চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি
পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটির গৌরিপুর চটকলটি বন্ধ আছে ১৯৯৭ সাল থেকে। কারখানাটি খোলা দূরে থাক, তার চারহাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজনের বেঁচে থাকার অধিকারটুকুকে রক্ষা করতে কেউ রাজী নয়। দীর্ঘদিনের শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্য পি এফ, পেনশন গ্রাচুইটি –মেলেনি কিছুই। এদের জীবনকে রক্ষা করার দাবী নিয়ে সি পি আই এম এল এর উদ্যোগে তৈরি হয় গৌরীপুর মজদুর বাঁচাও মঞ্চ। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের দাবী নিয়ে তৈরি হওয়া এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়ায় বি সিএম এফ/ এ আই সি সি টি ইউ।
দীর্ঘদিন ধরে চলে মিছিল, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সভা, পি এফ দপ্তর ঘেরাও সহ নানা কর্মসূচী। আন্দোনলের চাপে পি এফ দপ্তর বোর্ড অফ ট্রাস্টি ভেঙে দিয়ে পেনসন দেবার ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। প্রতিবাদ কর্মসূচীর পাশাপাশি শ্রমিকদের পক্ষে বি সি এম এফ কোলকাতা হাইকোর্টে তাদের দাবী পূরণের আর্জি জানায়। সমস্ত দিক বিবেচনা করে ১৮ জুন ২০০৯ হাইকোর্ট তাঁর রায়ে পি এফ দপ্তরকে নির্দেশ দেয় শ্রমিকদের কাছে থাকা কাগজপত্রের ভিত্তিতেই শ্রমিককে তার প্রাপ্য অধিকার দিতে হবে। কিন্তু পি এফ দপ্তরের টালাবাহানা অব্যাহত থাকে, শ্রমিকদের কোন পাওনা মেলে না।
নির্লজ্জভাবে তারা জানায় সমস্ত কাগজপত্র পি এফ দপ্তর থেকে লোপাট হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার এই চরম মূল্যবৃদ্ধির দিনে চূড়ান্ত অসহয়তা নিয়ে দিন কাটাতে থাকেন।
এর মধ্যে একহাজারের বেশি শ্রমিক মারা গেছেন চূড়ান্ত অভাব, খিদের জ্বালা আর বিনা চিকিৎসায়। নিহত শ্রমিকদের বিধবা পত্নীসহ বাকী বেকার শ্রমিকরা বহুদিন ধরে সব্জী বেঁচে, রিক্সা চালিয়ে, ভিক্ষাপাত্র হাতে কোনরকমে বেঁচে আছেন। এই চূড়ান্ত অসহায়তা, তীব্র ক্ষোভ ও যন্ত্রণা থেকে বিগত ২৯ এপ্রিল তারা টিটাগড় পি এফ দপ্তর ঘেরাও করেন।
এই বিক্ষোভে তিন শতাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিকেরা তাদের চূড়ান্ত দারিদ্র ও সর্বসান্ত দশার প্রতীকী উপস্থাপনার জন্য খালি গায়ে নেংটি পড়ে ভিক্ষের থালাবাটি হাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। ছিলেন প্রয়াত অনেক শ্রমিকের বিধবা পত্নীরাও, বিধবা পেনসনের কাতর আবেদন নিয়ে। এই কাতরতার পাশাপাশি আরেকদিকে ছিল প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের প্রবল ক্ষোভ ও জংগী মেজাজ। শ্রমিকেরা অবিলম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পি এফ অফিস ঘেরাও করে রাখে।
পুলিশ এলে পুলিশ কর্তাকে প্রশ্ন করে হাইকোর্ট এর রায় অমান্যকারী পি এফ কর্তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? প্রায় চার ঘন্টা ঘেরাও চলার পর শ্রমিকদের জংগী বিক্ষোভ এর সামনে পড়ে অবশেষে জয়দীপ চক্রবর্তী, পি এফ কমিশনার, ব্যারাকপুর শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসেন ও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি অবিলম্বে বিধবাদের ভাতা চালু করার কাজ শুরু করবেন। কিন্তু এ ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে অভ্যস্ত শ্রমিকেরা দাবী পূরণের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়ে জানিয়েছে এরপর তারা উপায়ন্তর না দেখে জংগী আন্দোলনে নামবে। পি এফ দপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় এম এল এ রঞ্জিত কুণ্ডু (বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী, রাজ্য সরকার) ও স্থানীয় এম পি দীনেশ ত্রিবেদী (বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, ভারত সরকার) র গোটা বিষয়টিতে রহস্যজনক নীরবতার জন্য শ্রমিকরা তাদের ক্ষোভ ব্যক্ত করে। তাদের প্রশ্ন কে দাঁড়াবে তাদের পাশে, কবে দাঁড়াবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।