সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিল মানে কারো শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নেয়া
বাংলায় কথা বলে এমন কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়- ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে কি জানেন ? আশা করি পাঠক একমত হবেন এই উত্তরে যে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে আয়োজিত মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক-রফিক, সালাম, শফিউর, জব্বার প্রমূখ শহীদ হন। এই বহু চর্চিত, বিবৃত বিবৃতির সাথে অবশ্য আরও যৎকিঞ্চিত যোগ হতে পারে কখনও কখনও। কিন্তু এ ইতিহাস বড় বেশী সংক্ষেপিত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও সত্যের প্রতি অবিচার বলে মনে হয় আমার। হতে পারে তারা জানে না। সেক্ষেত্রে জানার ভান করাটা এক প্রকার নিষ্ঠুর প্রহসন অথবা অস্বীকারের নামান্তর।
কিন্তু রক্তের ঋণ, ঘামের ঋণ বড় ঋণ। অন্তরে বিশ্বাস পাঠক যদি দয়া করে আমাকে কিছুটা সময় মঞ্জুর করেন। তাহলে হয়তো ২য় বারের মত আমার সাথে একমত হবেন আর একই সাথে যাদের রক্তের, ঘামের ঋণে আমরা ঋদ্ধ তাদের প্রতি কিঞ্চিত শ্রদ্ধা প্রদর্শন সম্ভব হতে পারে।
সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, একাত্তর বাংলার ইতিহাস নয়, ইতিহাসের অংশ। বাঙালীর সব্টা নয় বরং কিছুটা মাত্র।
আলোচনায় মনে রাখা ভাল-বাংলায় পৃথিবীর প্রথম মানুষের উদ্ভব ঘটেনি, পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম বা কয়েক হাজার বছরেও কারো পদচিহ্ন পড়েনি বাংলার নরম, কোমল বুকে। প্রায় দশ হাজার বছর পূর্বে যারা এ ভূ-খন্ডে এসেছিলেন তারা কেউ-ই বাংলায় কথা বলতেন না। কি ভাষায় তারা কথা বলতেন তা কোন ইতিহাসবিদ বলতে না পারলেও খৃষ্টজন্মের ২-৪ হাজার বছর পূর্বে যারা এখানে বাস করতেন তাদের সভ্যতাকে অনার্য সভ্যতা এবং তাদের ভাষাকে অনার্য ভাষা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সমসাময়িক সুমেরীয় বা মিশরীয় সভ্যতার সাথে তাদের যোগসূত্র ছিল বলে অনুমিত হয় সেক্ষেত্রে এখানে উন্নত সভ্যতা(হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর মতো), ভাষা ও লিখন পদ্ধতি ছিল বলে ধরে নেয়া যায়।
খৃষ্টপুর্ব ২য় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি বঙ্গে হানা দিলেও সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের পুর্ব পূরুষ আর্যগন মোটামুটি গৌররাজ শশাঙ্ক(সপ্তম শতক)এর আমলে বাংলাকে কব্জা করতে সক্ষম হয়।
যদিও তার পূর্বেই অহিংস বৌদ্ধগণ(মডারেট হিন্দু!) ও মহাবীর(প্রথম দফায় তার প্রতি কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল) জৈনের শিষ্যগণ বঙ্গে আর্যদের আসার পথ সুগম করে রেখেছিলেন তবুও শশাঙ্ক (এমনকি দ্বাদশ শতকে বিজয় সেন, লক্ষণ সেন এর আমল পর্যন্ত)ও তার বাংলায় একটি আর্যাবর্ত কায়েমের বাধা সেই পথিকৃত, পূর্বসূরীদেরও কসুর করেন নি। এ সুদীর্ঘ (খৃষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দ থেকে দ্বাদশ শতাব্দি) সময়ে প্রভাবশালী আর্য শাসনে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সাথে এ অঞ্চলের অনার্য জনগোষ্টির ধর্মীয় চেতনা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়। এই প্রভাবকে আর্ষীকরণ বলা যেতে পারে। এই প্রভাব এতটা গভীর ছিল যে, অনার্য ভাষা এবং ভারতীয় আর্যভাষার(আর্যবাহিত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্টির অন্যতম ভারতীয় আর্যভাষা) একত্রে ঘর-বসতির কয়েক প্রজন্ম পরে ৭ম/১০ম শতকে বাংলার অব্যবহিত পূর্ব পুরুষ পূর্ব মাগধি প্রাকৃতে ঢেঁকি, কুলা প্রভৃতি কয়েকটি শব্দ শুধু মাতৃবংশের স্মারক চিহ্নরূপে টিকে থাকে। সমসাময়িক কালে ব্রাহ্মী(মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত লিপি অশোকের রাজভাষা ? কোথাও কোথাও মাগধি লিপিকে অশোকের রাজভাষা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
