২.
যেন গতকাল কিছুই হয়নি বা হলেও কিছু মনে নেই এমনভাব নিয়ে মিতু প্রশ্ন করল-আরে তুমি এখানে কি করছ? এখানে ভর্তি হতে এসেছ? কার সাথে এসেছ?
ছেলেটি কিন্তু গতকালের অপমানের কথা এখনো ভুলে নি। এমনকি এজন্য এই স্কুলে ভর্তি তেও রাজি ছিল না। শুধুমাত্র মা আর পাশের বাসার নতুন খালাম্মার (মা বলেছে উনাকে খালাম্মা নয় আংটি না না আন্টি বলে ডাকতে ) চাপাচাপিতে হার মেনে আসতে বাধ্য হয়েছে। স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে অবশ্য তার মন ভাল হয়ে গেছে। এত সুন্দব স্কুল, এত ফুল, এত বেশী অচেনা গাছ-পালা দেখে তার শ্রীহীন সাদামাটা দহগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা মনে পড়ে গেল।
মনে পড়ে গেল মনির, সোহাগ ও সুমনের কথা। অবুঝ মন দুটি স্কুলের মধ্যে তুলনা করে স্মৃতিবিধুর স্কুলটিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভাবতে থাকে, এই শহুরে স্কুলটি সুন্দর হতে পারে কিন্তু চারদিকে এতউচুঁ ও বিশাল দেয়াল দিয়ে শুধু সামনে এতটুকু লোহার নিরেট গেট দিয়ে শিক্ষাকে যেন শুধু আবদ্ধ রাখতে চায়। অতচ, তার প্রিয় সেই স্কুল কতই না উদার ভাবে শিক্ষা বিস্তার করে যাচ্ছে। সবাই যেন সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য সেখানে সীমানাপ্রাচীর পর্যন্ত নাই। আটপাড়ার মানুষ চারদিক থেকে বিদ্যালয়ে আসতে পারত।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন কিভাবে যে এই নাম না জানা নতুন গাছটির তলায় এসে হাজির হয়েছে, তা সে নিজেও খেয়াল করেনি। মেয়েটির কথার আন্তরিকতায় তার ভাবনাবিনাশ হল। মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে আনন্দিত হল। বলল- আম্মু আর আংটির সাথে এসেছি।
মেয়েটি শুধায়-আংটি?
ছেলেটি তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল বুঝতে পেরে সীমাহীন লজ্জায় মাথা নুইয়ে বলে না মানে আম্মু আর তোমার আম্মুর সাথে এসেছি।
তারা আমাকে ফেলে কোথায় যেন চলে গেছে।
মেয়েটি নতুন করে হাসিমাখা মুখে চারপাশে তাকাতে গিয়ে টিচাররুমের সামনে তাদরকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল-
ওইত আম্মুরা, চল যাই।
এই শোন, এইটা কি গাছ?
মেয়েটি ফিরে তাকিয়ে বলে-ওমা তুমি কোত্থেকে এসেছ? কাঁঠলিচু গাছও চিন না। কোনদিন কাঁঠলিচু খাওনি বুঝি?
ছেলেটি মাথাউচু করে আড়চোখে গাছটির দিকে তাকায়। ছোট ছোট গোটা গোটা ফলের থোকাগুলো এবার তার দৃষ্টিগোচর হয় কিন্তু স্বাদইচ্ছা জাগায় না।
সে বলে চল আম্মুদের কাছে যাই।
প্রধান শিক্ষিকা বছরের মাঝামাঝি নতুন ছাত্র ভর্তি করতে প্রথমে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও মিতুর মায়ের অনুরোধে শেষপর্যন্ত রাজি হন। তুহিনের মায়ের কাছে তুহিনের অতীত ফলাফলের কথা জেনে আগ্রহী হয়ে তুহিনকে ৭/৮ টি প্রশ্ন করেন। ইংরেজিতে সামান্য ঘাটতি থাকলেও অন্যান্য বিষয়ে তুহিন যে অনেক ভাল তা তিনি বুঝতে পারলেন। সবচেয়ে বড় ব্যপার গ্রাম থেকে এলেও ছেলেটি প্রায় শুদ্ধভাষায় কথা বলে।
তিনি এ ব্যপারে নিজেই নজর দিবেন বলে কথা দিলেন এবং পরদিন থেকেই ক্লাস শুরু করার জন্য অনুমতি দিলেন। (চলবে.....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।