"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
ﺑﺴﻢ اﷲ اﻟﺮ ﺣﻤﻦ اﻟﺮ ﺣﻴﻢ
কিছুদিন ধরে একটা খবরের কল্যাণে ‘নাস্তিক’গণ তাদের জোয়ালে পানি পেয়েছে, দূর্বল ঈমানের মুসলমান তথা কষে ‘বিবর্তনবাদ’ থিওরী পড়া মুসলমান ভাইয়েরা সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়েছেন! এছাড়া অনেকে হয়তো ভেবে ফেলছেন, ‘কি জানি, কিছু বুঝতে পারছি না’ টাইপের দ্বিধা দ্বন্দে পতিত হয়েছেন, হলে হতেও পারে!
ধরুন, আপনার চোখের সামনে এক ব্যক্তি উড়ে এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং এ চলে গেল বা কেউ আগুনের উপর দিয়ে হেটে গেল বা হঠাৎ করে মাটি ফুড়ে বের হয়ে এল, পানির উপর অনায়াসে হেটে গেল এর সেই ব্যক্তি বললো, আমি ‘বিশেষ কিছু’ সুতরাং আমার কথা মেনে চল! যা কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বিপরীত! আপনি কি তখন সেই সব ‘বিশেষ কিছু’র জন্যে নিজের ‘ঈমান’ কে বিসর্জন দিয়ে সেই ব্যক্তির কথা মেনে চলবেন?! যদি চলেন তাহলে বিভ্রান্ত হবেন, পথভ্রষ্ট হবেন আর পথভ্রষ্টদের গন্তব্যস্থল ‘জাহান্নাম’!
“আমি তাদের (বিভ্রান্ত করার) জন্যে সরল পথের (মাথায়) অবশ্যই ওৎ পেতে বসে থাকব। অতঃপর আমি (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসব, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞরুপে পাবেন না”। (সূরা আ‘রাফঃ ১৬-১৭)
চলুন এখন, কোরআন থেকে জেনে নিই শয়তান কিরুপে মুসা (আ) এর জাতীকে বিভ্রান্ত করেছিল।
সামেরী কর্তৃক কৃত্রিম প্রাণ তৈরী এবং মানুষের আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়াঃ
মুসা (আ) যখন আল্লাহর নিকট থেকে ‘তাওরাত’ নিয়ে আসার জন্যে গিয়েছিলেন সেই সময় সামেরী নামক এক ধূর্ত ব্যক্তি যে ছিল শয়তানের অনুসারী, মুসা (আ) এর জাতিকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছিল। মুসা (আ) তোমাদের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তোমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।
সে তাদের বলেছিল তোমাদের একজন গডের প্রয়োজন, আমি তোমাদের সেই গডের ব্যবস্থা করে দিব। তারপর সামেরী তাদের সব অলংকার একত্র করতে বললো, এরপর সে একটি বিশাল আগুনের কুন্ড তৈরী করে অলংকারগুলো সেই আগুনে ফেলে দিল। এরপর সেই গলিত অলংকার দিয়ে সে একটি বাছুর এমনভাবে তৈরী করল যার ভিতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হলে জ্যান্ত গরুর মতো শব্দ তৈরী করতো। যেহেতু এই জাতিটি পূর্বে ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন তাই সহজেই অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে গেল, আর সোনা দিয়ে তৈরী বাছুরটিকে তাদের ‘গড’ হিসেবে মেনে নিয়ে সেই বাছুরটির পূজা শুরু করে দিল! বাছুরের শব্দকে তারা একটি বিশেষ ক্ষমতা মনে করল। মুসা (আ) এর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি’র কথা ভুলে গেল, আল্লাহকে ইবাদত করা বাদ দিয়ে তারা বাছুরের পূজা করতে শুরু করল।
(ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ এর Stories of the Prophets থেকে ভাবানুবাদ)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ
“তারা বললো (হে মুসা) আমরা তোমার প্রতিশ্রুতি নিজেদের ইচ্ছায় ভংগ করিনি (আসলে যা ঘটেছিল তা হলো) জাতির (মানুষদের) অলংকার পত্রের বোঝা আমাদের উপর চাপানো হয়েছিল, আমরা তা (বইতে না পেরে আগুনে) নিক্ষেপ করে দিই (এ ছিল আমাদের অপরাধ), এভাবেই সামেরী (আমাদের প্রতারণার জালে) নিক্ষেপ করলো”
“তারপর সে, (অলংকার দিয়ে) তাদের জন্যে একটি বাছুর বের করে আনলো, (মূলত) তার (ছিল) একটি (নিষ্প্রাণ) অবয়ব, তাতে গরুর (মতো) শব্দ ছিল (মাত্র), তারা (এটুকু দেখেই) বলতে লাগলো, এ হচ্ছে তোমাদের মাবুদ, (এটি) মুসারও মাবুদ, কিন্তু মুসা (এর কথা) ভুলে (আরেক মাবুদের সন্ধানে ‘তুর’ পাহাড়ে চলে) গেছে”
“(ধিক তাদের বুদ্ধির উপর) তারা কি দেখে না, ওটা তাদের কথার কোন উত্তর দেয় না, না ওটা তাদের কোন রকম ক্ষতি কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে!”
