সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই
ঘটনা -১:
“এই নাম্বার গুলো থেকে ফোন আসলে ধরার দরকার নেই। বুঝেছো?” বড় ভাই বলছেন উনি আবার ইলেক্টিক্যাল ইন্জিনিয়ার। মুখ টিপে হাসছি আবার কষ্টও পাচ্ছি বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উপর আমাদের জ্ঞানের বহর দেখে। ২০০৮ সালে যখন এই গুজব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন আমি খুব অবাক হয়ে যাই যে অনেক বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উপর পড়াশুনা করা মানুষও এটি বিশ্বাস করতে শুরু করেন। আমাদের দেশে ৯০০ আর ১৮০০ মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সী ব্যবহার করা হয় মোবাইলের ক্ষেএে আর এতে এমন কোন সিগন্যাল পাঠানোর ক্ষমতা নেই যে কোন মানুষকে এই সিগ্যানাল দুনিয়া থেকে হাওয়া করতে পারে।
অদ্ভুত চিন্তা আমাদের। জাতিগত ভাবে আমরা যে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কহীন হুজুগে জাতি তা যেন আবার প্রমান হল। তাহলে আমরা কি বিজ্ঞান শিখছি? আর এর সাথে সাধারন মানুষের সম্পর্কই বা কতটুকু? (প্রশ্ন গুলো মনে রাখবেন)
ঘটনা-২:
“বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয়”। সাধারন মানুষ কেন এই বিষয়ে যারা স্পেশালিস্ট আই মিন ডাক্তারাও অনেক সময় এই কথাটি বলেন। আর আমাদের সাবানের বিজ্ঞাপন গুলো যেন আরো এগিয়ে।
সেই যাই হোক বৃষ্টি ভিজলে কোন মানুষের জ্বর হয়না এটা একটি দ্রুব সত্য কথা। (বিশ্বাস হয় না, তাইনা)। তার মানে আমাদের বিশ্বাসের কাছে বিজ্ঞানও হার মনে গেছে। শত বৎসরের এই ধারনা গুলো আমরা হারিয়ে দিতে চাই না বিজ্ঞানের কাছে। কেন?
ঘটনা-৩:
এবারে রসায়ন পদার্থ আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল মোট কয় জন পেয়েছেন? আচ্ছা আর সহজ প্রশ্ন কেন পেয়েছেন? কজন এর উওর দিতে পারবেন।
না পারলেও কোন সমস্যা নেই। একবার কি ভেবে দেখেছেন কয়টি পএিকা এই নিউজটা তাদের প্রথম পাতায় গুরুত্বপূর্ন কলাম হিসেবে ছেপেছে। আর সাহিত্য যে নোবেল পেয়েছেন পএিকার পরবর্তী সাহিত্য পাতাটা যেন উনার। নোবেল পুরষ্কার পাওয়া সেই বিজ্ঞানীদের কথা বা তাদের কীর্তির কথা কত টুকু ফলাও ভাবে প্রচার পায়?
ঘটনা -৪:
ভাগ্নেকে প্রশ্ন করলাম তার পদার্থ বিজ্ঞানে কি খবর? সে ভাল ছেলের মত জবাব দিল পড়া অনেক বেশি তবে স্যারের নোট ফলো করলে মোটামুটি সব কমন পড়বে। সে এসএসসি পরীক্ষায় কি পেয়েছে জানেন বিজ্ঞানে সব সাবজেক্টে এ+।
সবাই বলবে খুবই ভাল ছেলে কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন থেকেই যায় এটা কি বিজ্ঞান নামের সত্য মেনে নাকি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য। তাহলে পরীক্ষা পাশের জন্যই বিজ্ঞান পড়া? প্রশ্নটি ছাএদের উদ্দেশ্যে নয় বরং সরকারের কাছে।
ঘটনা -৫:
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? জানি উওরটি অনেকেই দিতে পারবেন। কিন্তু আমরা কি আসলেই তা অনুধাবন কারতে পারি। মোবাইল টেকনোলজি কিন্তু এপ্লাইড ফিজিক্স এর একটি ক্ষুদ্রতম অংশ।
বিজ্ঞান হচ্ছে মৌলিক জ্ঞান আর টেকনোলজি হচ্ছে সেই জ্ঞানে বাস্তবিক প্রয়োগ(ব্যবসায়িক প্রয়োগ ও বলতে পারি)। সেই মৌলিক জ্ঞান চর্চা আমরা কতটুকু করছি? সবাই যেন টেকনোলজি নিয়েই ব্যস্ত। খারাপ বলছি না। কিন্তু আমাদের দেশে মৌলিক বিজ্ঞান চর্চা অভাব কি বেশি নয়?
ঘটনা-৬:
জানি সবাই আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে যাবেন যদি এই প্রশ্ন করি আমাদের দেশে বিজ্ঞানে এত বিশ্ববিদ্যালয় কয়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়টা ছাএের থিসিস পেপারগুলো মৌলিক? আর এত প্রকল্প থাকে এগুলো আলোর মুখ দেখে না কেন? আমি আমার পুরাতন ভার্সিটির কথাই বলি আমাদেরই এক ছাএ কোথা থেকে লিনাক্স কানের্লের উপর থিসিস সংগ্রহ করে তা ভার্সিটিতে জমা দেয় আর তারটা দেখে দেখে তার সাথে আর তিন গ্রুপ একই থিসিস জমা দেয়। ভালই তো সবাই যেন একই বিষয় নিয়া পড়াশুনা করটাছে।
শুনুন তাহলে গুগল কিন্তু একটি থিসিসেরই ফলাফল আর লিনাক্সের কার্নেল সেটাও একটি থিসিসের ফলাফল। তাহলে আমরা কি করছি?
পরিশিষ্ট
এই প্রশ্নের উওর গুলো আমাদের সবারই জানা আছে। কিন্তু কেউ ও যেন তা পালন কারতে চাইছে না। বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের অনিহা আমাদের জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সব জায়গায়। আমাদের ঐতিহ্যে যে বিজ্ঞানের প্রতি আমাদের অনাগ্রহ প্রকাশ করে তা কিন্তু নয় আমাদের দেশেও আমাদের রক্তেও কিন্তু আছেন স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, কুদরতই খুদা মত বিজ্ঞানী আর আবদুল্লা আল মুতির মত বিজ্ঞান লেখক।
তাদের অবদান যেমন বিজ্ঞান স্বীকার করে যাবে চিরজীবন তেমনি আমাদের এদের কাছ থেকেই শক্তি নিতে হবে। আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে বিজ্ঞানী হয়ে উঠার। সেই লক্ষেই আমাদের এখন থেকে কাজ করে যেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।