টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। বাতাসের চলার গতি রুদ্ধ করে বের করে আনবো ধূলো জমা বিবর্ন সময়টাকে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবো অসহায় মুহূর্তগুলো। তারপর... অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে মুখোশের অন্ত
যারা প্রথম পর্ব মিস করেছেন তাদের জন্য নিচে লিন্ক দেয়া হল:
পর্ব ১
রাসেল তড়িঘড়ি করে উঠে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না। কারন তার উত্তেজনা ভাবটা তখনও যায়নি।
সে প্রথমে গোসল করার কথা ভাবে এর পর অন্যকিছু ভাবা যাবে। গোসল শেষ করে রুমে এসে কি পরা যায় এটা নিয়ে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যত জামা-কাপড় আছে সব বের করে যাচ্ছেতাই অবস্থা।
ভাগ্গিস আশেপাশে কেউ নেই কেউ দেখে ফেললে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হত। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করে, শুক্রবার যেহেতু তাই পান্জাবী পরাটাই ভালো হবে।
গত ঈদে কেনা নীল রংয়ের পান্জাবীটা বের করলো পরবে বলে।
ইস্ত্রি করা শেষ হলে গত মাসে সোল ড্যান্স থেকে কেনা জিন্সটি তাড়াহুড়ো করে পরে বের হয়ে হলের সামনে এসে ঘড়ি দেখার জন্য হাতের দিকে তাকাতেই দেখে হাতে ঘড়ি নাই। মনে করলো মোবাইলের ঘরিতে সময় দেখবে এই ভেবে পকেটে হাত দিয়ে দেখে তাড়াহুরায় মোবাইলও ফেলে এসেছে। একদৌড়ে রুমে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে ঘড়ি এবং মোবাইল নিতে গিয়ে দেখে মানিব্যাগও টেবিলের উপর পড়ে আছে। দ্রুত এগুলো তুলে নিয়ে হলের সামনে এসে মিঠু ভাইকে ফোন দিল।
মিঠু ভাই ফোন রিসিভ করে বলে আরে বেটা এত তাড়াহুড়া কিসের? মাত্রতো ৩০ মিনিটও হলোনা। তুই রুমে থাক আমি বের হবার সময় তোকে ফোন দিব। মিঠু ভাইয়ের কথা শুনে রাসেল লজ্জায় পড়ে গেলো শুধু আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিল।
ফোন রেখে দেবার পর হঠাৎ তার খেয়াল হল সে এখনও নাস্তা করেনি আর তখনই তার খিদাচাড়া দিয়ে উঠলো। গতকাল রাতে এমনিতেও খেতে পারেনি তারউপর এত বেলা হবার পরও পেটে কিছু পড়েনি।
রাসেল এমনিতে কখনও অনিয়ম করে না কিন্তু বেশ কিছুদিন হল ওর রুটিনমাফিক জীবনের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটছে। ঘটবেই বা না কেন? অপ্সরী নামের মেয়েটি তার জীবনের সবকিছু উলট পালট করে দিয়েছে।
প্রথম বারের মত অপ্সরীদের বাসায় যাবে কিছু নিয়ে যেতে মন চাইতেছে কি নেওয়া যায় এটা নিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করার পর মনে পড়লো ঐদিন ও আচার খেতে চেয়েছিল তাই মায়ের হাতে বানানো আমের আচার নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলো।
এগুলো ভাবতে ভাবতে সে কেন্টিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্যান্টিনের ছেলেটা রাসেলকে দেখে বলে ওঠে-
-কেমুন আছেন রাসেল বাই?
কি নাস্তা খাইবেন?