) লিপির উত্তর পুরুষ কুশান লিপি অনার্য রঙ আর চিহ্নের সাথে মিশে যে পূর্বদেশীয় গুপ্ত লিপি তা থেকে জন্ম নেয় আমাদের প্রিয় বাংলা লিপি/বর্ণ। চর্যাপদের গীতি কবিতাগুলি এ সময় থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়ে বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের দ্বারা লেখা।
৯ম-১০ শতকে দক্ষিণে সমুদ্র বন্দরে আসে পরিবর্তিত চেহারার ধর্মান্তরিত পুরোনো বাণিজ্যসঙ্গী(খৃষ্টজন্মের আগে থেকেই আরবের সাথে এতদঞ্চলের বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল) আরবরা। এবার বাণিজ্যের সাথে সাথে তারা বাংলার অন্দরে-বন্দরে ধর্মপ্রচার শুরু করে। আবার উল্টোদিকে হানা দেয় ইসলামী জজবায় উদ্বুদ্ধ তুর্কি, পার্সিরা।
কিন্তু বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ১২০৭ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির আক্রমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। চতুর্দশ শতকে(১৩৫০ এর পর) লিখিত শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের পূর্ব পর্যন্ত সময়টা অন্ধকার যুগ হিসেবে উল্লেখিত। এরপরই বাংলায় আর্ষীকরণের বদলে পার্সিকরণ শুরু হয়। পনের শতক থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত সময়ে বাংলার আকাশ, বাতাস, ভাষা ও সাহিত্য পার্সিময় বা ফার্সিতে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে। এই সময়ে মোগল ও অন্যান্য শাসকগণ এই পার্সিকরণের মুল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন।
জন্মের পর বাংলাকে এই প্রথম টিকে থাকবার সংগ্রামে নামতে হয়। ভাষা আন্দোলনের(আমরা মনে রাখি জন্মও একটা আন্দোলন আর একটি অনুন্নত, অবিকশিত ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নামবার পুর্বে উন্নত, বিকশিত ভাষায় পরিণত হওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপই ভাষা আন্দোলনের অংশ এমনকি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও বৃহত্তর অর্থে ভাষা আন্দোলনের অন্তর্ভূক্ত) এই পর্বে বাংলার পক্ষে থাকেন সাধারণ মানুষ ও তাদের ভাষার প্রতিনিধি কলম সৈনিক সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮), ‘যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’ খ্যাত আব্দুল হাকিম(১৬২০-১৬৯০), আলাওল, কোরেশি মাগন ঠাকুর, শাহ মুহাম্মদ সগীর(আঠার শতক) প্রমূখ এবং অবশ্যই বৈষ্ণব সাহিত্যের ও মঙ্গল কাব্য কবিগণ।
পনের শতকেই ইউরোপিয়ানদের আনাগোনা শুরু হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশিতে ইংরেজদের বিজয়ের পূর্বে অন্যান্য যেমন, ফরাসি, পর্তুগীজ, ডাচ প্রভৃতি সমুদ্র ভিক্ষুকদের দ্বারা বাঙ্গালীর চরিত্র অল্পবিস্তর প্রভাবিত হয়। আর ছুরি, চাকু, রেস্তরা আর তাস পাশা যদি ভাষার সমৃদ্ধির প্রতীক হয় তো ভাষাও সমৃদ্ধ হয়েছে।
আঠার শতকে বাংলা যখন ফার্সি কর্তৃক পুরোপুরি কোনঠাসা তখন একই সাথে শত্রু(স্বাধীনতা হরণ, শাসন, বিবিধ শোষণ ও চরিত্র নষ্ঠ করায় ভুমিকার জন্য) ও বন্ধু(বাংলা ভাষার উন্নত ও বিকশিত হওয়ায় ভূমিকার জন্য) ইউরোপীয়ানদের দ্বারা বাংলার পুনর্জীবন ঘটে। ১৭৪৩ সালে পর্তুগীজ পাদ্রি ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও এর হাতে রোমান লিপিতে বাংলা ভাষার
১টি গদ্যগ্রন্থ ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ ও ১টি একই সাথে বাংলার প্রথম ব্যাকরণ ও অভিধান পুস্তক ‘ভোকাবুলারীও এম ইদিওমা বেনগল্লা ই পর্তুগীজ’ রচনা হওয়ার মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনে টারশিয়ারী যুগের সূচনা ঘটে যার বিস্তার ১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে বাংলার প্রথম প্রমিত/মানরূপ স্থির হওয়া পর্যন্ত। বাংলা ভাষার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের বাংলা ভাষায় যে তুমুল ভুমিকম্প ঘটে তার ফলেই হিমালয় পর্বতের মতো আমাদের প্রাণের বাংলা একটি বিকশিত ও উন্নত ভাষা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আঠার শতকের মাঝামাঝি থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই সময়ের ১৭৭৮ সালে নাথানিয়েল ব্রাশি হ্যালহেড ইংরেজিতে ‘এ গ্রামার অব দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামে বাংলাভাষার প্রথম পরিকল্পিত, পুর্ণাঙ্গ ও প্রথাগত ব্যাকরণ রচনা করে এ স্বর্ণ সময়ের সুচনা করেন। এ পুস্তকে ব্যবহৃত বাংলা অক্ষর তৈরীতে চার্লস উইলকিন্স ও পঞ্চানন কর্মকারের সহযোগিতা অবিস্মরনীয়।
