বিপ্লবী : ভার্চ্যুয়াল পৃথিবীর
মেঘমুক্ত রাতের আকাশে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর যে আলোকিত পথ দেখা যায় তাই ছায়াপথ। স্টালিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছায়াপথটিকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছিল। স্টালিনের মন আজ খুবই খারাপ। এক অজানা বিষন্নতা তার মনের ভেতর তোলপাড় ঝড় সৃষ্টি করে দিয়েছে। সে আকাশের দিকে বিভোরভাবে তাকিয়ে আছে কিন্তু আকাশ দেখতে পাচ্ছে না।
কারণ স্টালিনের ভাবনা আকাশের কোন উজ্জল নক্ষত্র নিয়ে নয় সে ভাবছে গত রাতে ঝোঁপের ভিতরে থাকা মেরিনের বিভৎস চেহারার কথা। মেরিনের উরু পর্যন্ত নগ্ন। বুকের উপর কোন কাপড় ছিল না। মুখে মানুষের নখের আচড়। চুলগুলো এলোমেলো।
সে জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিল এক নিঃস্তদ্ধ আধারের নির্জন ঝোঁপের মধ্যে। এক প্রতারক প্রেমিকের প্ররোচনায় মেরিন নিজেকে ভুলে গিয়েছিল। শয়তান সে প্রেমিক সুযোগ বুঝে মেরিনের সর্বনাশ করেছে। এ জন্য মেরিন আজ খুবই অনুতপ্ত। নিজের জীবনকে মেরিন আজ অর্থহীন মনে করে।
সে যেন এই হিংশ্রায়ী নিষ্ঠুর পৃথিবীর অন্যতম দুঃখী মানুষ। অথচ মেরিনেরই বা কী করার ছিল। শয়তানকে চেনা যায় কিন্তু মানুষ রুপী শয়তানকে চেনা খুব কঠিন। স্টালিন তাই ভাবছিল আর নিজেই নিজেকে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করছিল। মেরিন যদি একটু সচেতন হতো তাহলে কী এই অযাচিত ঘটনাটা ঘটতে পারতো ? কিংবা সে সময় কী মেরিন নিজেকে রক্ষা করার জন্য চিৎকার করতে পারতো না ? আর স্টালিন এই বিষয়টা নিয়ে এত ভাবছেই বা কেন ? স্টালিন মহাকাশ গবেষক ।
তার বর্তমান গবেষনার বিষয় ”মিল্কওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রাণের সন্ধান” তবে সে মেরিনের বিষয়ে এত ভাবছে কেন ? তবে কী নিজের অজান্তে কখনও, না....না এরকম ভাবা তার জন্য ঠিক নয়। স্টালিন তার মূল ভাবনার বিষয়ে ফিরে যায়। এবার সে আকাশ দেখতে পাচ্ছে। আকাশের উজ্জল রহস্যাবৃত ছায়াপথ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । একটি ছায়াপথের ব্যাস ১ লক্ষ আলোক বছর।
যার ভেতর রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্র, নক্ষত্র গুলোর রয়েছে অনেক গুলো গ্রহ। গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীতে রয়েছে বুদ্ধিমান প্রানী মানুষ । মানুষের প্রসঙ্গ আসতেই স্টালিরেন আবার মেরিনের কথা মনে পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্টালিন মেরিনকে কীভাবে সান্তনা দিতে পারে ? মেরিনের জীবনকে পুনরায় অর্থবহ করে তুলতে স্টালিন কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারে। শেষ পর্যন্ত তবে কি মেরিনের জন্য সে কিছু করতে পাররে না! স্টালিন আর কিছু ভাবতে পারছে না।
আকাশে মেঘ দেখাদিয়েছে। ছায়াপথটাকে আর আগের মত দেখা যাচ্ছে না। স্টালিন এবার তার ঘরে ফিরে এসে একটি ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। কল্পনার সিডি বেয়ে সে আবার ছায়াপথের কথাই চিন্তা করতে শুরু করলো। আমাদের সূর্য যদি নক্ষত্র হয় এবং চারপাশের গ্রহগুলির একটি মধ্যে বুদ্ধিমান প্রানী থাকে তাহলে নিশ্চয় ছায়াপথের কোটি কোটি নক্ষত্রের আরো একটির মধ্যে মানুষের মত প্রানী রয়েছে।
হঠাৎ স্টালিন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আর উচ্চস্বরে বলতে থাকে। মহাবিশ্বের আর কোন জায়গায় মানুষের মত প্রাণী থাকার প্রয়োজন নেই, তাহলে সেখানেও মেরিনের মত অসহায় মানুষেরা নির্যাতিত হবে। দুঃখে কষ্টে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইবে। না এ যেন কোন কালে সম্ভব না হয় ।
এমন সময় স্টালিনের পাশ থেকে মেরিন জোরে জোরে ধাক্কা দেয়। স্টালিন ঘুম থেকে জেগে ওঠলে মেরিন বলে কি কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছ । স্টালিনের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে হতভম্বের মতো মেরিনকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে হ্যাঁ দুঃস্বপ্ন। খুব কঠিন দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
স্টালিন মেরিন কে প্রশ্ন করে এখন রাত কয়টা বাজে ? মেরিন উত্তর দেয় ২টা বাজে। স্টালিন আবার প্রশ্ন করে আজ কত তারিখ ? মেরিন আহলাদের সুরে উত্তর দেয় আজকের তারিখটা তোমার মনে নেই। বিজ্ঞানীদের এই যা দোষ। আজকের দিনেই তুমি আমাকে গ্রহন করে নতুন জীবন দিয়েছিলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।