আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এলিজাবেথ টেলর-২

all in one
২৩ মার্চ ৭৯ বছর বয়সে চলে গেলেন হলিউডের ক্লিওপেট্রা এলিজাবেথ টেলর । সারা জীবন পাদপ্রদীপের আলোয় বাস করেছেন তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, অভিনয়_সব কিছুই ছিল মানুষের ব্যাপক আগ্রহের বিষয়। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন সাগুফ্তা ন্যান্সি দুটো অস্কার, আটটি বিয়ে আর অতুল ঐশ্বর্যের মায়া কাটিয়ে পরপারে চলে গেলেন এলিজাবেথ 'ক্লিওপেট্রা' টেইলর। ৭৯ বছরের জীবনে অভিনয়ের দৌলতে পেয়েছিলেন ব্যাপক খ্যাতি।

প্রথম অভিনয় ৯ বছর বয়সে। 'ল্যাসি ক্যাম হোম' দিয়ে ১৯৪৩ -এ। ১২ বছর বয়সে 'ন্যাশনাল ভেলভেট' দিয়ে সুপারস্টার হয়ে যান। শিশুতোষ চরিত্রে নানা ছবিতে অভিনয় করে বড়দের চরিত্র করার সুযোগ আসে 'কন্সপিরেটর' ছবিতে। ছবিটি বঙ্ অফিসে থুবড়ে পড়ে।

এরপর আরো অনেক ছবিতে অভিনয় করলেও অভিযোগ চলতে থাকে যে তাঁর অভিনয় ক্ষমতা নেই, আছে শুধু সুন্দর মুখ। উচ্চমাত্রার কৃত্রিম অভিনয় ছাড়া আর কিছুই হবে না মেয়েটাকে দিয়ে। 'আইভানহো' ছবিতে প্রধান চরিত্র 'রোয়েনা'তে অভিনয় করতে চাইলেও দেওয়া হয় 'রেবেকা' চরিত্র। হাঁপিয়ে ওঠেন লিজ, মরিয়া হয়ে ওঠেন অভিনয় দক্ষতা প্রমাণের জন্য। রক হাডসন ও জেমস ডিনের বিপরীতে 'জায়ান্ট' ছবিতে অভিনয় দিয়ে শুরু হয় তাঁর অভিনয় দক্ষতা।

১৯৬০ সালে 'বাটারফিল্ড এইট ' ছবিতে অভিনয়ের জন্য জুটে যায় অস্কার। তিন বছর পরেই রিচার্ড বার্টনের সঙ্গে জুটি বেঁধে কিংবদন্তী ছবি 'ক্লিওপ্রেটা'তে অভিনয়। 'হুজ অ্যাফ্রেইড অব ভার্জিনিয়া উলফ' এনে দেয় দ্বিতীয় অস্কার। এ জুটির ছবিগুলি '৬০ ও '৭০-এর দশকে বঙ্ অফিস সাফল্য এনে দিলেও '৭০-এর দশকে ক্যারিয়ারে ভাটা পড়ে। যদিও 'আন্ডার মিল্কউড' -এর মতো ভালো ছবিতে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছেন তিনি।

এরপর টিভিতে অভিনয় শুরু করেন। 'জেনারেল হসপিটাল ', 'সিম্পসন ', 'নর্থ অ্যান্ড সাউথ ' সিরিজে তাঁর অভিনয় স্মরণীয় হয়ে আছে। স্টেজেও দক্ষতা প্রমাণ করেছেন লিজ। ব্রডওয়েতে 'ড. ফস্টাস ' নাটকে রিচার্ড বার্টনের বিপরীতে অভিনয় করেন। নাটকে ফস্টাসরূপী বার্টনের সংলাপ 'ও হেলেন মেক মি ইমরটাল উইথ এ কিস' শুনে হেলেনরূপী লিজের সেই নীরব অভিব্যক্তি নিয়ে বছরের পর বছরের বিশ্লেষণ চলেছে সমালোচকদের মধ্যে।

তাঁর দ্বৈতসত্তা নিয়েও যথেষ্ট সমালোচনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত করেননি। ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদে ২০০৩ সালে বয়কট করেছেন অস্কার অনুষ্ঠান। আজীবন ইসরায়েল ও যিওনিস্ট স্বার্থ নিষ্ঠার সঙ্গে ত্যাগ করেছেন। ক্রিশ্চিয়ান ঘরে জন্ম নিলেও ২৭ বছর বয়সে কেন ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করলেন_তা আজও রহস্য।

প্রথমবার ধনকুবের নিকি হিলটনকে বিয়ে করেন। রূপকথার সেই বিয়ে ৯ মাসের মাথায় ভেঙে পড়লে এক বছর পরেই বিয়ে করেন বয়সে ২০ বছরের বড় অভিনেতা মাইকেল ওয়েলভিংকে। এবারো ব্যর্থ লিজ। বিয়ের তৃতীয় পাত্র ধনী প্রযোজক মাইকেল টড। এবার যেন সুখের মুখ দেখলেন।

