়নি সে আজ সবাইকে ছুটি দিয়ে সে চলে গেল বড্ড অভিমানী ছিল সে । আহ বোঝানো যাবে না কি ভীষণ কষ্ট লাগছে স্বজন হারানোর ব্যথা সেই বোঝে সে হারায় । এই সুন্দর একটি নিষ্পাপ মেয়ে ছিল যে স্বামী সংসার ছাড়া কিছুই বুঝত না..। . আজ সেই সংসার তাকে কে বিদায় দিল । আহা ঘুমাক অনেক দিন সে ঘুমায় না.।

.এমন নিশ্চিন্তের ঘুম !. মনে মনে এ কথাই বলে রিনি । তবে যাবার আগে একটা দুটো ডায়রি দিয়ে গেছে ওর নিজের লেখা আজও খোলা হয়নি তা । বড় অভিমানী ছিল ও । তাদের সব চেয়ে সুন্দর ফুলটি আজ নেই । আছে আকাশের তারা হয়ে ।

যে সংসার এক দিন ও তাকে ছেড়ে চলত না । আজ ঠিকই চলছে। ওর হাসবেন্ড কে দেখছে ওর ছেলে মেয়েরা । বুকের বাঁ দিকে কেমন একটা ব্যথা অনুভব করে ও ওর মৃত্যুর পর ওই দিকে আর যায়না রিনি । . যে ছিল তার চোখের তারায় আজ সে অনেক দুরে সেই দেশে যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসেনা ।

তার মনে একটাই প্রশ্ন এত তারাহুরা করলো কেন ও অপারেসন করার জন্য ? আর একটু সময় নিয়ে ভাবতে পারত কিন্তূ ওসব তো ঠিকই ছিল । পরে জেনেছিল ওর হাসবেন্ড জন্যই ও তাড়া দিচ্ছিল । একটা সুন্দর ফুল অযত্নে অবহেলায় ঝরে গেল । হয়ত ঠিকই আছে ভালই হয়েছে এই নিষ্ঠুর সংসারে থেকে সে বিদায় নিয়েছে । আজ মনে পরছে, সেই যে ভোরে উঠে দুবোন কোচড় ভর্তি শিউলি কুড়াত বাগান থেকে , রিনি পরীক্ষার সময় পড়তে উঠত সকালবেলায় ও ওকে চা করে দিত ।

আরো ছোটবেলায় ও পড়ত আর রিনি ছোট্ট কাপড়ে আঁকিবুকি করত পুতুলের শাড়ির ডিজাইন বাবা এলেই লুকিয়ে ফেলত আর বোনটি সব দেখেও হাসতো কেবল কিছু বলত না । কিছুতেই যেতে দিত না ওকে রিনি । ভাবে আবার যদি ফিরিয়ে আনা যেত দিন গুলো !!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।