প্রতিদিন যা পড়ি পত্রিকার পাতায়, ভাললাগা-মণ্দলাগা সবই শেয়ার করি সবার সাথে।
প্রথম আলো
এএসএম শাহজাহান
পাবনার ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সেখানকার প্রশাসন প্রহূত হয়েছে। প্রশাসনের লোকেরা নির্যাতিত-লাঞ্ছিত হয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ছিনতাই হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের যেমন হতবাক করেছে, তেমনি হতবাক করেছে দেশের মানুষকে।
তার পরও আমরা আশা করি, দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা গণতন্ত্রবিরোধী ও আইনের শাসনের পরিপন্থী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত-মূলক শাস্তি দেবে। শুধু যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা নন, তাঁদের মদদদাতাদেরও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্রের পথচলা বিঘ্নিত হবে, জনমনে ভীতি ছড়িয়ে পড়বে; সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। জনগণের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারই। দলীয়করণের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে এ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে।
এ ধরনের ঘটনা অতীতের মতো যেন না হয়। সরকারি চাকরি পেতে দলীয় পরিচয় লাগবে, এ ধরনের কথা আমরা আর শুনতে চাই না।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা কোনো অবস্থাতেই ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া ঠিক হবে না। প্রশাসন যেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, সেখানে জনগণের নিরাপত্তা কোথায়? আইনের ঊর্ধ্বে যেন কেউ উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের এই অসহায়ত্ব দূর করতে হলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
যেন অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। এ ঘটনার মদদদাতা কারা, কোনো অর্থের আদান-প্রদান ছিল কি না, সবকিছুই তলিয়ে দেখতে হবে। সরকারের স্বার্থে দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থেই এটা করতে হবে।
অতীতে আমরা দেখেছি, যেসব ব্যক্তি সুযোগসন্ধানী ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা পুলিশকেও নিয়ন্ত্রণ করেন। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে।
এই সন্ত্রাসীদের শক্তির উৎস কোথায়, তা খুঁজে বের করতে হবে। এসব সুযোগসন্ধানী যে শুধু দেশ ও জনগণের শত্রু, তা নয়। তাঁরা সরকারের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই উপলব্ধি সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অবশ্যই আসবে।
এসব বিপথগামী ব্যক্তি সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে দলের নাম ব্যবহার করছে।
এসব সুযোগসন্ধানীর হাত থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে। না হলে অতীতের মতো গণতন্ত্র ইজারাতন্ত্র অথবা ফায়দাতন্ত্র হয়ে যাবে। এরা দলের হয়ে কাজ করে। তাই বলে আমরা সব সময় পুরো দলকে নিয়ে প্রশ্ন তুলব না। কিছু বিপথগামী লোকের কারণেই পুরো দলের বদনাম হচ্ছে।
এদের সম্বন্ধে রাজনীতিবিদদেরও সাবধান হতে হবে। এরা রাজনীতিজীবী। ফায়দা নেওয়ার জন্যই এরা আসেন। দল, সরকার আর রাষ্ট্র—এই তিনটি ধারণার মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য।
আর সরকার যথাযথভাবে কাজ করে কি না, সেটা দেখাই দলের কাজ। এই তিনটি ধারণার মধ্যে বিভাজনটা যদি চলে যায়, তাহলে ক্ষতিকর হবে; গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী হয়ে যাবে। সরকারের চোখে সবাইকে সমান হতে হবে। যে শপথ নিয়ে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেখানে অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো রকম বৈষম্য থাকতে পারে না।
আমরা দেখেছি, এসব বিপথগামী কখনো ছাত্রলীগ, কখনো যুবলীগ।
এদের নিজেদের দলের ভেতর কোন্দল হয়। সবকিছুই হয় নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে।
আমরা মনে করি, এক-এগারোর চরম শিক্ষা হলো গণতন্ত্র ও রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের ঘটনা অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর ছাত্রলীগের কিছু বিপথগামী অংশের কাজের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও কঠিন হবেন।
এএসএম শাহজাহান: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।