আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোনাক জ্বলে



চিৎকার চেচামেচি করছে ছেলেদের পাল। পাঁচ-সাতজন হবে। পালের গোদাটার নাম নুরুল। নুরুলের হাতে একটা স্বচ্ছ প্লাষ্টিকের কৌটা। কৌটার ভিতরে একটা জোনাকি।

জোনাকিটা ক্ষুব্ধ ছেলেগুলির উপর। 'গর্দভ ছেলেগুলি। আমি তো এখানে থাকলে মরে যাবো। কৌটার ভেতরে কি বাতাস ঢোকে? বাতাস না ঢুকলে আমি অঙ্েিজন পাব কোত্থেকে?' কৌটার ভেতরে জোনাকি চেচিয়ে বললো। জোনাকিটি যে শুধু ক্ষুব্ধ তা-না।

ওর বেশ মনও খারাপ। ওর একশ ছেলেমেয়ে। না জানি ওরা কি করছে। নিজের উপর নিজের মেজাজ খারাপ হলো। কেন যে এই মানুষের বসত্দিতে সে খাবার খুঁজতে এসেছিলো! নুরুলের সাথে যে ছেলেপুলেগুলি তারা কেউই ঠিকমতো পড়াশোনা করে না।

সবাই পড়ে ক্লাস টু কি থ্রিতে। কিন্তু পড়ায় ওদের মন নেই। দিনে তো পড়েই না। রাতেও পড়ে না। মা-বাবার কথা শোনে না।

রাতে কতগুলি জোনাকি এসেছিলো ওদের পাড়ায়। একটাকে ধরে ওরা এখন হৈ চৈ করছে। আমন দুষ্টগুলির সাথে নেই। দিনে ওর পড়তে ইচ্ছে করে না। তবে মা বললে ও দিনেও পড়তে বসে।

আর রাতে তো বসেই। সন্ধা হলেও ও হাত পা ধুয়ে পড়তে বসে। আজ পড়তে বসেও পড়তে পারছে না। দুষ্ট ছেলেগুলি ঘুরে ফিরেই ওদের ঘরের সামনে আসছে। হৈ চৈ করছে।

ওদের একটাই ঘর। এখানেই ও পড়ে। মা বাবার সাথে এখানেই ঘুমায়। আমন বাইরে বের হলো। ওরা কি করছে দেখা যাক।

একটু পরেই দুষ্ট ছেলেগুলি এদিকে এলো। 'কিরে আমন খেলা দেখবি?' নুরুল বললো। 'কি খেলা?' 'দেখ ডিব্বার বিতরে বাত্তি জ্বলে। ' নুরুল ওকে দেখালো। প্লষ্টিকের কৌটাটার ভিতরে জোনাকিটা জ্বলছে নিভছে।

আমনের মন খারাপ হলো। জোনাকিটাকে ওরা কৌটার ভিতরে আটকে রেখেছে। কৌটায় কোন ছিদ্র নেই। বাতাস ঢুকবে না। এভাবে থাকলে তো জোনাকিটা একটু পরে মরে যাবে।

'নুরুল এইটার বিতরে থাকলে জোনাকটা এট্টু পরে মইরা যাইবো। আল্লায় গুনা দিবো। জোনাকটারে ছাইরা দে। ' 'আরে মামার দেহী দরদ লাগছে? মামা জোনাক বেঁচমু কিনবা নি?' আমন কিছু বললো না। নুরুলের সাথে কিসমত।

কিসমত বললো,'মামা পাঁচটা টেকা দেও। আমরা গিয়া চকলেট খাই। তুমি জোনাক লইয়া যাও। ' আমনের সত্যিই ইচ্ছে করছে পাঁচ টাকা দিয়ে জোনাকিটা কিনে নিয়ে ছেড়ে দিতে। কিন্তু ওর কাছে পাঁচ টাকা নেই।

অংক পরীক্ষ্যা দিতে যাওয়ার সময় মা দুই টাকা দিয়েছিলো। সেই দুই টাকা আছে। 'আমার কাছে পাঁচ টেকা নাই, দুই টেকা আছে। ' 'দুই টেকা থাকলে তো মামা কাম অইতো না । তুমি মামা যাওগা।

আমরাও ফুটি। হি হি হি হি। ' হৈ চৈ করতে করতে ওরা চলে গেলো। মন খারাপ করে আমন বাসায় ফিরে এলো। খাটের উপর পড়তে বসলো।

