চার্লস ডারউইনের 'বানর তত্ত্ব' অনুসারে বানর থেকে বিবর্তিত হয়ে মানে বদলাতে বদলাতেই মানুষের সৃষ্টি। মানুষের এই সৃষ্টি তত্ত্বটা বিতর্কিত হলেও বদলে যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে ষোলো আনা। যদিও জ্ঞানীরা বলেন যে, পৃথিবীতে পরিবর্তন নিজে ছাড়া আর কোনো কিছুই অপরিবর্তনীয় নয়, তাই পরিবর্তন বা বদল হতেই পারে! অর্থ আবিষ্কারের আগে দ্রব্য বিনিময় প্রথা অর্থাৎ বদলা-বদলির ওপরই চলত গোটা পৃথিবী। কোথায় নেই অদল-বদল? দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে বদলা-বদলির চক্র চলতে থাকে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পোশাক বদল করে নাইট ড্রেস, অফিসে যাওয়ার আগে অফিসিয়াল ড্রেস। এভাবে বদলা-বদলির কোনো শেষ নেই। প্রেমিকার সামনের গদ গদ ভাব বদলে যায় বিয়ের পর। বন্ধুর সামনে এক রকম ব্যক্তিত্ব তো বন্ধুর বাবার সামনে আরেক রকম। দিন বদলের নামে আবার কেউ কেউ দিনের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। দুই সদ্য বিবাহিত বন্ধুর মধ্যে বিয়ের আগে আর বিয়ের পরের জীবন বদল নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রথম বন্ধু বলল- দোস্ত বিয়ে করে ফেঁসে গেছি। কিচ্ছু ভাল্লাগেনা। কেমন পানসে লাইফ।
দ্বিতীয় বন্ধু করুণ হাসি হেসে বলল- কিন্তু আমার জীবনে তো ব্যাপক বৈচিত্র্য আসছে। প্রচুর রদ-বদল হইছে। আগ্রহী হয়ে উঠল প্রথম বন্ধু। জানতে চাইল- কী রকম? দ্বিতীয় বন্ধু আরেকবার হাসল। এবারের হাসিটাও কেমন যেন। মৃত্যুদূতের সামনে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে হাসতে গেলে যে হাসি আসবে, অনেকটা সে রকম। বলল- অনেক পরিবর্তনই আসছে। এই ধর বিয়ের আগে আমি রাগ করে বউয়ের ফোন কাটতাম। এখন ও কাটে। বিয়ের আগে ও আমার মেসে এসে আমার কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিতো- এখন নিজের ফ্ল্যাট বাসায় আমি নিজেই নিজের কাপড় ধুই। আবার ওরটাও মাঝে মাঝে ধুয়ে দিই। কত পরিবর্তন দেখ! বন্ধুর সকরুণ বক্তব্যের পর প্রথম বন্ধুটি একেবারেই চুপসে গেল! কারণ এমন বদলানো কেউই আশা করে না।
এরপরও বদলা-বদলির একটা বৈশ্বিক ইমেজ আছে। মালিকানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে সদরুল মামার চায়ের দোকান হয়ে যায় টাইম পাস ক্যাফে। আবার নানা দেশে সরকার বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যায় বৈদেশিক নীতি, দেশের অভ্যন্তরের চালচিত্র। শীত এলেই যেমন গাছের পাতা ঝরতে শুরু করে, সিগারেটের শূন্য প্যাকেট যেমন ছুড়ে মারা হয়, তেমনি ক্ষমতার পালাবদলে বদলে যায় অনেক ুকিছুই। যদিও কেউ কেউ চাপে পড়ে ধাপে পড়ে, বাটে পড়ে বদলান, তবুও বোধহয় মুনীর চৌধুরীর কথায় ঠিক- মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়। এমনি এক বদলানোর গল্প শুনি। কোনো এক উল্টো দেশের মন্ত্রী আর আরেক দেশের পাহাড়ি মন্ত্রীর মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো। পাহাড়ি মন্ত্রী সহজেই উল্টো দেশের মন্ত্রীকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়ে গেলেন। কিন্তু উল্টো দেশ বলে কথা। সেই দেশের রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রের কর্মকর্তারা তাদের মন্ত্রীর পরাজয় বেমালুম চেপে গিয়ে সংবাদে খবর পরিবেশন করল- 'তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর উল্টো দেশের মন্ত্রী রৌপ্য পদক জয় করেছেন। অথচ পাহাড়ি মন্ত্রী অনেক দৌড়েও শেষ লোকটির আগে পেঁৗছেছেন মাত্র!' এভাবেই সংবাদের মতোই সব বদলে যায়।
গানটা উচ্চৈঃস্বরে সবাই না গাইলেও আপনি, তুমি, এরা, ওরা সবার মনেই একই সুর-'চলো বদলে যাই'। রোমান্টিক গান বলেই কিনা কে জানে এই বদলে যাওয়ার ভাইরাস থেকে মুক্ত নয় হালের প্রেমিক-প্রেমিকরাও। ইন্টারনেট সেলফোন আর লিভ টুগেদার তত্ত্বের প্রভাবে ভালোবাসার রং বদলেছে বহু আগেই। হালকা হয়ে গেছে সবই। সকালে একজন তো বিকালে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম। জিজ্ঞাসা করলে বলে, 'বদলে ফেললাম'।
আমাদের মহল্লায় এক মহিলা ছিলেন। তার বদলানোর রোগ ছিল। প্রতি সপ্তাহে তিনি চাকর বদলাতেন। কালের বিবর্তনে তিনি ৩ বার স্বামী, ৪ বার বাড়ি আর ৯ বার চাকরি বদল করে শেষমেশ অদল-বদলের ধাক্কায় নিজেই হেমায়েতপুরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই বদলাতে গিয়ে অত সিরিয়াস না বদলানোই ভালো। কথাটা প্রকৃতি তৈরি করে দিলেও বদলানোর ঠ্যালা থেকে রেহাই পায়নি সে নিজেও। ক্ষমতা, ধন আর মন বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিও বদলায়। ঋতু বদলের তালে তালে বদলায় আমাদের জীবন। শীতের পর গরম আর খরার পর বৃষ্টি আসবেই।
একসময় রাজত্ব ছিল কলেরার ওলাবিবির। এখন আছে ডেঙ্গুজরের লেডিস মশা-এডিস। যক্ষ্মা এখন আর মারাত্দক ব্যাধি নয়। কিন্তু যক্ষ্মার চেয়েও মারাত্দক ব্যাধি হলো-এইডস, ক্যান্সার, বার্ডফ্লু, আরও কত কী! আর দুর্নীতির ব্যাধি তো ক্রমেই না বদলানোর দলে ভিড়ে যাচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।