এরপর বাংলার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। ক্রমান্বয়ে কয়েকটি ইংরেজি আইন গ্রন্থের অনুবাদের(১৭৮৫-১৭৯৩) পর ১৭৯৩ সালেই প্রথম ইংরেজি বাংলা দ্বি-ভাষিক পরিকল্পিত অভিধান ‘ই্ঙ্গরাজি ও বাঙ্গালি বোকেবিলরী(আপজন সাহেব)’, হেনরী পিট্স ফরস্টারের দুই খন্ড ইংরেজি-বাঙলা অভিধান(১৭৯৯,১৮০২), বাংলার অকৃত্রিম বন্ধু উইলিয়াম কেরির ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ(১৮০১)’ এবং ‘এ ডিকশনারী অব দি বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ (১৮১৫,১৮২৫)’, প্রথম ইংরেজিতে বাঙ্গালি ব্যাকরণ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য(১৮১৬), বাংলায় রচয়িতা রাম মোহন রায়ের ‘গৌরীয় ব্যকরণ(১৮৩৩)’,প্রথম বাঙ্গালি অভিধান রচয়িতা রাম কমল সেনের ‘এ ডিকশনারী ইন ইংলিশ এন্ড বেঙ্গলি(১৮৩৪)’ পাশাপাশি আরও প্রচুর ব্যাকরণ ও অভিধান পুস্তক রচিত হয়। এই সৃষ্টির ডামাডোল সংস্কৃতানুসারী বাংলার নিয়ম, বানান ও শব্দেররূপ প্রায় সুস্থিত করে দেয় যা আধূনিক বাঙলা মানভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ পর্যায়ে বাংলা ভাষায় বন্যার পানির মতো সংস্কৃত শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর মধ্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতবৃন্দের কাজ যেমন ১৮০১ সালে প্রকাশিত বাংলায় প্রথম মৌলিক গ্রন্থ ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ এর লেথক রাম রাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, উইলিয়াম কেরি, রাম মোহন রায়, অক্ষয় কুমার দ্ত্ত ও অন্যান্য আরও অনেকের চেষ্টায় বিকশিত হয় বাংলার প্রথম প্রমিত/মানভাষা সাধুভাষা।
১৮৬০ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচিত ‘সীতার বনবাস’এ সাধুরীতি একটি স্থির মানরূপ লাভ করে। এর পূর্বে ১৮৫৮ সালে এই মানরূপ স্থির হওয়ার আগেই প্যারিচাঁদ মিত্র তার ‘আলালের ঘরের দুলাল’ এর মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেও ১৯১৪ সালে আরেক ভাষাবিপ্লবী প্রমথ চৌধুরীর হাতে বাংলার জনপ্রিয় চলতিরূপ তথা ২য় মানভাষা স্থির হওয়ার মাধ্যমে এ বিদ্রোহ পূর্ণতা লাভ করে। অবশ্য এর আগের বছর অর্থাৎ ১৯১৩ সালে বাংলাকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন বাংলার কবি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এ গেল বাংলার জন্ম থেকে বাংলাকে একটি উন্নত, বিকশিত মানভাষায় পরিণত হওয়ার কথা। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলা যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপে, তাপে, শ্রমের ঘামে, রক্তে একটি রাষ্ট্র তথা জাতীয় ভাষায় পরিণত হয়েছে তাদের মুখের দিকে তাকাব।
উনিশ শতকে অবিভক্ত ভারতে জাতীয়তাবাদ বিকাশ লাভ করতে থাকে রামনিধি গুপ্ত(নানান দেশের নানান ভাষা), অতুল প্রসাদ সেন(মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা), বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখের জাতীয়তাবাদী চেতনায় সমগ্র ভারতবর্ষ তখন উজ্জীবিত, বঙ্গভঙ্গের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র বঙ্গ প্রদেশ উত্তাল। এমনি সময়ে ১৯০৬ সালে ভারতের জাতির জনক অহিংস আন্দোলনের উদ্যোক্তা, প্রাণপুরুষ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী(১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় দাদাভাই নওরোজি কর্তৃক সর্বপ্রথম কলকাতা কংগ্রেসে উত্থাপিত স্বরাজ অর্জনে) তাঁর Hind Swaraj or Indian Home Rule” শীর্ষক গ্রন্থে বিপুল ক্ষমতাধর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে Gandhi not only emphasized the importance of Indian vernaculars in the education of the masses, but used them directly as appropriate