আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মসমালোচনা

জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত। নির্জনতাই বেশী পছন্দ, নিজের ভেতরে ডুবে থাকতেই ভাল লাগে। কিছুটা নার্সিসিস্টও।

অফিস থেকে বের হয়ে শাপলা চত্বর থেকে রিক্সা নিলাম। বন্ধু অপেক্ষা করছে জিপিওর সামনে।

জরুরী কাজে নারায়নগঞ্জ যাবো। উত্তরা ব্যাংক ভবন এর সামনে আসতেই দেখলাম আমার রিক্সাটির দুটি রিক্সা আগে ১টি মিনিবাস ১টি রিক্সাকে দ্রুতগতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে রিক্সাটির একপাশ দুমড়ে-মুচড়ে দিল। রিক্সাওয়ালা মূহুর্তে ছিটকে রাস্তায়। রিক্সাটিতে কোন যাত্রী ছিল না। মূহুর্তের জন্য বাসটি দাঁড়ালো।

পরমূহুর্তে ততোধিক দ্রুতগতিতে রিক্সাটিকে চেপে দিয়ে গুলিস্তানের দিকে চলে গেল। শতশত মানুষের চোখের সামনে ঘটনাটি ঘটল। দুএক জন পথচারী হৈ হৈ করে উঠল। বাসটি যখন রিক্সাটিকে ধাক্কা দেয় তখন আমার রিক্সাটি কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছিল। রিক্সাওয়ালার আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির কথা মাথায় না এসে প্রথমেই আমার মাথায় এসেছিল, ইস্ এখনই জ্যাম লেগে যাবে, একটি ঝামেলার সৃষ্টি হবে।

আমার দেরী হয়ে যাবে। আমার মত সেখানে উপস্থিত সকলের মাথায়ই কি এই একই চিন্তা এসেছিল ? যদিও কিছুক্ষনের জন্য আমার রিক্সাটি দাঁড়িয়েছিল তখনই দেখেছিলাম ভাগ্যবশত রিক্সাওয়ালার শারীরিক ক্ষতি তেমন হয়নি। হাতের কনুই ও পায়ের চামড়া সামান্য ছিলে যাওয়া ছাড়া। রিক্সাটির ক্ষতি ছাড়া রিক্সাওয়ালার শারীরিক ক্ষতি না হওয়ায় জ্যামও লাগেনি, দেরীও হয়ে যায়নি। যে যার পথে চলা শুরু করেছিল, শুধুমাত্র কিংকর্তব্যবিমুড় রিক্সাওয়ালার অসহায়ভাবে রিক্সাটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া।

আমি নির্দিষ্ট সময়েই নারায়নগঞ্জ গিয়েছিলাম। বাসে বসে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, সভ্যতা বা আধুনিকতা কি আমাদেরকে নিজেদের স্বার্থসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে শেখায় না। তা না হলে দুর্ঘটনাটি দেখে দুর্ঘটনাকবলিতকে সাহায্য করার বদলে আমার মাথায় কেনো নিজের দেরী হয়ে যাবার কথাই এলো ? আচ্ছা, ব্যক্তিসাতন্ত্র্যতা / আধুনিকতা আমাদেরকে কি কেবলমাত্র নিজেকে নিয়েই ভাবতে শেখাবে ? ...................................................................................................... কৈফিয়ত: এই পোস্টটি পূর্বে আমার অন্য একটি নিকে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে সেই নিকটি আমি ইউজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই এখানে পোস্টটি আবার দিলাম।

লিংকও দিতে পারতাম, কিন্তু কোন এক অজানা কারনে লিংকটি কাজ করছে না। ...................................................................................................... ৫ টি মন্তব্য৩৫ বার পঠিত, পোস্টটি ১ জনের ভাল লেগেছে ১. ০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫১ কাছে-দূরে০০৭ বলেছেন: ভাই আপনার আত্মকথনটি পড়ে আমিও কিছুটা অবাক হয়েছি। অবাক হয়েছি ওই মুর্হূতে আপনার চিন্তার কথা জেনে। আসলেই আমরা বদলে যাচ্ছি দিন দিন। আর বদলে যাচ্ছে আমাদের অনুভূতিগুলোও।

২. ১৮ ই নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০০ দুরের পাখি বলেছেন: এইরকমের ঘটনার উপর একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা হৈছে । ফলাফল বেশ আমোদজনক । বেশি লোক থাকলে সবাই ভাবে কেউ না কেউতো সাহায্য করবেই, আমি যাইগা । উল্টা যেখানে কম লোক সেইখানেই সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । ৩. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:২৭ আসিফ মহিউদ্দীন বলেছেন: তাও ভাল যে আপনার মাথায় এই চিন্তাটা আসছে।

৪. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৪২ কালো-ভোমরা বলেছেন: আত্নসমালোচনার দিকটি ভাল লেগেছে। আর সাহায্য করার দিকটি সম্পর্কে একটা সম্ভাবনার ফ্যালাসীর উদাহরণ দিতে পারি। "কেউই সাধারণত ঐ রেস্তোঁরাতে যেতে চায়না কারণ ওটাতে প্রচন্ড ভীড় থাকে। " একই ভাবে কেউই সাধারণত সাহায্য করতে চায় না কারণ তাদের দেরী হয়ে যাবে"। তারপরেও ঐ রেস্তোঁরায় প্রচন্ড ভীড় হয়, কেউ না কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যায়।

৫. ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৫৬ শিপু ভাই বলেছেন: আমরা আসলেই দিন দিন বেশি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। আপনি দেখবেন যে, আগুন লাগলে পাব্লিক খাড়ায়া খাড়ায়া তামশা দেখে। তাদের জন্য ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ঠিক মত কাজ করতে পারে না। সকলের শুভবোধের উদয় হউক!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।