কিন্তু নিয়তি ভেবে রেখেছিল অন্য রকম। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় টডের। টডের বন্ধু অভিনেতা এডি ফিশার এগিয়ে আসেন লিজের দুঃখ মোচনে। বিবাহিত এডির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন লিজ। কিন্তু রক্ষিতা হতে চাননি, স্ত্রী ডেবিকে ছেড়ে টড বিয়ে করেন লিজকে।

'ক্লিওপেট্রা' ছবির শুটিংয়ের সময় রিচার্ড বার্টনের মধ্যে সত্যিকারের প্রেম খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। টড যেমন ডেবিকে ছেড়ে লিজের কাছে চলে আসেন, ঠিক সেভাবেই টডকে ছেড়ে লিজ বিয়ে করেন রিচার্ডকে। তবে তাঁদের বিয়ের আগে দুজনের এই পরকীয়া হলিউডে রীতিমতো ঝড় তোলে। কিন্তু রিচার্ডের অতিরিক্ত মদ্যপানে বিরক্ত লিজ বিয়ে ভেঙে দেন। প্রেমের টানেই দ্বিতীয়বারের মতো লিজ বিয়ে করেন বার্টনকে, কিন্তু আবারও ছাড়াছাড়ি।

এরপর সিনেটর জন ওয়ার্নারের সঙ্গে ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবারও অপেক্ষা। ট্রাক ড্রাইভার স্যারি ফ্রটনোস্কির সঙ্গে পরিচয়। একাকিত্বে হাঁপিয়ে ওঠা লিজ বিয়ে করেন তাঁকে। কিন্তু পাঁচ বছরের মাথায় আবারও বিচ্ছেদ। পত্রপত্রিকার আলোচনা-সমালোচনায় বিরক্ত লিজ ঘোষণা দেন, আর বিয়ে করবেন না।

স্বদর্পে জানিয়েছেন, তিনি শুধু সেই সব পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন, যাঁদের তিনি বিয়ে করেছেন, অন্য কারো সঙ্গে নয়। মাইকেল ওয়েল্ডিংয়ের দুই ছেলের মা হয়েছেন, টডের কন্যার মা। মৃত্যুর সময় ১০ নাতি-নাতনি ও চারজন পুতি রেখে গেছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ছিলেন মানবিক মানুষ। রক হাডসন এইডসে আক্রান্ত হলে তাঁকে প্রকাশ্যে চুমু খান লিজ।

যে সময় এইডস রোগীদের অচ্ছুৎ মনে করা হতো, নিজের নামে গড়ে তুলেছেন এলিজাবেথ টেলর এইডস ফাউন্ডেশন। তিনিই দ্বিতীয় মহিলা যাঁকে রানি এলিজাবেথ 'ডেম অব দ্য ব্রিটিশ অ্যাম্পয়ার' উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। তাঁর দুঃসময়ে সব সময় পাশে ছিলেন, এমনকি মাইকেলের দুই সন্তানের গডমাদার লিজ।

ফ্যাশন আইকন হিসেবে তাঁর সুনাম সর্ববিদিত। 'হোয়াইট ডায়মন্ড', 'পয়জন', 'ব্ল্যাক পার্লস' নামের তিনটি বিশ্বখ্যাত পারফিউম তাঁর তৈরি ব্র্যান্ড। জুয়েলারি এত ভালোবাসতেন যে ডিজাইন করার জন্য খুলেছিলেন 'দ্য টেলর জুয়েলারি হাউস'। তাঁর সংগ্রহে আছে বিশ্বের বিখ্যাত ঐতিহাসিক গহনা। রানি মেরির মুক্তো, ডাচেস অব উইন্ডসরের ব্রুচ গ্র্যান্ড ডাচেস অব রাশিয়ার পান্না থেকে সম্রাট শাহজাহানের রুবি।

সারা জীবন অসুস্থতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে। জন্ম থেকেই মেরুদণ্ডে সমস্যা ছিল। ছবির সেটে মোট পাঁচবার পড়ে গিয়ে আমৃত্যু সমস্যায় ভুগেছেন। ব্রেইন টিউমার অপারেশন করে রক্ষা পেয়েছেন, ভুগেছেন ত্বকের ক্যান্সারেও। দুইবার নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলেন।

শেষ জীবনে আলঝেইমারে ভুগছিলেন। এলিজাবেথের বন্ধু মাইকেল যেমন নিজেকে সুন্দর করতে গিয়ে কৃত্রিমতার সহায়তা নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন, ঠিক তেমনি লিজ অপারেশন করে চোখের পাতা বড় করেছিলেন। যার ফল হৃদরোগ সমস্যায় ভোগেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হৃদরোগের সমস্যায় সেড্রাস সিনাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আর ফিরে আসেননি। ২৩ মার্চ সবাইকে সম্মোহিত রেখেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান লিজ।

মৃত্যুর পরদিন ইহুদি রীতিতে ৫০ জনের উপস্থিতিতে তাঁকে ফরেস্ট লন মেমোরিয়াল পার্কে সমাহিত করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরি করে। কারণ লিজের উইলে এমন নির্দেশই ছিল। আজীবন সেটে দেরি করে আসতেন তিনি, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার অন্তিম মুহূর্তে তাঁর রীতি এ রকমই রাখতে চেয়েছেন তিনি।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.