tools to fight for the independence of India’’(প্রস্ঙ্গত মনে রাখি গান্ধীর আহবানের বহুপূর্বে কাঙাল হরিনাথের প্রচেষ্ঠায় তাঁর নিজ গ্রামে বাংলার vernacular school প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ). তিনি ভারতের জাতীয় ও সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দির প্রস্তাব করেন একই সাথে লিখন পদ্ধতি হিসেবে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নিকট পরিচিত পার্সি বা দেবনাগরী লিপি গ্রহণের প্রস্তাব করেন। ১৯০৭ সালে আবারও তিনি ২য় দক্ষিণ আফ্রিকান ডেলিগেশনে তাঁর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। মহাত্মা গান্ধীর প্রচেষ্ঠা সত্ত্বেও ১৯১৫ সালের পূর্বে কংগ্রেসে এ সংক্রান্ত কোন বিতর্ক বা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়নি। যদিও চারদিকে আলোচনা সমালোচনা চলছিল।
১৯১৭ সালে তেলেগুভাষীরা পৃথক আঞ্চলিক কংগ্রেসের মাধ্যমে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুর্নগঠনের দাবী করে। এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জাতীয় ভাষা বিতর্কের আরম্ভ হয়। ১৯১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া কমন স্ক্রিপ্ট এন্ড কমন ল্যাঙ্গুয়েজ কনফারেন্সে গান্ধী তার ভাষণে হিন্দিকে সাধারণ ভাষা হিসেবে গ্রহণের উপর জোর দেন। যথারীতি বাংলার প্রতিনিধিরা ভারতের সবচেয়ে উন্নত, বিকশিত ও নোবেল জয়ী বাংলার উপর। ১৯২৫ সালে কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে মনোনিত করা হয়।
১৯৩৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের(প্রধানত ইরান, তুর্কি, আফগান প্রভৃতি প্রাক্তন বিদেশী শাসক গোষ্ঠির উত্তরাধিকারী অভিবাসী মুসলমান নেতৃত্বে গঠিত, এদের ভাষা উর্দু হওয়ায়) লক্ষে অধিবেশনে উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের(যেহেতু উক্ত প্রাক্তন বিদেশী শাসক গোষ্ঠির উত্তরাধিকারীগণ শুধু নিজেদেরকেই মুসলমান মনে করতো) ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির একটি প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বাংলার প্রতিনিধিদের প্রতিবাদের মুখে জিন্নাহ হস্তক্ষেপে প্রস্তাবটি পরে সংশোধিত আকারে গ্রহণ করা হয়। বাদ প্রতিবাদ, আলোচনা সমালোচনা থাকলেও পাকাপাকি ভাবে বিভক্ত হওয়ার সময় নিখিল ভারত কংগ্রেস হিন্দিকে ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে সুপারিশ করে। ১৯৩৭ সালে সুপন্ডিত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় সভাপতিত্বে ‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা সমন্ধে বিদ্বজ্জনের আলোচনা’ সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভ্ষা করা যায় কিনা, এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হয়। এরই মধ্যে ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তে বাংলা অনুষ্ঠান চালু করা হয়।
এ অনুষ্ঠান সর্বতোভাবে বাংলাভাষী জনসাধারণকে উজ্জীবিত করে আসছে। ভারত-পাকিস্তানের পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পরও এ জাতীয় আলোচনা সমালোচনা অব্যাহত ছিল। ১৭ মে, ১৯৪৭ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এবং পরবর্তীকালে পুর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর চৌধূরী খালেকুজ্জামান দাক্ষিণাত্যের হায়দ্রাবাদে আয়োজিত উর্দু সম্মেলনে(১৮ মে,১৯৪৭) ঘোষণা করেন, “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় ভাষা”, জুলাই ১৯৪৭ মাসে
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমদ এ মর্মে বিবৃতি দিলেন যে, “উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ”। অনতি বিলম্বে জুলাই ১৯৪৭ ‘আজাদ’ এ স্বনামে প্রকাশিত “পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা” শীর্ষক এক নিবন্ধে মহান শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সর্বপ্রথম ডক্টর জিয়া উদ্দিন আহমদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন এবং বলেন, -----“পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার ভাষা, অফিস আদালতের ভাষা বাংলা হবে। ” এবং রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবেও তিনি বাংলার দাবীকে অগ্রগণ্য বলে উল্লেখ করেন।
