আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হয়তোবা একেই বলে ভালোবাসা!!!

টেনে হিঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে। বাতাসের চলার গতি রুদ্ধ করে বের করে আনবো ধূলো জমা বিবর্ন সময়টাকে। হাতের মুঠোয় ধরে থাকা ধারালো ছুরির ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করবো অসহায় মুহূর্তগুলো। তারপর... অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে মুখোশের অন্ত

সারাদিন ক্লাস আর ল্যাব শেষ করে পরপর দুইটা টিউশনি করে রাসেল ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরল। শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে রাসেল ভাবতে লাগলো কাল শুক্রবার কোন কাজ নেই বেলা করে ঘুমানো যাবে।

আজ তাহলে একটা মুভি দেখা যাক। কিন্তু কি মুভি দেখবে হাজার ভেবেও রাসেল ঠিক করতে পারলোনা। সারাটা রাত তো পড়েই আছে এখন একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক মুভি নিয়ে পরে ভাবা যাবে বলে রাসেল ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ত্রিশ মিনিট থেকে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো কিন্তু ঘুম আসছে না। রাসেল এর আগেও খেয়াল করেছে ক্লান্তিবোধ বেশি থাকলে তার ঘুম আসে না।

তাই মেজাজটা একটু গরমই হয়ে গেলো। ঘুমাতেই যখন পারবোনা তবে বিছানায় শুয়ে থেকে কি লাভ। । রাসেল বিছানা থেকে উঠে গোসল এবং ডিনারের কথা ভাবলো। একটু দেরি হলেই আবার হলে খাবার শেষ হয়ে যায় তখন বাহির থেকে খেয়ে আসতে হয়।

বাড়তি ঝামেলা এবং বাড়তি খরচও বলা যায়। টিউশনি থেকে যে টাকা পায় সেটা খুব হিসাব করেই খরচ করতে হয় রাসেলকে । রাসেল উঠে গোসল সেরে ট্রাউজার আর অতি সাধারন একটা গেন্জি পরে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো। ক্যান্টিনে ঢুকতেই রাজীব ভাই ডাকলো -কিরে রাসেল সারাদিন তোকে দেখলাম না!কোথায় ছিলি? আগামী মাসে বাস্কেটবল টুর্নামেন্টের কথা মনে আছে তোর? সোমবার থেকে পুরোদমে প্র্যাকটিসে নামতে হবে। কিরে তুই আমার কথা শুনেতেছিস? মন কই তোর? -আরে ভাই শুনতেছি তো।

সারাদিন শরীরের উপর অনেক ধকল গেছে। তাই একটু ক্লান্ত লাগছে। গোসল করলাম কিন্তু ক্লান্তিবোধ কিছুতেই যাচ্ছেনা। যাইহোক ডিনার করছেন আপনে?আর আপনি একা কেন? বাকিগুলা কই গেছে? -ওদের কথা আর বলিস না। ওরা সব দলবেধে পুরান ঢাকায় বিরিয়ানী খেতে গেছে।

আমাকেও বলছিলো কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই যাইনাই। তোরেও তো ফোন করছিলো তোর মোবাইল বন্ধ ছিল মনে হয় তাই তোরে পায় নাই। -চলেন ভাই ডিনার করে ফেলি। -নারে রাসেল এখন ডিনার করতে ইচ্ছে করছে না। বিকালে ফ্রেন্ডদের সাথে টিএসসি তে দেখা হয়েছিল।

ওরা ধরে নিয়ে গেছিলো মোহাম্মদপুরে মোস্তাকিমের চাপ খেতে ঐটা খেয়ে এখন আর খিদা নেই। তাইতো ওদের সাথে বিরিয়ানী খেতে যাই নাই। ওদেরকে এই কথা বলি নাই তুই আবার বলে দিস না। পরে আবার আমাকে ধরবে। হাসতে হাসতে রাসেল বলে, -এর জন্যই বলি আমাদের যেই রাজীব ভাই খাবারের কথা শুনলে শত কাজ ভুলে রকেটের বেগে ছুটে যায় আর সে কিনা আজকে নিষেধ করছে।

যাইহোক আমি তাহলে খেয়ে নেই শরীর তেমন একটা ভালো লাগছে না। খেয়ে গিয়ে যদি দেখি মুভি দেখার এনার্জি আছে তবে একটা মুভি দেখবো নাহলে শুয়ে পড়বো। এই বলে রাসেল খাবারের অর্ডার দেয়। খেতে গিয়ে দেখে ঠিকমত খেতে পারছেনা যদিও সে স্বাভাবিকভাবে অনেক খেতে পারে। হঠাৎ করে তার মনে হল জ্বর আসেনিতো? তাই হয়তো বা এমন হচ্ছে।

