মানবাধিকার কর্মী
রাজু আহমেদ ॥ স্বেচ্ছায় লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ ধরনের আত্মঘাতী লেনদেনের কারণেই বাজারে একের পর এক ধস নামছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) আওতাধীন ৬টি ব্রোকারেজ হাউসের কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের এক মাসের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাজারের নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী রবিবার লেনদেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে এসইসি।
বাজার সংশিস্নষ্ট সকল পৰের সঙ্গে বৈঠক করে পুনরায় লেনদেন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেন শুরম্নর পর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে অধিকাংশ শেয়ারের দরপতনের ফলে ডিএসই সাধারণ সূচক ৫৯৯ পয়েন্ট কমে যায়। এর ফলে তাৎৰণিকভাবে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে দিনের লেনদেন পর্যালোচনার পর প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক তৎপরতার প্রমাণ পাওয়ায় ৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এসইসি সদস্য মোঃ ইয়াসিন আলি সাংবাদিকদের জানান, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্বাভাবিক তৎপরতার কারণেই বৃহস্পতিবার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতনের ঘটনা ঘটেছে।
কমিশনের সার্ভিল্যান্স বিভাগ ওই সময়ের লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখেছে, কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়া হয়েছে। বাজারে অনাকাঙ্ৰিত পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যই এ ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। শেয়ার বিক্রির ৰেত্রে সন্দেহজনক প্রবণতার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় ৬টি ব্রোকারেজ হাউসের কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো_ আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ, পিএফআই সিকিউরিটিজ, এনসিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, আল আরাফা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ঢাকা ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউস এবং এ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজ।
পরিকল্পিত চেষ্টা ॥ নিজেরা লোকসান দিয়ে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এক বা একাধিক চক্র।
কোন কোন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক এ ধরনের প্রবণতার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। পুঁজিবাজারে একের পর এক বড় দরপতনের ঘটনায় বেশ কিছুদিন ধরেই কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ও বড় বিনিয়োগকারীর তৎপরতার প্রতি নজর রেখেছিল এসইসি। বৃহস্পতিবার মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে অভাবনীয় দরপতনের পর কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের নেতিবাচক ভূমিকা সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা একটায় লেনদেন শুরম্নর পরপরই কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে বাজার দরের চেয়ে অস্বাভাবিক কম মূল্যে শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া বিক্রয় আদেশে আগের দিনের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম মূল্য বসানো হয়।
এ কারণে লেনদেন শুরম্নর মুহূর্তেই ৮০টি কোম্পানির শেয়ারের দর এক লাফে ১০ শতাংশের বেশি কমে যায়। এছাড়া ৬৭টি শেয়ারের দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। এর প্রভাবে একদিনে সূচকের সর্বোচ্চ হ্রাস-বৃদ্ধির সীমা কার্যকর হওয়ার আগেই ৫৯৯ পয়েন্ট কমে যায় ডিএসই সাধারণ সূচক। এর আগে বুধবার ডিএসই সাধারণ সূচক ২২৫ পয়েন্টের বেশি হ্রাস পায়।
দিনের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোন একটি কোম্পানির শেয়ারের আগের দিনের মূল্য ছিল ১৫৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরম্নতে এই শেয়ারের ক্রয়াদেশ ছিল সর্বোচ্চ ১৫৭ টাকায়। কিন্তু এই দরে শেয়ার বিক্রি না করে একাধিক ব্রোকারেজ হাউস থেকে ১৫৫ টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়া হয়। এরপর একই শেয়ারের বিক্রির আদেশ দেয়া হয়েছে ১৪৮ টাকায়। বাজারে বেশি দরে ক্রেতা থাকলেও কম দরে শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়ার প্রবণতাকে পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে ধস নামানোর প্রচেষ্টা বলে মনে করছে এসইসি। এ ধরনের সন্দেহজনক প্রবণতার কারণেই ৬টি ব্রোকারেজ হাউসের কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ৬টি ব্রোকারেজ হাউস ও এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- পর্যালোচনা করে আরও কঠোর শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও কোন কোন ব্যক্তির সন্দেহজনক প্রবণতাও চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের পর তাদের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসইসি সদস্য ইয়াসিন আলী সাংবাদিকদের জানান, ছয়টি ব্রোকারেজ হাউস থেকে দিনের শুরম্নতে অত্যধিক বিক্রির চাপ (এগ্রেসিভ সেল প্রেসার) লক্ষ্য করা গেছে।
ইতোমধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য জানার জন্য শুনানির চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৫ মিনিটেই লেনদেন বন্ধ ॥ ব্যাপক দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবারও দেশের দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। একদিনে সূচক পতনের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করায় লেনদেন শুরম্নর পর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জ (ডিএসই) এবং ১১ মিনিটের মধ্যে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
আগের দিন নির্ধারিত সময়ে লেনদেন চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারের লেনদেনের সময় কমিয়ে দু'ঘণ্টায় নামিয়ে আনার প্রসত্মাব করে ডিএসই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি এই প্রসত্মাব অনুমোদন করায় বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যনত্ম লেনদেন চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু লেনদেন শুরম্নর পর প্রথম ৫ মিনিটেই ডিএসই সাধারণ সূচক ৫৯৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। ফলে সূচক পতনের (সার্কিট ব্রেকার) সর্বোচ্চ সীম হিসেবে নির্ধারিত ২২৫ পয়েন্ট অতিক্রম করায় ৬ মিনিটের মাথায় লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময় পর্যনত্ম লেনদেন হওয়া ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭২টির দরই আগের দিনের চেয়ে কমে যায়। এর বিপরীতে বৃদ্ধি পায় ৮টির এবং অপরিবর্তিত থাকে দু'টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর।
আর্থিক হিসাবে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
রবিবার লেনদেন বন্ধ থাকবে ॥ শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী রবিবার দুই স্টক এঙ্চেঞ্জে লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসইসি। সোমবার লেনদেন হবে কিনা_ বাজার সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও কমিশনের পৰ থেকে জানানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।