উত্তরে রাসেল শুধু বলে
-ভালো রে।
তোর খবর কি? আর ভালমন্দ কিছু নিয়ে আয় খাই।
রাসেল নাস্তা খেতে শুরু করেছে হঠাৎ সে খেয়াল করলো নাস্তাটা ভালোই হয়েছে কিন্তু সে আগের মত খেতে পারছেনা। অর্ধেক শেষ হলে সে খাওয়া বন্ধ করে দিল।
মিঠু ভাইয়ের মনে হয় আসতে দেরি হবে এই সময়টা কি করা যায় কারন তার এখন রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না। আর এখন এখানেও থাকা যাবে না রাজীব ভাইদের সামনে পড়লে উনারা যদি কোনভাবে জানতে পারেন রাসেল আজকে অপ্সরীদের বাসায় যাচ্ছে তবে ওর খবর আছে।
এই কাহিনী পুরো হলে ছড়িয়ে পড়তে ৫ মিনিটও লাগবে না। আচারের কথা মনে পড়তেই বাধ্য হয়ে রুমে ফিরে আচারের বয়ামটা একটা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল।
তারপর হল থেকে বের হয়ে হাটতে হাটতে শহীদমিনারের সামনে এসে বসে পড়ে। হঠাৎ কি মনে করে একটা রিক্সা ডেকে রাসেল রিক্সায় উঠে পড়ে এবং রিক্সাওয়ালাকে বলে চাচা শাহবাগ চলো। শাহবাগের ফুল দোকানগুলোর সামনে আসলে সে রিক্সা থেকে নেমে পড়ে।
তার খুব ইচ্ছা হয় অপ্সরীর জন্য ফুল কিনতে। সে আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে ফুল দেয়নি। আজ সে অপ্সরীকে ফুল দিতে চায়।
তখন সে ভাবে মিঠু ভাই ফুলের ব্যাপার জিগ্গেস করলে কি জবাব দিবে? মিঠু ভাইয়ের কথা নাহয় বাদই দিলাম অপ্সরীই বা কেন তার ফুল গ্রহন করবে? তার বাসার সবাই এই ব্যাপারটিকে কিভাবে দেখবে তাই রাসেল কিছুক্ষন ফুলদোকানের সামনে ঘুরে ফিরে হতাশ হয়ে রিক্সা নিয়ে আবার শহীদমিনারের সামনে এসে বসে পড়ে।
পাশের চায়ের দোকানদার ছেলেটিকে ডেকে চা দেবার কথা বলে।
চা খাওয়া শেষ করে দিনের প্রথম সিগারেটে টান দিতেই সারা শরীরটা ঝিম মেরে উঠলো। এই ঝিমঝিম ভাবটা শুধুমাত্র দিনের প্রথম সিগারেটেই পাওয়া যায় যা রাসেল অনেক ইনজয় করে। হয়তোবা এর জন্যই রাসেল এখনও সিগারেট ছাড়তে পারেনি। হয়তোবা পারবেওনা। তবে অপ্সরী যদি কখনও সিগারেট ছেড়ে দিতে বলে তবে সে অবশ্যই ছেড়ে দিবে।
অপ্সরীর জন্য সে যে কোন কিছুই করতে পারে।
সিগারেট শেষ করতে না করতেই মোবাইল বেজে উঠলো। মিঠু ভাই ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করতেই
-কিরে রাসেল কই তুই? আমি তোর হলের সামনে দাড়িয়ে আছি।
-ভাই আমিতো শহীদমিনারের চায়ের দোকানের সামনে বসে আছি।
মিঠু ভাই একটু বিরক্তি নিয়ে জিগ্গেস করলো
-তুই আবার ওখানে কি করছ? যাবি না?
-আপনি এক কাজ করেন রিক্সা নিয়ে এখানে চলে আসেন এরপর একসাথে যাওয়া যাবে।
মিঠু ভাই রিক্সা নিয়ে আসলে রাসেল রিক্সায় উঠে বসে।
মিঠু ভাই রাসেলকে দেখেই বলে উঠলেন
-আরে আমাদের রাসেলকে তো পান্জাবীতে ভালোই মানাইছে। পান্জাবীটা কবে কিনস?
-গত ঈদে।
-তা আজকে এত সাজুগুজুর কাহিনী কি? হাতে আবার এইটা কি?
একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে রাসেল বলে
-কই শুধু পান্জাবী আর জিন্স পরলাম আর ঐদিন অপ্সরীকে আচার খেতে দেখছিলাম তাই মায়ের পাঠানো আচার নিয়ে যাচ্ছি ওর জন্য।
মিঠু ভাই কি বুঝলেন না বুঝলেন কোন কথা না বলে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। রাসেলও কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
রাসেল হঠাৎ করে খেয়াল করলো রিক্সা যাবার কথা শান্তিনগরে আর শান্তিনগরে যেতে হলে সেগুনবাগিচা দিয়ে ঢুকবে কিন্তু রিক্সা প্রেসক্লাব হয়ে সোজা বায়তুল মোকারমের দিকে যাচ্ছে বলে রাসেল রিক্সাওয়ালাকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে
-চাচা শান্তিনগর তো ঐ দিকে আপনি এইদিকে কই যান?
রিক্সাওয়ালা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে আমারে তো শান্তিনগর যাইবার কয় নাই। উনি বলছে বায়তুল মোকারম যাইতে।
রাসেল অবাক হয়ে মিঠু ভাইয়ের দিকে তাকালে মিঠু ভাই বলে যে, আরে শুক্রবারে জুম্মার নামাজ না পইড়াই যাবো নাকি?
শান্তিনগরেই যখন যাবো তাই ভাবলাম বায়তুল মোকারমে নামজটা পড়েই যাই।
কথাটা শুনে রাসেলের মন খারাপ হয়ে গেল! মুখ দিয়ে বলল
-হুম। ঠিক তো! চলেন!
মনে মনে খুব বিরক্ত হল। শুনেছিল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে নাকি খোদা কে পাওয়া যায়! আর আজ তার একমাত্র প্রার্থণা কেবল অপ্সরী। এর চে' বেশি কিছু সে ভাবতে পারছেনা! তাই অগত্যা চুপচাপ মিঠু ভাইকে অনুসরণ করে গেল!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।