পড়ায় মন বসছে না। জোনাকিটা মারা যাচ্ছে। ও কিছু করতে পারছে না। ও মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষন পর দুষ্ট ছেলের দল ঘুরে ফিরে আবার এলো।

জানালা দিয়ে ডাকলো। 'ওই আমন। ' 'কি?' 'দে, টেকা দে। ' আমন তাড়াতাড়ি ওর স্কুলের ব্যাগ থেকে দুই টাকা বের করে দিলো। নুরুল ওকে জোনাকির কৌটাটা দিয়ে হৈ চৈ করতে করতে চলে গেলো।

আমন দ্রুত কৌটার মুখটা খুলল। কৌটার ভিতরের অঙ্েিজন ততক্ষনে শেষের পথে। ভেতরের জোনাকিটার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ও ভাবছিলো ও মরে যাচ্ছে। হঠাৎ বাতাসের ঝাপটা পেয়ে প্রণ ভরে নি:শ্বাস নিলো।

'ওহ বেঁচে গেলাম। দেখি তো কে বাঁচালো আমাকে। ' উড়ে কৌটা থেকে বের হলো জোনাকি। বারে বারে জ্বলতে নিভতে লাগলো আনন্দে। 'তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

' আমনকে ধন্যবাদ জানালো জোনাকি। তারপর জোনাকিটা উড়ে উড়ে উড়ে বেতের ঝোপে চলে গেলো। ওর ছেলেমেয়েদের কাছে। ২ আমনদের বার্ষিক পরীক্ষ্যা শেষ হওয়ার অনেকদিন পরের কথা। রোজা আসি আসি করছে।

রোজার আগে শবে-বরাত এসেছে। শবে বরাতের রাতে শহরের বাড়িতে বাড়িতে ছেলেমেয়েরা মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘর সাজিয়েছে। তারাবাতি নিয়ে খেলছে। অনেকে শবে-বরাতের ঘর বানিয়েছে। আমনের খুব ইচ্ছে হলো ওদের ঘরটাতেও অনেক মোমবাতি জ্বালাতে।

তারাবাতি নিয়ে খেলতে। কিন্তু ওদের তো টাকা অ-নে-ক কম। মোমবাতি,তারাবাতি কেনার টাকা পাবে কোথায়? আমন ওর মাকে বললো। মা বললেন,'সোনা, তোমার বাবা এলে কিনে দেবো। ' বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

সেদিন রাতে আমন মন খারাপ করে ঘুমুতে গেলো। স্বপ্নে দেখলো অনেক মোমবাতি দিয়ে ও ওদের ঘর সাজিয়েছে। আর একটা জোনাকি পোকা ওকে ডাকছে, 'আমন আমন। ' আমন চোখ খুলে তাকালো। ওর সামনে একটা বড় জোনাকি পোকা।

জ্বলছে আর নিভছে। ও-ই কি ওকে ডেকেছে? আমন ঘরে তাকিয়ে দেখলো হাজার হাজার জোনাকি পোকা ওদের ঘরে। জ্বলছে নিভছে। মোমবাতি জ্বালিয়ে সাজালে যেমন হতো তার চেয়েও সুন্দর দেখাচ্ছে ওদের ঘরটা। বড় জোনাকি পোকাটা ওকে বললো,'আমন তোমার ভালো লাগছে।

?' 'আমার খুব বালা লাগতাছে। অনেক আনন্দ লাগতাছে। ' 'তুমি কি আমাকে চিনেছ আমন?' 'না তো। ' 'ওই যে আমাকে তুমি বাঁচিয়ে দিয়েছিলে দুষ্ট ছেলেদের হাত থেকে। ' 'ও আচ্ছা, চিনতে পারছি।

' 'আজ সন্ধায় দেখলাম তোমার অনেক মন খারাপ। মোমবাতি জ্বালাতে পারোনি। তারাবাতি নিয়ে খেলতে পারোনি। তাই সবাইকে নিয়ে এলাম আজ। তোমার ঘর আলো করতে।

আর তোমাকে নিয়ে খেলতে। ' ঐ রাতটা আমনের কাটলো খেলতে খেলতে। শবে বরাতের রাতে যারা রাত জেগে ইবাদত করে তাদের অনেকেই ওদের বাড়িতে ঝলমলে আলো দেখলো। সবাই ভাবলো ওরা বোধহয় অনেক মোমবাতি জ্বেলেছে। কেউ তো আর জানেনা ওদের বাসায় সারারাত জোনাকিরা জ্বলেছে।

# শরীফ উদ্দিন সবুজ ১০-১২-২০১০ ০১৯১৩৩৯৮২২০

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।