যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
গত ৪ বছর ধরে বেকার কিরণ । ঢাকা এর এক নামকরা ইউনিভার্সিটি থেকে মাষ্টার্স পাশ করেছে সে । এরপর থেকে সে একরকম বসেই আছে বাসায় । কত শত ইন্টারভিউ দেয়া হয়েছে কিন্তু কোনাটাতে কিরণ এর ঢোকার কোন ইচ্ছে নেই । কি এক অজানা কারণে কিরণ চাকরি করতে চায় না ।
এদিকে সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তার । পরিবারের সবাই চিন্তিত তাকে নিয়ে ।
এদিকে কিরণ এর প্রেমিকা জয়া সমানে চাপ দিচ্ছে কিরণ কে কোন একটা চাকরি তে ঢোকার জন্য । এ নিয়ে কোন ভ্রক্ষেপ নেই কিরণ এর । তাই সমানে ২ জন এর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে ।
জয়া কিরণ এর থেকে ৫ বছর এর ছোট । সে চায় চাকরি নিয়ে কিরণ, তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসুক ।
জয়া এর বাসায় কিরণ এর ব্যাপারটা কেউ জানে না । এতদিন গোপন করে রাখা হয়েছিল কিন্তু এখন আর গোপন রাখা হয়ত বেশিদিন যাবে না । কারণ জয়ার পরিবার তার জন্য পাত্র খোজা শুরু করেছে ।
দিন রাত খুব চিন্তিত থাকতে হয় জয়া কে তাই । এদিকে সমানে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ে বেরাচ্ছে কিরণ ।
এভাবে করে মাস পেরিয়ে বছর গড়াতে লাগল । তাদের মধ্যে আগের মত সেই মধুর সম্পর্ক এখন আর নাই । আগে যেখানে ১ দিন কথা না বলে থাকতে পারতো না কেউ আর এখন ১ মাস কথা না বললেও চলে !! কিরণও এখন জানি কেমন হয়ে গিয়েছে ।
এদিকে সবাই একটা বেপার লক্ষ করেছে । সপ্তাহের ২ দিন সে ঢাকা থাকে না ।
কেউ বুজতে পারে না সে আসলে কই যায় । যাওয়ার সময় মোবাইলটাও বন্ধ করে যায় । কেউ তাকে খুজে পাই না তখন ।
পরিবারের সবাই চিন্তত এটা নিয়ে । এদিকে জয়া ও কিছুই জানে না । এভাবে কাউকে কিছু না জানাতে জানাতে একদিন ধরা পরে যায় কিরণ তার ছোট ভাই এর কাছে ।
ছোট ভাই কে কিরণ সব খুলে বলে । আসলে কিরণ অনেক আগেই বিয়ে করেছে ।
কাউকে কিছু না জানিয়েই । সপ্তাহের ২ দিন সে ঢাকা এর বাহিরে তার বউ এর সাথে দেখা করতে যায় । সব কথা শোনার পর কিরণ এর ছোট ভাই খুব অবাক হয় । কারণ সে খুব ভাল মতই জানে তার বড় ভাই আর একটা মেয়েকে ভালবাসে ।
এ অবস্থায় কি করা উচিত তা ২ ভাই মিলে বের করে পারছে না ।
এদিকে ক্রমাগত চাপে ফেলে দিয়েছে কিরণ কে জয়া । ১ সপ্তাহের ভিতর যদি বিয়ের প্রস্তাব না নিয়ে আসে তাহলে জয়া তার পরিবারের অবাধ্য আর হতে পারবে না । ক্রমাগত এমন চাপে থাকতে থাকতে কিরণ অসহ্য বধ করতে থাকে । আর কত !!!
অনেক ভেবেচিন্তে কিরণ একটা প্ল্যান করে ফেলে । সে অনুযায়ী সেদিন রাতে সে জয়া কে ফোন দিয়ে বলে যে তারা পালিয়ে বিয়ে করবে ।
জয়া এতে মহা খুশি হয় । তবে জয়াকে কিরণ বলে হাতে কিছু টাকা পয়সা আর গহনা যা আছে নিয়ে আসতে ব্যাগ এ করে । তারপর তারা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবে দূরে কোথাও । জয়া সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে থাকে ।
আর এদিকে সব কিছু গুছাতে থাকে কিরণ ।
যেদিন তাদের পালিয়ে যাওয়ার কথা সেদিন কিরণ জয়াকে ফোন করে জায়গা বলে দেয় কোথায় আসতে হবে । সে রকম ভাবেই তৈরি হয়ে জয়া হাজির হয় সেখানে । কিন্তু তখন ও কিরণ এসে পৌছায় নাই । তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে । অনেক সময় পর কিরণ আসে তবে সাথে আরো ২ জন কে নিয়ে ।
জয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই সেই ২ লোক তাকে জোর করে নিয়ে জেতে চায় । কিরণ তখন জয়াকে বলে তুমি এতদিন যাকে ভালবেসেছো যে বিবাহিত । আর সে তোমাকে কোনদিন ভালবাসে নি । আর এই লোকগুলো তোমাকে নিয়ে যেতে চায় তাদের কাছে । তারা ২ জন হল নারী পাচারকারী ।
জয়া সব কিছু বুঝে যায় তখন । আর এদিকে টাকা পয়সা নিয়ে কিরণ চলে যায় সেখান থেকে ।
শত কান্নাকাটি করেও সে কিরণ এর মন গলাতে পারে না । অনিশ্চিত এক যাত্রা তার সামনে পরে যায় । তার চোখের সামনে তার মায়ের চেহারা ভেসে আসতে থাকে ।
বাবার করুণ আকুতি ভরা চেহারা তাকে আরো কাহিল করে তুলে । পরিবার, আত্তীয়। বন্ধু বান্ধব যারা আছে সবার কথা একবার করে হলেও তার চোখের সামনে ভেসে আসে ।
কি দোষ করেছিল সে যে কিরণ তাকে এমন করে বিপদে ফেলে চলে গেল ?? সে তো কিরণ কে ভালবাসতো অনেক বেশি ?? অথচ কিরণ তাকে আজ ফেলে চলে গেল !! কিরণকে চাইলেও সে পাবে না । কিরণ এখন অনেক দূরে চলে গিয়েছে তাকে রেখে ।
প্রতারণা করে কিরণ পার পেয়েছে কিন্তু জয়া প্রতরণার শিকার হয়েছে ।
সব কিছু কেমন যেন অন্ধকার হতে থাকল জয়ার সামনে । ঝাপসা হতে থাকলো জয়ার চোখ । আসতে আসতে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকল সে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।