কিন্তু কপালে হাত দিয়ে দেখে না সব কিছুতো স্বাভাবিকই আছে। রাসেলের এসব কান্ড কীর্তি দেখে রাজীব ভাই হাসতে হাসতে বললো, -কিরে রাসেল তোর কি হইছে এইকয়দিন? কেমন যেন মনমরা থাকিস। উল্টাপাল্টা আচরন করিস! কাহিনী কি? প্রেমে পরছিস নাকি? রাজীব ভাইয়ের কথা শুনে রাসেল হকচকিয়ে গেলো। কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে বললো, -নারে ভাই কয়েকমাস পরেই তো সেমিস্টার ফাইনাল। এবারের প্রিপারেশন খুব একটা ভালো না।

তাই একটু টেনশন হচ্ছে এই আর কি! খাবার শেষ না করেই রাসেল উঠে পড়লো। হাত ধুয়ে রাজীব ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমের দিকে হাটা দিল। রুমে ঢুকেই কম্পিউটারটা অন করে RUN এ টাইপ করলো ১২১.২০.০১৭। অসংখ্য মুভি থেকে খুজতে শুরু করলো কোন মুভি দেখা যায়। অনেক মুভির নাম শুনেছে অনেকের কাছ থেকে কিন্তু দেখা হয়নি।

পরিচিত কোন নাম পাওয়া যায় কিনা এটা ভাবতে ভাবতেই চোখ আটকে গেলো "A Walk to Remember" মুভির উপর। অনেকের কাছেই শুনেছে এই মুভিটা নাকি অনেক জোস হেন তেন। রাসেলের রোমান্টিক মুভি দেখতে তেমন একটা ভালো লাগতো না কখনই। কিন্তু কয়েকমাস হল তার কি হয়েছে ঘুরে ফিরে সে রোমান্টিক মুভির দিকেই ঝোঁক যায়। মুভিটা কপি করে পিসির মুভি ফোল্ডারে পেস্ট করলো সময় দেখালো ১২ মিনিট।

এই ১২ মিনিট বসে থাকার কোন মানেই হয়না তাই গান শুনা যাক এই ভেবে অনেক প্রিয় একটা গান জন ডেনভারের Annie's Song গানটা ছেড়ে দিল। তারপর একটা সিগারেট ধরাল। এই গানটা যতবারই শুনে, মনে হয় প্রথম শুনছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত গানটা শুনতে শুনতে হঠাৎ করে তার অপ্সরীর কথা মনে পড়ে গেলো। সারাদিনের ব্যস্ততায় একবারও ওর কথা মনেই পড়েনি।

হঠাৎ ওর এটাও মনে হল হায় হায় কালকে তো ওদের বাসায় দুপুরের দাওয়াত। এটাও সে ভুলে গিয়েছিলো। দিন দিন তার কি হচ্ছে? সে সব কিছু ভুলে যাচ্ছে। আসলে এই সব কিছুর জন্য অপ্সরীই দায়ী। ওকে দেখার পর থেকে রাসেল কেমন যেনো চেঞ্জ হতে শুরু করে।

ওর কথাই শুধু মনে থাকে আর দুনিয়ার সব কিছুই ভুলে যায়। কিন্তু আজ হয়েছে এর উল্টা। ওর কথাই রাসেল ভুলে গেলো। নিজের উপর একটু রাগ হল আবার হাসিও পেল। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন উকি দিল কাল কি অপ্সরীদের বাসায় যাওয়া হবেতো? মিঠু ভাই আবার ভুলে যায়নিতো? মিঠু ভাইকে ফোন দিয়ে জিগ্গেস করলে কেমন হয়? ধুর ছাই! এমন দাওয়াত তো মানুষ কৃতঙ্গতা প্রকাশের জন্য হরহামেশাই দিয়ে থাকে।

তাই বলে কি যেতে হবে নাকি? কিন্তু রাসেল তো সেখানে যেতে চায় শুধুমাত্র অপ্সরীর জন্য। ওকে একপলক দেখার জন্য যদি বেহায়া হতে হয় তবে রাসেল হবে এই বলে সে মোবাইল নিয়ে মিঠু ভাইকে ফোন করে। কেমন আছেন? কি করেন? কোন খোজ-খবর নাই কেন? এসব ২/৪ টা নরম্যাল কথা বলে রাসেল ফোন রেখে দেয়। যেটার জন্য ফোন করেছিল সেটা আর বলা হয়না। নিজের উপর রাগ উঠে সাথে সাথে মিঠু ভাইয়ের উপরও বিরক্তি আসে।

