আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিনিধি দল পাঠাবেন বান কি-মুন

ঢাকা সফরে আসছে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দল। বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিব বান কি-মুনের প্রতিনিধি হিসেবে তারা বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবেন। সংসদের আগামী অধিবেশন শুরুর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এই সফর হবে। এতে সমর্থন থাকবে ঢাকার কূটনীতিকদের। প্রতিনিধি দলের সফরের আগে আলোচনা হবে দেশের বাইরে। সেখানে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য বলা হবে দুই দলকেই। জাতিসংঘের এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু কোনো সংলাপ অনুষ্ঠান নয়। লক্ষ্য হলো, নির্বাচন নিয়ে দেশে যেন কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। অপরদিকে, মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোন সংলাপের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। তারা এই উদ্যোগের ফল নিয়ে আশাবাদী।

কূটনৈতিক সূত্রগুলোর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের সংকট নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা নিজেদের উদ্বেগ নিরসনে যে কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছেন তার সর্বশেষ রূপ বান কি মুনের এই টেলিফোন সংলাপ। ঢাকার কূটনীতিকদের উদ্যোগেই সরাসরি মধ্যস্থতায় এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। সংকট সমাধানে হাতে সময় কম থাকায় বান কি মুন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে থাকা অবস্থাতেই উভয় নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপও হলো না, আবার নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ নিয়ে যে উদ্বেগ তা নিরসনও সম্ভব হবে। সূত্র মতে, যে কোনোভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর কথা বলেছেন বান কি মুন। বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, এক্ষেত্রে দায়িত্ব সরকারের। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংসদে এসে প্রস্তাব দিতে। তখন আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই অধিবেশনে নির্বাচন নিয়ে একটি পদ্ধতির বিষয়ে একমত হলেই সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে। তবে সংসদে সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধী দলের মধ্যে শঙ্কা আছে। এই শঙ্কা দূর করতে আগেই আলোচনা করা হবে। এই দায়িত্ব পালন করবেন সেপ্টেম্বরের শুরুতে আসা জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল। তাদের সফরের প্রস্তুতির জন্য নিউইয়র্কে আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধি চাওয়া হতে পারে। সূত্রমতে আগে ঢাকা সফর করে যাওয়া জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো, সিনিয়র উপদেষ্টা হিতোকি ড্যান, বিশেষ সহকারী গিয়ানলুসা রামপলা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ম্যারি জোয়েল জাহার ও নির্বাচন বিষয়ক কর্মকর্তা ভেতলানা গলকিনা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তাদেরই কেউ কেউ ঢাকা সফরে আসতে পারেন। তাদের পক্ষ থেকে ঢাকার জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, বিরোধীদলীয় চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। জাতিসংঘের এই উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাসে ঢাকা সফরে এসে তারানকো এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তারানকো বলেছিলেন, এখানকার সাম্প্রতিককালের সহিংসতার ব্যাপ্তি ও নির্বাচন নিয়ে পরস্পরমুখী অবস্থানে বান কি মুন খুবই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তার প্রত্যাশা একটি অর্থবহ ও গঠনমূলক রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে একটি সফল ও ভালো নির্বাচনের জন্য উপযোগী ও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব চান সকল দল জনসম্মুখে সহিংসতা ও সন্ত্রাস পরিত্যাগ করবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হতে হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। আর স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হলে এর প্রথম শিকার হবে জনগণ। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নষ্ট হবে। এদেশের জনগণের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পথে থাকার অধিকার রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতিসংঘের বড় অংশীদার। যার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, বিভিন্ন ইতিবাচক সূচক অর্জন, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অবদান রেখে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করেছে।

উদ্যোগের ফল নিয়ে আশাবাদী কূটনীতিকরা : জাতিসংঘ মহাসচিবের টেলিসংলাপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে দেশের সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উদ্যোগ নেওয়া কূটনীতিকরা। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনা গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান শেষে বলেছেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের এই উদ্যোগ অত্যন্ত গঠনমূলক ও কার্যকরী। এটির একটি ভালো ফল আসবে বলে আমি আশাবাদী। তার এই উদ্যোগ আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। এটি সংলাপ ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। আর বাংলাদেশের জনগণও নির্বাচন চায়। সে কারণে দলগুলো কোনো না কোনোভাবে নির্বাচনের পথ বের করবে বলে আমি আশাবাদী। অপরদিকে, কয়েকদিন আগে ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘের এই উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলো যথাসময়ে সাড়া দেবেন বলে আশা করে চীন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই উদ্যোগের সুফল দেখার অপেক্ষায় আছেন। ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের এক মুখপাত্র জানান, কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বরাবরই সংলাপের আহ্বানের মতোই শক্তিশালী একটি বার্তা দিয়েছেন বান কি মুন। দুই নেত্রীর সঙ্গে এই কথন অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে বলে কানাডা বিশ্বাস করে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.