সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ...
কলকাতার বিখ্যাত বি এম বিড়ালা হার্ট রিচার্স সেন্টার এর হার্ট স্পেসিয়ালিস্ট ডা: শীরুপ চ্যাটার্যী এখন লিসার সামনে দাড়িয়ে আছেন। লিসার সার্বিক পরিস্থির সম্পর্কে জানতে এসেছেন । কাল সকালে লিসার হার্ট অপারেশন । লিসা জন্ম থেকেই হার্টের সমস্যা। হার্টের কোথায় যেন ছিদ্র আছে, সেটা বন্ধ করতেই এই আয়োজন।
ডা: বলছেন, ছোট্র একটা নরর্মাল অপারেশন , তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিভাবে কি অপারেশন হবে একটা কাগজে ছবি সহ ডা: লিসাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। লিসার সে দিকে কোন খেয়াল নেই। আনমনে সে চেয়ে আছে কাগজটার দিকে। কোন কিছু ভাবার খেয় সে হারিয়ে ফেলেছে।
যেন পৃথিবীর সব কিছু থেকে সে নিজেকে নিরবে দুরে সরিয়ে রাখছে।
ডা: চলে যাওয়ার পরও নিশ্চুপ লিসা বোবার মতো বিছানার দিকে তাকিয়ে আছে যেন খুব মনযোগ সহকারে ডাক্তারের বোঝানো সেই কাগজটা দেখছে। নিজের অজান্তে চোখের কোলঘেষে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ছোট বুকটা দুমড়ে-মুষড়ে একাকার হতে চাইলো। প্রচন্ড কান্নাটাকে যখন আটকাতে পারলোনা,দু`হাতে মুখ ঢেকে সজরে কেদে উঠলো।
অভিমানে ভরা মনটা বারে বারে বলে উঠলো, মেরে ফেলার জন্যই সবাই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। কেউ আমাকে ভালবাসেনা। কেউ আমাকে চায়না।
ছয়দিন আগে লিসা তার দুই ভাইয়ার সাথে কলকাতা এসেছে ডাক্তার দেখানোর জন্য। শুধু নর্মাল চেক-আপ করানো হবে বলেই লিসাকে বলা হয়েছে।
কাল হাসপাতালে ভর্ত্তির পর আজি লিসা জানলো তার অপারেশন করানো হবে এবং সেটা আগামি কালই।
হঠাৎ অপারেশনের কথা শুনেই লিসা বাক হারা হয়েছিল। কোন কিছুতেই সে মন বসাতে পারছিলনা। সন্ধ্যায় দুই ভাই দেখা করতে আসলেও তাদের সাথে ঠিক মতো কথা বললোনা। বেশীর ভাগ সময় চুপচাপ থাকলো ।
মনটাকে জানালার কাচ গলিয়ে দুরে ঝুলন্ত ব্রিজটার উপর নিয়োজিত রাখলো। যেন সব ভাবনা ঐ ব্রীজটাকে ঘিরে। কলকাতার সবচেয়ে বড় ঝুলন্ত ব্রীজ। সে শুনেছে , সেটার উপর দিয়ে শুধু ইন্জিনচালিত গাড়ি যেতে পারবে । মানুষ, সাইকেল বা রিক্শা যাওয়া নিষেধ।
ভাইয়ারা চলে যাওয়ার পর সে আরো নি:সঙ হলো। কার কাছে যেন শুনেছিল , যখন একাকিত্ত্ব ঘিরে ধরে তখন নাকি প্রিয় কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। লিসা সেটাই চেষ্টা করলো। সে একটা পেয়ারা গাছ লাগিয়েছিল। সেটা নিয়ে ভাবল।
গাছটাই এই বছর পেয়ারা ধরবে। তার পড়ার টেবিলটা নিয়েও ভাবলো, যেটার দখল নিয়ে প্রায়ই তার আপুর সাথে মারা মারি হতো। এক সাথে লাল,নীল আর কাল লিখা যেত, যে কলমটা ছোট ভাইয়া দিয়েছিল সেটার কথাও ভাবলো। কলমটা কত যত্ন করেই না রাখত। সেটাও তার আপুর টার্গেট ছিল।
এসব এলোমেলো ভাবনা দিয়েই লিসা তার মনটা ভুলিয়ে রাখল।
রাতে ঠিক মতো খেতে পারলো না লিসা। কেমন অরুচি ভাব আসলো। সন্ধ্যার পর যে খাবারটা দিল সেটাই নাকি অপারেশনের আগে শেষ খাবার হয়তো জীবনের শেষ খাবার। রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নানা অশুভ চিন্তায় ভরে গেল মন।
হয়তো সন্ধ্যায় ছিল ভাইয়াদের সাথে শেষ দেখা , হয়ত আর বাংলাদেশে ফেরা হবেনা,হয়তো আর কখনো কারো সাথে দেখা হবে না,প্রিয় গাছ, কলম, টেবিল আমার থাকবেনা, মারা গেলে হয়ত লাশ নিয়ে ভাইয়াদের অনেক ভোগান্তি হবে। নির্ঘুম রাতটা শুধু এসবি ভেবে কাটালো লিসা।
সকালে আলো ফোটার আগেই এক নার্স এসে লিসার নাম ধরে ডাকা শুরু করলো। তাড়াতাড়ি লোশান আর শ্যাম্পু মেখে গোসল করতে বলল। যেন ফাঁসির আসামী।
ফাঁসির মন্চে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। গোসল শেষে অপারেশনের ড্রেস পরানো হল। একটু পর একজন ডাক্তার আর নার্স এসে লিসা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল। লিসার মনে এখন আর কিছু নিয়ে ভাবনা নেই আছে শুধু চোখের অশ্রু । দুনিয়াকে পেছনে ফেলে শুধু চোখের পানি নিয়ে লিসা অপারেশন থিয়েটারে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।