ক্লান্তি মোর ক্ষমা কর প্রভু
এই যুবতী বড্ড সেকেলে। বয়সের সাথে সাথে দেহে যৌবন এল বটে কিন্তু সে টের পেল না। তার জগতের মানুষগুলোও কেমন জানি অদ্ভুত। কেউ তাকে এই ব্যাপারে এতটুকু সর্তক পর্যন্ত করল না। আর তাই সে তার ছয় বছর বয়সের পৃথিবীতেই আটকে ছিল।
সবার সাথে কথায় কথায় আড়ি দিত, একটু ধমক দিলেই কেঁদে বুক ভাসাত আবার কিছুক্ষণ পরেই তাকে দেখা যেত বেণী দুলিয়ে ছড়া কাটতে।
হঠাৎ একদিন এক ভিনদেশি জাদরেল লেখক এলেন তার শহরে। সবার সাথে সেও গেল একনজর তাঁকে দেখবে বলে। লেখক তখন তার গল্পের নতুন নায়িকার খুঁজে ব্যস্ত। এত ভীড়ের মাঝেও তাঁর নজর কি করে জানি এই যুবতীর দিকেই গেল।
হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই চরিত্রের জন্যে এমন একটি মেয়েই দরকার।
যুবতীকে সামনে ডাকা হলে সে ভয়ে সিধিয়ে গেল। সে আর্তনাদ করে বলে উঠল,“না না, আমি অভিনয় পারি না। আমি নাটক করব না। ”
তবু সবাই মিলে টেনেহিঁচড়ে তাকেই মঞ্চে তুলল।
লেখক নিজে নাটকের মহড়ায় অংশ নিলেন। নিজ হাতে তিনি তাকে পরিপূর্ণ যুবতীর দীক্ষা দিলেন। নাটক স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলল।
শুধু কেউ জানল না পৃথিবীর এই নতুন রূপে অনভ্যস্ত যুবতীটি আড়ালে কত কেঁদেছে। জানবেই বা কি করে! শ্রাবণের জলধারা এসে যে তার চোখের সব জল ধুয়ে দিয়ে গেছে।
একটা সময় দেখা গেল হঠাৎ পূঁজার প্রসাদ কারো থালায় একটু বেশিই পড়তে লাগল।
যদিও কেউ টের পেল না কিন্তু আর কেউ দেখুক বা নাই দেখুক উপর থেকে কেউ একজন হয়ত একটু মুচঁকি হাসি দিত।
দিনে দিনে সে নাটকের এত ভিতরে ঢুকে গেল; এতই অভ্যস্ত হয়ে গেল এই নোংরা পৃথিবীর জীবনধারায় যে সে নিজেও টের পেল না কবে সে তার নতুন পৃথিবীতে লেখককে দিল অবাধ বিচরণের অধিকার। ঠিক কখন পূঁজার ফুল তার দেবতার পদস্থলে না দিয়ে মালা বানিয়ে পরিয়েছিল লেখকের গলায় তার হিসেব তার জানা নেয়। কিন্তু বিধাতা হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন এইবার একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আর তাই তো আবার হঠাৎ একদিন অভিনয় শেষে আচমকা লেখক তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, “নাটক শেষ,বাড়ি যাও। ”
যুবতীর এতদিনের শ্রমে গড়া তাসের ঘরটা বুঝি এই বার ভাঙ্গল!
সে অবাক হয়ে ভাবল তবে এসবের সবকিছুই কি ছিল শুধু নাটকের অংশ?এতদিনের এত আয়োজন, এত ত্যাগ, এত মায়া সবই কি ছিল শুধুমাত্র একটি নাটকের জন্যে?
তার প্রশ্নের উত্তর দিবে কে? লেখক যে ততোক্ষণে যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন।
তার এই দেবতুল্য মানবকে নাটকের ছলে আর কিছুদিন পূঁজা করবে বলে সে কত কাকুতি মিনতি করল। কিন্তু তিনি আর নাটক বড় করতে রাজী হলেন না। এই নাটকে তাঁর একঘেয়েমী এসে গেছে, তাঁর নতুন গল্প চাই।
বড় শহর থেকে তাঁর ডাক এসেছে। তাহলে তিনি কেন আর পড়ে থাকবেন এই ছোট শহরের অন্ধ গলিতে?কিসের আশায়?
আর তাই তো দলবদল নিয়ে তিনি চললেন নতুন এক শহরে, নতুন কোন গল্পের নতুন কোন নায়িকার খোঁজে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।