“(মুসা তার জাতির নিকট ফিরে আসার) আগেই হারুন তাদের বলেছিল, হে আমার জাতি, এ (গো-বাছুর) দ্বারা তোমাদের (ঈমানেরই) পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তোমাদের মালিক তো হচ্ছেন দয়াময় আল্লাহ তাআলা, তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ মেনে চলো” (সূরা ত্বহাঃ ৮৭-৯০)
সামেরী কর্তৃক বাছুরকে ‘জ্যান্ত’ ভেবে বাছুরকেই গড ভাবা শুরু করেছিল। কাজেই আজকে কৃত্রিম প্রাণের দাবীদারদের দাবী দেখে তাতে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না! এটা আমাদের জন্যে পরীক্ষা! শয়তান আমাদের ধোকা দিয়ে এই ‘কৃত্রিম’ প্রাণের ধোকাবাজিতে বিশ্বাস করতে বলবে। কেউ যদি এই ধোকাবাজিতে বিশ্বাস করে তাহলে সে নিশ্চিত তার ঈমান হারিয়ে পথভ্রষ্টদের কাতারে শামিল হবে! কারণ, জীবন সৃষ্টি করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
“আল্লাহ তাআলা বিরচরণশীল প্রতিটি জীবকেই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তাদের মধ্যে কিছু চলে তার বুকের উপর ভর দিয়ে, কিছু চলে দু’পায়ের উপর (আবার) কিছু চলে চার (পা) এর উপর (ভর করে); আল্লাহ তাআলা যখন যা চান তখন তাই সৃষ্টি করেন, অবশ্যই তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা নূরঃ ৪৫)
“যিনি (সবকিছুকে) সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আল আলাঃ ২)
“তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনি সবকিছু সম্পর্কে জানেন” (সূরা আনআমঃ ১০১)
“তিনিই সেই মহান সত্ত্বা, যিনি এই পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের (ব্যবহারের) জন্যে সৃষ্টি করেছেন” (সূরা বাকারাঃ ২৯)
“এরা কি আল্লাহ তাআলার সাথে এমন কিছুকে শরীক (মনে) করে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি করা হয়” (সূরা আ’রাফঃ ১৯১)
হিদায়াতের একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা। আল্লাহর কথা তথা কুরআন থেকে তারাই উপদেশ গ্রহণ করে যারা ‘সৎ’ আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের ফয়সালা আল্লাহ তাআলাই করবেন।
মুসলামন ভাইদের সতর্ক করা তথা তারা যেন ঈমান হারিয়ে শয়তানের চালে বিভ্রান্ত না হয় আর সে জন্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
“যে ব্যক্তি (আল্লাহ তাআলাকে) ভয় করবে সে (অবশ্যই এর থেকে অর্থাৎ কুরআন) উপদেশ গ্রহণ করবে,
আর যে পাপী ব্যক্তি সে তা এড়িয়ে যাবে,
অচিরেই সে ব্যক্তি বিশালাকায় আগুনে গিয়ে পড়বে,
অতপর সেখানে সে মরবে না, (বাঁচার মতো করে) সে বাঁচবেও না;
যে ব্যক্তি (হিদায়াতের আলোকে নিজের জীবন) পরিশুদ্ধ করে নিয়েছে, সে অবশ্যই সফলকাম হয়েছে” (সূরা আ’লাঃ ১০-১৪)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।