সাধারণ মানুষ যার জানার কিছু ইচ্ছা আছে।
২৯ মার্চ,আমার দেশ পত্রিকার বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিভাগে জনাব আতাউর রহমান কাবুল এর লিখা
" বিভ্রান্তিকর জাতীয় ‘ই-তথ্যকোষ"নামক এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরলাম। ----------
প্রথমেই নাম নিয়ে বিভ্রান্তি
গত ২৭ ফেব্রুুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর ইন্টারনেটে চালু হয়েছে ই-
তথ্যকোষ।
জাতীয় ই-তথ্যকোষের নাম নিয়ে প্রথমেই ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। দেশের প্রযুক্তি বোদ্ধারা এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেদের মন্তব্যও প্রকাশ করছেন।
এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা— http://www.infokosh.bangladesh.gov.bd. যেখানে সবকিছুই বাংলায়, সেখানে ‘ইনফোকোষ’ কেন? পুরোটা বাংলায় করলে নাম হতো ethothokosh. তবে অনেকের মতে, এটার নাম ekosh রাখা যেত অথবা শুধু info থাকতে পারত। বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণে এ নামটা জগাখিচুরিমার্কা বা বিভ্রান্তিকর নয় কি?
তথ্যের ভিত্তি দুর্বল ও ভাষা মানহীন
ই-তথ্যকোষটি বাংলায় করা হলেও এখানে দেয়া সব তথ্য বাংলায় নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁঁছে দিতে জাতীয় ই-তথ্যকোষ কি ভূমিকা রাখতে পারে? তথ্যকোষের ব্যবহৃত বাংলা ভাষাগুলোও এলোমেলোভাবে সাজানো ও ভুল বানানে যুক্ত। এর তথ্য ও তথ্যের সোর্সও অনেক দুর্বল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের কম্পিউটার টিপস অংশে ৫৬টি কম্পিউটার টিপস রয়েছে।
এগুলো টেকনোলজি টুডে নামক একটা মাসিক ম্যাগাজিনের তথ্য। তাছাড়া তথ্যকোষের অনেক লেখা মানসম্মত নয়। এক স্থানে লেখা রয়েছে, ‘তথ্য সরাসরি কোষে সঙ্কলন করতে এই সদস্যপদ অনুমোতিপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে’ এ অনুমোতি মার্কা বানান পাওয়া যাবে একাধিক পাতায়। প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট লিঙ্ক বিভাগে শুধু সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর লিঙ্ক দেয়া আছে। অথচ এসব ওয়েবে বাংলা না থাকা, নিয়মিত হালনাগাদ না হওয়া, ভুল তথ্য থাকা, তথ্যের অসামঞ্জস্যতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু এসব বিষয়ে যথাযথ ফলাফল প্রদান করে কোনো বেসরকারি ওয়েবসাইটের নাম দেয়া হয়নি। জাতীয় পর্যায়ের একটি ওয়েবসাইটে এ ধরনের বানান নিয়ে বিভ্রান্তি ও মানহীন লেখা থাকা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
একটা সার্চ দিলে আর একটা মেলে
এ তথ্যকোষে ‘যদি ব্ল্যাড’ ব্যাংক লিখে সার্চ দেয়া যায়, তবে ‘শনপাপড়ি’ বানানোর ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। আরও পাওয়া যায় বই বাঁধাই সংক্রান্ত তথ্য। সোনালী, অগ্রণী ব্যাংকের কার্যক্রম তথ্য। আবার ‘ফায়ার সার্ভিস’ লিখে সার্চ দিলে পাওয়া যায় কৃষি তথ্য সার্ভিস, মাছ চাষ, অ্যাসিড আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি তথ্য।
এখন বুঝুন আপনি জরুরি তথ্য সেবা পেতে চাইলে আপনার অবস্থা কি দাঁড়াবে? অথচ এ তথ্যকোষ বানানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়ার জন্যই।
এখানে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান লিখে খুঁজলে মোট ১১টি ফলাফল পাওয়া যাবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম দিয়ে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে চারটি ফলাফল, যার মধ্যে ড্রাইভিং শেখারও ব্যাপার আছে! ছবি অপশনে গিয়ে শেখ হাসিনা লিখে সার্চ দিলে ৯টি ছবি পাওয়া যাবে, খালেদা জিয়া লিখে সার্চ দিলে দেখায় ‘কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি’।
জিয়াউর রহমান লিখে সার্চ দিলে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি পাওয়া যায়।
এক ব্লগার এ নিয়ে ইন্টারনেটে মন্তব্য করে লিখেছে—‘আমি যা দেখলাম তাতে বাপ-বেটির তথ্য বাদে আর কোনো তথ্যই এ বিশাল তথ্যকোষে জায়গা করে নিতে পারেনি! তাদের নিজেদের তথ্যই এত বেশি তাই আর কোনো তথ্য দেয়া সম্ভব হয়নি’! আর এক ব্লগার লিখেছে—রাষ্ট্রের আর জনগণের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করে এসব আবর্জনা তৈরি না করলেই আমরা খুশি।
’
কেন তথ্যের এত সঙ্কট?