“যদি এর পরেও অন্য কোনও ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্ন আসে, শুধুমাত্র তা হইলেই উর্দুর কথা চিন্তা করা যাইতে পারে। ” ১৪ আগষ্ট ১৯৪৭ গভর্ণর শাসিত ব্রিটিশ কমনওয়েলথ হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপকদের উদ্যেগে প্রতিষ্ঠিত তমদ্দুন মজলিশ কর্তৃক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে প্রকাশিত “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু ?” ৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ইডুকেশনাল কনফারেন্সে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভ্ষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সুপারিশের প্রতিবাদে একইদিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অধ্যাপক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে একটি ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সেক্রেটারিয়েটের কর্মচারীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে প্রথম হরতাল পালন করে। একই মাসের শেষদিকে মুসলিম ছাত্রলীগের নেতৃস্থানীয় ছাত্র, গনতান্ত্রিক যুবলীগের (পরবর্তীকালে বিলুপ্ত) কর্মী এবং তমদ্দুন মজলিসের কর্মীরা উপস্থিতিতে “রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ” গঠন করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে এটিই সর্বপ্রথম সংগ্রাম পরিষদ। ভাষা আন্দোলন এই পর্যায়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের রুপ নেয়। ২৫ ফেব্র“য়ারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবী উত্থাপিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে সংগ্রাম চলতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ১১ মার্চ ১৯৪৮ প্রতিবাদ দিবস ও ২ মার্চ,১৯৪৮ তারিখে পুনর্গঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়।
এ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু(তখনও বঙ্গবন্ধু উপাধি পাননি) শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং অন্যান্য ছাত্রনেতাদের সাথে ভাষা আন্দোলনের প্রথম রাজবন্দি হিসেবে গ্রেফতার হন। ২১ মার্চ, ১৯৪৮ রেসকোর্স ময়দানে সম্বর্ধনায় এবং ২৪ মার্চ, ১৯৪৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে মিঃ জিন্নাহ যখন বলেন, So far as the State Language is concerned, Pakistan’s language shall be Urdu. তখন বাংলা ভাষার সমর্থকরা না’ না’ বলে প্রতিবাদ করেন। ব্যাপকতা ও গুরুত্বের কারণে ১৯৫২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ ১১ মার্চকেই ভাষা দিবস পালন করা হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সকাল ১১/১১.৩০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন চত্বরে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এম.আর আখতার মুকুলের প্রস্তাব ও কমরুদ্দিন শহুদের সমর্থনে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে মুহুমূর্হু রাষ্ট্র্রভাষা বাংলা চাই শ্লোগানের মধ্যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শামসুল হক ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আব্দুল মতিন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে বক্তৃতার শেষে সভাপতির ভাষণে গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। শামসুল হক ব্যক্তিগত ভাবে ছাত্রদের সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যের পরপরই আব্দুস সামাদ আজাদ এর প্রস্তাব মতে বিথ্যাত “দশজনী” ছাত্রের মিছিল শুরু হয়। ১ম “দশজনী” সত্যাগ্রহী দলের নেতৃত্ব দেন হাবিবুর রহমান শেলী। পর্যায়ক্রমে ইব্রাহিম তাহা ও আব্দুস সামাদ; আনোয়ারুল হক খান ও জনাব আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, ডঃ সাফিয়ার নেতৃত্বে সুফিয়া ইব্রাহিম, রওশন আরা বাচ্চু, শামসুন নাহারসহ ৪র্থ দলটি, এস এ বারী এটি ও আনোয়ার আজিম, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ ও সৈয়দ ফজলে আলী। মোহাম্মদ সুলতান দশজনী দলের সদস্যদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। পুলিশ ছাত্রের অবিরাম সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বেলা ৩.১০ টায় পুলিশ মেডিকেল কলেজের ব্যারাক হোস্টেলের গেটের ভিতরে প্রবেশ করে গুলি বর্ষণ করে।