মোজাম্মেল সাহেব তার পুরো পরিবার নিয়ে এসে দাওয়াত দিয়ে গেলো আর মিঠু ভাইয়ের ব্যাপরাটা মনেও নাই! অন্তত ভদ্রতার খাতিরেও তো যাওয়া যায়। কিছুক্ষন পর রাসেল খেয়াল করলো তার অবচেতন মন শুধু লজিক দাড় করাচ্ছে অপ্সরীদের বাসায় যাবার জন্য, যার সবগুলোই ভিত্তিহীন। মানুষ যখন কোন কিছু মনেপ্রানে চায় তখন সে ইলোজিকাল বিষয়গুলোকেও লজিকাল ভাবতে ভালোবাসে। আসলে মানুষ তার মনকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যদি সে চায়। কিন্তু মানুষ বড়ই অপদার্থ এর কারন হল তার যা নেই সে তাই চায়।

যা আছে তা সে চায় না। এই চাওয়া পাওয়ার জন্যই আজ তার জীবনের অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। এই যেমন কোথাকার কোন মেয়ে অপ্সরী যাকে কিনা সে মাত্র একবারের মত দেখেছিল হাসপাতালে এর পর থেকে সে মনে প্রানে এই মেয়েটিকে চেয়েছ। মেয়েটা কি রাসেলকে চায়? চাইবার কথাও না। হাসপাতালে একদিন দেখেছিল কোন কথা হয়নি।

আর ঐদিন শুধু বলেছিল, ভাইয়া প্লিজ আমি শুধু আচার খেতে চাই। এটাতো ওকে বলেনি! বলেছিল মিঠু ভাইকে। আচ্ছা অপ্সরীর বয়ফ্রেন্ড নেই তো? আজকাল তো শুনি মেয়েরা ভালবাসা কি জিনিস এটা বুঝতে পারার আগেই বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ঘুরে। এত কিছুর পরও অপ্সরী নামের এই মেয়েটির জন্য তার আবেগ কাজ করে। একসপ্তাহ, একমাস হলে একটা কথা ছিল কিন্তু তাই বলে গত একবছর থেকে? এসব উদ্ভট চিন্তা করতে করতে তার মনে হল মুভি দেখবো বলে মুভি কপি দিলাম আর এখন কি নিয়ে পড়ে আছি? যাইহোক এখন মুভি দেখা যাক বলে সে মুভি ফোল্ডারে ঢুকে দেখে সাবটাইটেল নাই।

সাবটাইটেল ছাড়া মুভি দেখে মজা পাওয়া যায়না। তাই আবার ইন্টারনেটে ঢুকলো সাবটাইটেল নামানোর জন্য। সাবটাইটেল নামানো শেষ করে মুভি ছেড়ে দেখতে বসলো। মুভির শুরুতে কলেজের বখে যাওয়া কিছু পোলাপানের ঘটনা দেখতে দেখতে তার মনে হল এইটা একটা মুভি আর তেলাপোকাও একটা পাখি?! কে যে কইছিলো এইটা নাকি খুব রোমান্টিক মুভি। আইএমডিবি রেটিংও নাকি ৭.১! যাইহোক সে একটু বিরক্তি নিয়েই মুভি দেখতে লাগলো।

যেই কাহিনীর দিকে যাচ্ছিলো তখনই সে মজা পাওয়া শুরু করলো। নিজের মনেই বলে উঠলো যতটা খারাপ ভেবেছিলাম নাহ অতোটা খারাপও না! মুভির একদম শেষের দিকে যখন আসলো রাসেল তখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। সকালে মিঠু ভাইয়ের ফোনে রাসেলের ঘুম ভাঙ্গলো। -কিরে রাসেল আজ যে অপ্সরীদের বাসায় যাবার কথা ছিল তোর মনে আছে? গতকাল রাতে তুই ফোন রাখার পর মনে পড়ছিলো। পরে আর ফোন করা হয়নাই।

তুই এক কাম কর ১ ঘন্টার মধ্যে হাতের সব কাজ সেরে হলের সামনে এসে আমারে একটা কল দিস। একসাথে যামু। রাসেল হুম হুম করছিলো। মিঠু ভাই নিজের কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলেন। ফোন রেখে দিলে রাসেল একলাফে বিছানা উঠে বসলো।

উত্তেজনায় সে কাঁপছিল এবং গতকালরাতে যে সে মুভি শেষ না করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সেটা বেমালুম ভুলে গেল কারন আজ আবার সে অপ্সরীর দেখা পাবে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.