এ তথ্যকোষ নির্মাণের কাজ চলেছে বেশ কয়েক মাস ধরে। এর আগে এ তথ্যকোষ গড়ে তোলার কাজে কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদিও হয়েছে প্রচুর। সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি করা তথ্য এখানে জমা দিচ্ছে। সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েবসাইটেও হাজার হাজার তথ্য আছে। এটি সরকারি ও বেসরকারি তথ্য সমন্বয় করে ডাটাবেইস তৈরি করা হয়েছে, তাহলে এখানে কেন তথ্যের এত সঙ্কট হবে? তাছাড়া বাংলা উইকিপিডিয়াতেও তো অনেক তথ্য আছে।
২০১০ সালে মে মাস থেকে শুরু হওয়া একটি কাজের ফল যদি হয় এই, তাহলে তো হতাশ না হয়ে উপায় নেই।
কী আছে এই ই-তথ্যকোষে?
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন’ এটুআই প্রকল্প তথ্যভাণ্ডারটি তৈরি করেছে। এ তথ্যকোষে রয়েছে ১৪৮টি সরকারি অফিসের ওয়েবসাইটের তথ্য। সঙ্গে প্রায় ৫০টির মতো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার তথ্য। ফলে ই-তথ্যকোষে থাকা সার্চ অংশে কোনো কিছু লিখে খুঁজতে দিলে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলোয় থাকা তথ্যগুলো বেরিয়ে আসে।
এখানে মোট ১১টি বিষয় সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এগুলো হলো কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অকৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, কর্মসংস্থান, নাগরিক সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প ও বাণিজ্য।
নিজেদেরই আস্থার অভাব
কোনো বিষয়ে যোগাযোগের বিষয়টি আছে দু’জায়গায়। মতামত পাতায় এবং যোগাযোগ পাতায়। ঠিকানা হিসেবে আছে মো. নজরুল ইসলাম খান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পুরনো সংসদ ভবন তেজগাঁও, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ফ্যাক্স নং : ৮৮০-২-৮১৫৯৮৯৫। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো—এটি একটি ই-তথ্যকোষ অথচ এখানে কোনো কোনো ফিডব্যাক মেকানিজম বা ই-মেইল ঠিকানা নেই। কোনো মতামত জানাতে হলে ফ্যাক্স করতে হবে। যারা জাতীয় ই-তথ্যকোষ তৈরি করছে তাদের নিজেদেরই যদি ই-কমিউনিকেশনসে আস্থার অভাব অথবা ব্যবহারে অনিচ্ছা থাকে, তবে কীভাবে একসেস টু ইনফরমেশন বাড়ানো হবে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। ২০১০ সালের মে মাস থেকে প্রায় ১০ মাসের পরিশ্রমে গড়ে তোলা একটি কাজের ফল যদি হয় এই, তাহলে বলতেই হবে বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড হচ্ছে দ্রুত গতিতে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।