ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি দেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার টার্গেট ছাত্রদল ও যুবদল। তিনি মনে করেন, ঢাকার রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থতার দায় মহানগর বিএনপির মতো এই দুই সংগঠনেরও। অবশ্য অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন তারা। সোমবার রাতে মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বেগম জিয়া স্পষ্টই বলেছেন, মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের পরপরই ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। বিগত সময়ে এরা সবাই আন্দোলনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন করে খুব শীঘ্রই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনায়ও বেগম জিয়া ছাত্রদল ও যুবদলের ওপর তার হতাশার কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির নীতি নির্ধারণী সূত্র জানায়, যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নেতাদের মাধ্যমে উভয় সংগঠনের নেতাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে আন্দোলনমুখী দক্ষ ও যোগ্য নেতাদের আলাদা একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যুবদলের সাবেক নেতাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। যুবদলের শীর্ষ নেতারা বাইরে থাকায় এই কমিটি ছাত্রদলের আগেই হতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা আশা করছেন, ছাত্রদলের শীর্ষ তিন নেতা চলতি মাসেই মুক্তি পাবেন। তারা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই একটি বৈঠক করে কমিটি দেওয়া হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করে আন্দোলনমুখী করে তোলা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। খুব শীঘ্রই এসব সংগঠন পুনর্গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
যুবদল সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে ব্যর্থতার পাশাপাশি শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে বিপর্যস্ত যুবদল। সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে অতীতের মতো বিএনপির হাইকমান্ডের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এমনটা স্বীকারও করেন যুবদল নেতারা। যুবদলের কেন্দ্রের নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তায় তার প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচিতে মহানগর যুবদলের সব নেতাই আত্দগোপনে চলে যান। বিএনপি চেয়ারপারসন বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি যুবদল নেতাদের খোঁজখবর নিতে চাইলেও কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর থেকেই তিনি যুবদলের ওপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকেও যুবদল কমিটি পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছেন বেগম জিয়া।
সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে ঝামেলার কারণে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজেই সংগঠন থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন।
কমিটি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন চাইলে যে কোনো সময় যুবদল কমিটি দিতে পারেন। বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগরে যুবদলের অবস্থান জেলা পর্যায়ের চেয়ে ভালো ছিল না। কিছুটা ব্যর্থতা যুবদলের ওপরে আসতেই পারে। তবে যুবদলের কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। তারপরও কমিটি রাখা না রাখার দায়িত্ব বিএনপি চেয়ারপারসনের। ২০১০ সালের ১ মার্চ আলালকে সভাপতি এবং সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে মামুন হাসানকে সভাপতি ও এসএম জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট যুবদল মহানগর উত্তর এবং হামিদুর রহমান হামিদকে সভাপতি ও রফিকুল আলম মজনুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট মহানগর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন। ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের মাধ্যমে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল সমর্থিত শিক্ষকদের কাছে ক্লিন ইমেজের মেধাবী ও দক্ষ ছাত্রনেতাদের তালিকা চেয়েছেন। ইতোমধ্যেই তারা তালিকা তৈরির কাজ শুরুও করেছেন। দলীয়ভাবেও ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ছাত্রদলের শীর্ষনেতারা এখনো জেলে। আমরা আশা করি, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ওই নেতাদের বেরোনোর পর ছাত্রদল নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন। আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন চাইলে যে কোনো সময় ছাত্রদল নিয়ে তার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সময় ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর সাত মাস পর ঘোষণা করা হয় ২৯১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা হওয়ার কথা ১০১। কিন্তু গঠনতন্ত্র ভেঙে ২৯১ সদস্যের বিশাল কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং একটি মহলের অনুগতদেরকেই স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছরে ছাত্রদল সাত থেকে আটটি উপদলে বিভক্ত।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।