www.choturmatrik.com/blogs/আকাশ-অম্বর
জন্মাইবার পরের যেই মুহূর্তটিতে জননীর সহিত নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন হয়, ওঁৎ পাতিয়া থাকা কয়েকগুচ্ছ অদৃশ্য লতানো তন্তু জড়াইয়া ধরে স্বতন্ত্র মানবশিশুকে। সময়-আঁশসমূহের সূক্ষ্ম তীক্ষ্ণ সূচাকৃতির অগ্রভাগ নবজাতকের অপরিপক্ব নিষ্পাপ চর্ম ছেদন করিয়া ঢুকিয়া পড়ে উহাদের অভ্যন্তরে। সদ্যপ্রসূত নির্লিপ্ত রক্তমাংস পরখ পূর্বক তাহাদের নবীন বরণে সজ্জিত করে। অনলঙ্কৃত দেহের কোষে কোষে পৌঁছাইয়া দেয় অস্তিত্ববাদের ঘোষণা। স্নায়ুতন্ত্রকে শিখাইয়া দেয় কী এক গূঢ় মন্ত্রণা।
প্রশিক্ষণ দেয়। করে অপ্সুদীক্ষিত। রোপণ করে গোপন নকশা। বপন করে গুপ্ত আলেখ্য। রক্তে ভাসাইয়া দেয় মহাকালিক আয়োজন।
শত সহস্র কোটি স্নায়ুকোষের নীরব স্রোতের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয় অভিজ্ঞ প্রায়োগিক মহাপ্রকৃতি। তাহাদের তুমুল করতালির মধ্যে ঘোষিত হয় মুক্ত-ইচ্ছার স্বাধীনতা। তাহাদের শূন্য হর্ষধ্বনির প্রতিধ্বনিতে বিজ্ঞাত হয় আত্মতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতার ভ্রান্ত ধারণা। তাহাদের শিশুসুলভ চক্ষুর উপর পড়াইয়া দেয়া হয় ঐন্দ্রজালিক ঠুলি। সসীম জগতের গঠন উপাদানসমূহের স্বাদ পাইয়া নিরাকার আত্মার হতাশ হাহাকার এবং বাস্তবতার অভিঘাতে পর্যুদস্ত আর্দ্র মানসদিগদের উদ্দেশ্যে এই সান্ত্বনা বাণীই উচ্চারিত হয়, যে ইহাদের মধ্যেই নিহিত আছে চার্বাক সুখ।
ইহাই এক মহাজাগতিক সম্বন্ধযুক্ত সংশ্রয়। শক্তির নিত্যতা সূত্রের মতন তোমাদিগেরও বিনাশ হইবে না, ধ্বংস হইবে না। তোমরা এক রূপ হইতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হইবে শুধু।
ইহাই হইতেছে মোহ। ইহাকেই বলা হয় বিভ্রম।
ইহাই সেই তথাকথিত মায়ার জাল। ভ্রম। অধ্যাস। কুহক।
আজ কত বৎসর পর ধীরে ধীরে এক একটি করিয়া তন্তু ছিঁড়িতে যাইয়া অস্তিত্বের শিকড়ে টান পড়িলে সহসা উপলব্ধি ঘটে যে ইহাই স্বাভাবিক।
ইহাই সহ্য করিতে হইবে। সসীম দেহের অসীম নাভিমূলে যে প্রোথিত হইয়া আছে অতিপ্রাকৃতিক প্রতারণা! আধিদৈবিক বঞ্চনা!
চিরন্তন এক বলীকরণের শিকার তাই আমার এই বিমূর্ত অশ্রুজল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।