ঘটনাস্থলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ ছাত্র আব্দুল জব্বার ও রফিকুদ্দিন শহীদ হন। হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ৯৬ জনকে ভর্তি করা হয়। সন্ধায় অপারেশন থিয়েটারে আহত ছাত্র আবুল বরকত(প্রথম গুলিবিদ্ধ) ও বাদামতলীর এক প্রেসের কর্মচারী আব্দুস সালাম মারা যান। শহীদদের রক্ত নিয়ে অনেক রাজনীতি হলেও অবশেষে শহীদদের স্বপ্ন ও ত্যাগ স্বার্থক হয় ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপি যুদ্ধে মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের ৩ ধারায় বাংলাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভূক্তিতে। ১৯০৬ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কে বাংলা ভাষার ইতিহাসের প্লাইস্টোসিনকাল হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আন্দোলনের সাথী, শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে কতটা অকুন্ঠ ছিলেন তা জাতিসংঘে তার প্রথম ভাষণে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্বসভায় ১ম বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাকে বাংলাদেশের প্রশাসনের ব্যবহারের জন্য আদেশ জারী করেন। স্বাধীনতার ২৮ বছর পর তাঁরই কন্যার শাসনামলে ১৯৯৯ সালে বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। আফ্রিকার একটি দেশ সিয়েরালিয়নে বাংলাকে সম্মানসূচক ২য় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু আমাদেরকে আরও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। যেমন, জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষারূপে বাংলাকে অন্তর্ভূক্তি, বিশ্ব অনলাইন লাইব্রেরীতে বাংলার অন্তর্ভূক্ত, ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সঠিক তথ্যের প্রয়োজনে তৎকালিন সময়ের সরকারী দলিলসমূহ উন্মুক্ত করা, হামিদুর রহমানের মূল নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা(বর্তমান শহীদ মিনার ১৯৫৬-১৯৬২ সময়ে হামিদুর রহমানের নকশার খন্ডিত বাস্তবায়ন, ১ম শহীদ মিনার বদরুল আলমের নকশায় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী তৈরী একং ২৬ ফেব্রুয়ারী ভাঙ্গা হয়), পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যান্য ভাষাভাষী ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও মত প্রকাশের ব্যবস্থা করা। এভাবেই বাংলা ভাষার জন্ম থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত যাদের রক্তে, শ্রমে বাংলা এরূপ লাভ করেছে তাদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখানো হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ইতোমধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর পর ২য়বারের মতো বাংলায় প্রদত্ত ভাষণের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাকে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। অবশিষ্টাংশ দ্রুত দৃশ্যমান হবে বলে আশা রাখি।
ঋণ স্বীকার
১। বাঙালীর ইতিহাস, সুভাষ মুখোপাধ্যায়
২। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, গাজীউল হক ও এম.আর. আখতার মুকুল
৩। ভাষা আন্দোলন, আহমদ রফিক
৪। একুশে ফেব্র“য়ারী আন্দোলন, আবুল কাসেম ফজলুল হক
৫।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ড. সৌমিত্র শেখর
৬। রাজার চিঠির প্রতীক্ষায়, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
৭। www.languageinindia.com
৮। www.gandhiserve.org
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।