বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। সারা বিশ্ব বিশ্বকাপের আনন্দে মেতে উঠবে। তবে বিশ্বকাপের আগে আমি খানিকটা পেছনে ফিরে যেতে চাই।
১৯৮১ সালে আমাদের বাসায় প্রথম টেলিভিশন আসে। সেটাই তখন পাড়ার একমাত্র টিভি ।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথম ভূউপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্বকাপের খেলা সরাসরি প্রচার করে। আমি তখন একেবারে শিশু কিন্তু আমার দেখা প্রথম সরাসরি বিশ্বকাপের কথা ষ্পষ্ট মনে আছে। গভীর রাতে খেলা শুরু হত। পড়ার ছেলেরা দলবেঁধে খেলা দেখতে আসত। বাসার উঠানে টিভিটাকে নিয়ে আসা হত, দর্শকেরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যেত।
জয়ী দল নাচতে নাচতে পরাজিতরা বিমর্ষ বদনে বাড়ী ফিরত।
সে বছর একজন খেলোয়াড়ের কথা আমার মনে পড়ে তার নাম থামাস নাকানো। ক্যামেরুনের এই খেলোয়াড় দলের গোলপোস্টের নীচে দাঁড়াতেন। তার খেলা ভালো লাগার কারণ আমি ছোটদের দলের গোলরক্ষক ছিলাম।
আমাদের টেলিভিশন ছিল সাদাকালো।
কিন্তু আমার দৃষ্টিতে সেই বিশ্বকাপ ছিল সবচেয়ে রঙ্গীন।
ইতালি সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল। আর সেবার সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন পাওলো রসি। পাড়ায় সে বার একটা শব্দ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সেটি হলো রসি পাইলো ।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ আমাদের জন্য অনেক আনন্দ বয়ে আনে।
কারণ আবার সেই গ্যালারির উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় আমি ফ্রান্সকে সমর্থন করতে শুরু করি। কারণ ফ্রান্সের এক খেলোয়াড়ের নাম ছিল প্লাতিনি। তার খেলা ভালো লাগত। এই বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার যাদু দেখার সৌভাগ্য হয়।
তবে ম্যারাডোনার কাছে পরাজিত হলেও ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনই ছিল আমার প্রিয় খেলোয়াড়।
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ আমার জন্য ছিল হতাশার বছর কারণ প্রচন্ড ভালো খেলেও ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে পরাজিত হয়। এই বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা জর্মানীর কাছে পরাজিত হয়। ফাইনালের রেফারিং নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছিল। বিষয়টি বাংলাদেশের আর্জেন্টাইন ভক্তদের মোটেও ভালো লাগেনি।
এদের একজন রেফারি কোডেসালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে মামলা করে দেয়।
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশর জন্য এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। যদিও বাংলাদেশের জনগণ ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাকে সমর্থণ করে, তারপরে বাংলাদেশের পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বাস করা বৌদ্ধরা ইতালিকে সমর্থন করে। এর কারণ রবার্তো ব্যাজিও। তিনি ছিলেন ইতালির মধ্যমাঠের সেরা খেলোয়াড়।
ব্যাজিও ছিল বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ব্যাজিও কক্সবাজারের এক বৌদ্ধ মন্দিরের সংস্কার কাজে অর্থ দান করেছিলেন।
তবে কেবল বৌদ্ধরা ব্যাজিও ইতালিকে সমর্থন করেনি। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম এক নায়িকা ইতালিকে সমর্থন করে। তার সমর্থণের কারণ, ইতালির ফুটবলাররা ছিলেন সুদর্শণ।
(ভিভা ইতালিয়া)
তবে তাদের চাওয়া পুরণ হয়নি কারণ ১৯৯৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। আর তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালীকে হারিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।