আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের দিন। আজ থেকে ৭২ বছর আগে ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কবিগুরু চলে যান না ফেরার দেশে। দেড়শ বছর আগে ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্যকে স্বদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিসরে তুলে ধরার কৃতিত্ব দেখান তিনি। কবিগুরু বাঙালিকে আপন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। ঔপনিবেশিক সেই যুগে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করে তিনি বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির মর্যাদা যে উচ্চতায় নিয়ে যান তা ছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগ পর্যন্ত বাংলাভাষীদের সেরা অর্জন। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম বাঙালিই শুধু নন, এশিয়া মহাদেশে তার আগে কেউ এই মর্যাদায় নিজেকে অভিষিক্ত করতে পারেননি। জাতি হিসেবে বাঙালির উত্থানে রবীন্দ্রনাথ অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি যে আত্দবিশ্বাস বাঙালির মননে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন তা বাঙালিকে হার না মানা মনোভাবে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে। কাপুরুষতা, কূপমণ্ডূকতা থেকে বাঙালিকে বেরিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধও করেছেন রবীন্দ্রনাথ। ইতিহাস প্রমাণ করে আড়াই হাজার বছর আগেও পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পাড়ের এই ভূখণ্ডের মানুষ আত্দপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে বিদেশি শাসন ও বঞ্চনার ঘটনা বাঙালির পরিচয়কে নিষ্প্রভ করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাঙালিকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করেন। কবিগুরুর নোবেল পুরস্কার অর্জন বাঙালির আত্দবিশ্বাসে যে জোয়ার সৃষ্টি করে তার মহিমাময় প্রকাশ ঘটে প্রায় ছয় দশক পরে। এ আত্দবিশ্বাস একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বাঙালিকে অস্ত্র ধরতে শেখায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন রবীন্দ্র-ভাবনার একনিষ্ঠ অনুসারী। রবীন্দ্রনাথের জন্ম কলকাতায় হলেও তার পূর্বপুরুষদের বসবাস ছিল বাংলাদেশের খুলনায়। তার মাতুলালয় ও শ্বশুরবাড়িও ছিল খুলনায়। সেই অর্থে তিনি আমাদের আত্দার আত্দীয়। রবীন্দ্রনাথ মনুষ্যসত্তার বিকাশকে কাঙ্ক্ষিত মনে করতেন। বাঙালি মানুষ হয়ে উঠুক এটি ছিল তার ঐকান্তিক কামনা। আজ আমরা যখন জাতি হিসেবে বিশ্বপরিসরে জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি, তখন রবীন্দ্রনাথই হতে পারেন আমাদের আকাশছোঁয়ার আদর্শ। মানবতাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি আমাদের জন্য বাতিঘর হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। কবিগুরুর ৭২তম মহাপ্রয়াণ বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।