ঢাকা, জুলাই ০৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করার পদক্ষেপ নিতেই বিরোধীদল 'অস্থির' হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 'যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিরোধীদল তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে'- এ কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বাংলার মাটিতে বিচার হোক- এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। এজন্য বিরোধীদল অস্থির। বিরোধীদল এখন যুদ্ধাপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
যতই তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলুক, এখন তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। "
তিনি বলেন, "দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং সেনানিবাসের বাড়ি রক্ষা করাই বিএনপি চেয়ারপারসনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে। "
গণভবণে শনিবার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা ও রাজনৈতিক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আবারও বিরোধীদলকে সংসদে এসে কথা বলার আহবান জানান।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, "কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সার্ভিস বন্ধ করে তারা জনগণকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করেছিলো।
এ জন্য তাদের বিচার হওয়া দারকার। "
সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, "সম্পদের ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলে জনগণ আর গরীব থাকবে না। "
বিরোধীদলের হরতাল কর্মসূচীর তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, "ফারুককে যখন আমি দেখতে গেছি, তখন সে আমাকে বলেছে- যখন গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, তখন সে গাড়ি থেকে বেরুতে গেছে। তখন তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। "
শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, "একজন মুসলমান একজন মুসলমানকে কিভাবে পুড়িয়ে মারতে পারে ?"
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলেন, "হরতাল করবেন, করেন।
কিন্তু, মানুষ মারবেন কেন ? আমি বিরোধীদলীয় নেতাকে বলবো, মানুষ পুড়িয়ে মারার কথা ইসলামের কোন জায়গায় বলা আছে ?"
শেখ হাসিনা বলেন, "কোন ইস্যুতে বিরোধীদল হরতাল দেবে ? চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন তো নিরপেক্ষ হয়েছে। এখন তো ইস্যু নেই। বিরোধীদল কী নিয়ে কথা বলবে ?"
বিএনপি'র হরতালের কর্মসূচিতে মির্জা আব্বাসের বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, "বাড়িতে হামলা হয়েছে। কিন্তু, আমি বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখলাম- শো কেসে জিনিষপত্র ঠিক মতোই সাজানো আছে। হামলা হলে শো' কেসে জিনিষপত্র কি করে সুন্দরভাবে সাজানো থাকে ?"
শেখ হাসিনা আরো বলেন, "তারা হরতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ভেঙ্গেছে।
অর্থোপেডিক ডিপার্টমেন্টের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো। "
"যেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের আবাসন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, সেখানে খালেদা জিয়া ঢাকা সেনানিবাসে ১৮০ কাঠা সম্পত্তি দখল করে বসে আছেন। দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং সেনানিবাসের বাড়ি রক্ষা করাই তার মূল লক্ষ্য," বলেন শেখ হাসিনা।
ঢাকা সেনানিবাসের জায়গা ছেড়ে দিয়ে গুলশানে ৩৫ কাঠা জমির ওপর যে বাড়ি রয়েছে, সেখানে চলে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা দেশী বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগও আসছে। "
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, "জনগণ আমাদের ওপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছে, তার মর্যাদা আমাদের দিতে হবে। আমাদের ওপর মানুষের যে বিশ্বাস, তা যেনো কোনো ভাবেই নষ্ট না হয়। "
তিনি আরও বলেন, "অশুভ রাজনীতির ধারাবাহিকতার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। "
সামরিক আইন জারির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিলো, তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, "অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার জন্যই নির্বাচনে কারচুপি শুরু হয়।
এরপর, সুযোগ সন্ধানীদের নিয়ে দল গঠন এবং ধনীক শ্রেণী তৈরি করাই ছিলো অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের মূল কাজ। তারা অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই এই ধনীক শ্রেণী তৈরি করতো। "
একই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দশটা হোন্ডা, বিশটা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা- এটা জিয়াউর রহমান প্রবর্তন করেছিলেন। এরশাদ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে গেছেন। তারা জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে না।
"
চার দলীয় জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "তারা আঘাতের কথা ভুলে যাননি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের শরীরে আঘাতের দাগ এখনো আছে। কিন্তু, এই মুহুর্তে তার সরকারের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। "
শেখ হাসিনা সাংগঠনিক কর্মকান্ড আরো গতিশীল করা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম সংগঠনের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "অনেক ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতার মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের জন্ম।
কিন্তু যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, দলীয় শান্তি-শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী নয়, সেই অপশক্তি বসে নেই। "
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোল্লা মো. আবু কায়সার তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, "আমাদের এমপিদের বোঝা উচিত, এই নির্বাচনই শেষ নির্বাচন নয়। এমপিরা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে, আপনার কাছে নালিশ করা ছাড়া আমাদের কাছে কোনো উপায় নেই। "
মোল্লা মো. আবু কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, মেজবাহউদ্দিন সিরাজ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।