অর্থনৈতিক প্রতারণা কিংবা জোচ্চুরির ইতিহাস অনেক পুরোনো, নতুন নামে, নতুন সাজে উপস্থিত হয় এইসব প্রতারণা- হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়া হুন্ডি কাজলের কাছে প্রতারিত মানুষ যখন তাদের ক্ষতির অঙ্কটাকে হাজার কোটি টাকার ঘরে নিয়ে যায়, তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার।
হাজার কোটি টাকা, যেকোনো বিচারেই বিশাল একটি অঙ্ক, তবে এমন লাভের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ইতিহাস অর্থনীতিতে কম নেই। বাংলাদেশে এমন অনেক কোম্পানী এসেছে, যারা প্রতারণা করেছে, লাভের টাকা দিবে গৌরী সেন, বললে এমনই শোনায় বিষয়টা, তবে বেশীর ভার প্রতারণা চক্র আসলে অনেকগুলো মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠে।
সেখানে নতুন সংযুক্ত হওয়া মানুষদের টাকা দিয়ে পুরোনো পাওনাদারদের টাকা শোধ করা হয়, এই সময়ের ভেতরে নতুন আরও কিছু মানুষ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়।
মুখরোচক বিজ্ঞাপণ থাকে এসবের, মাত্র ১ মাসে টাকা দ্বিগুণ করুন, ৮ সপ্তাহে আপনার জমা দেওয়া অর্থের দ্বিগুণ ফেরত নিয়ে যান।
মানুষ লোভী, মানুষের লোভের রিপুতে সুরসুরি দিলেই মানুষ পঙ্গপালের মতো প্রতারিত হতে ছুটে আসে। মাত্র ১০০০ টাকা জমা দিলে মাস গেলে ২০০০ টাকা, কোনো পরিশ্রম করতে হবে না। এই প্রলোচন এড়ানো কঠিন।
সুতরাং মানুষ প্রথমে ১০০০ টাকা দিয়ে শুরু করে, পরের মাসে তার জমা হয় ২০০০, এরপরের মাসে সেটা হয় ৪০০০, এইভাবে বাড়তে বাড়তে সেটা মাত্র ১ বছরে ২০ লক্ষ টাকায় পরিণত হয়, সুতরাং হুন্ডি কাজল যে এক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব হলেও এটাই বাস্তব সত্য। প্রকৃতপক্ষে দেখা যাবে প্রতারিত হয়েছেন সবাই, যারা লাভের লোভ থেকে নিজেকে বিরত রেখে প্রথম বারেই সরে আসতে পেরেছেন তারাই মূলত জয়ী।
তবে সবচেয়ে বেশী প্রতারিত হয়েছেন যারা একেবারে শেষে টাকা দিয়েছেন।
সুতরাং একজন মানুষ ১০০০ টাকা দেওয়ার ৬ মাস পরে দাবী করতে পারেন তার প্রায় ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে, এমন কি ৮ মাস পরে তিনি যদি বলেন তার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছে, সেটাও বক্তব্য বিবেচনা করতে সত্যই। এই একই ঘটনা ঘটবার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যপক ধ্বস নেমেছে এবং এই ধ্বস আর মন্দায় আক্রান্ত পৃথিবীর অর্থনীতির গতি।
প্রতারণার ভেতরেও চমক থাকতে হয়, প্রেসিডেন্টস ক্লাবের সদস্য হিসেবে আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিবেন, বছরের শেষ দিনে আপনার মোট জমা দেওয়া টাকার দ্বিগুন ফেরত পাবেন। আপনার আমানত দিয়ে ব্যবসা করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, তাদের উপকার এবং আপনার উপকার হবে- একটি জনসেবামূলক কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিজের মূলধন দ্বিগুণ করে নিন।
বিজ্ঞাপনগুলো এমনই হতে হবে যাতে সেটা বিশিষ্ঠতা পায়।
টাকা দ্বিগুণ, ৫০ শতাংশ লাভের লোভ, মাস গেলে ১০ % লাভের লোভের বাইরে যেই প্রতারণাটা আমাকে চমৎকৃত করেছে, সেটা চীনের পিঁপড়া পালন প্রকল্প-
এখানে একটি কোম্পানী উদ্যোগী হয়ে পিঁপড়া চাষীদের একটা বন্ধ বাস্কে পিঁপড়া দিয়ে যাবে, এবং সেই পিঁপড়াকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে, কয়েক মাস পরে সেই পিঁপড়া নিয়ে যাবে কোম্পানী এবং পিঁপড়া চাষী বিশাল একটা লাভের অঙ্ক পাবেন হাতে। বাৎসরিক প্রায় ৩০ শতাংশ লাভের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে তেমন বড় স্থানের প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশেও মনে পড়ে এমন পিঁপড়া পালন প্রকল্পের গল্প শুনেছিলাম। বাংলাদেশের প্রতারক চক্র তেমন উদ্ভাবন কুশল না, তারা পুরোনো পঁচে যাওয়া প্রতারণাগুলোই নতুন করে শুরু করতে চায়, এমন কি বুদ্দীদৃপ্ত প্রতারণা করবার মতো মেধাও তাদের নেই, সুতরাং পিরামিড মার্কেটিং এখানে শুরু করবার পরে লাখে লাখে মানুষ এখানে যুক্ত হয়, তারাও প্রতারক চক্রের অংশ হয়ে বিশ্বাস করতে চায় এটা বাস্তব।
টিভিতে জাঁকজমকপূর্ণ প্রচারণার পরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, নামকরা মডেল আর টিভি স্টার দিয়ে প্রচারণা, এরপরে প্রতারণার শুরু, এমনটা হতো বাংলাদেশে ঘটে না, তবে এমনটাই ঘটে প্রতি পাঁছ বছর পর পর, গণতন্ত্রের নামে বিস্তর প্রতিশ্রুতি দিয়ে একদল জননায়ক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান, দেশের জনপ্রতি মাথা পিছু আয় ৫ বছরেই তিন গুন হয়ে যাবে স্বপ্ন দেখান।
তবে বহুল বিজ্ঞাপনের পরেও যেই প্রতারণাও জনগণ সাড়া দেয় নি, না ভোট দিন- এই প্রকল্পে ২৭ টি আসনে না ভোট পড়েছে ৩০ হাজারের একটু বেশী।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিনে মানুষ না ভোট দিয়ে ভোট প্রতারিত হতে চায় নি দেখা গেলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।