আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হয়তো দেশের পাঁচ কোটি টাকা বাঁচিয়ে দেওয়াই 'অভ্র'র অপরাধ- মেহদী হাসান খান



অভ্র কে পাইরেটেড সফটয়্যার হিসেবে দাবি করেছেন 'কয়েকজন' 'ভালো' মানুষ। তার ই প্রেক্ষিতে একটি দৈনিক পত্রিকা তার একটি ইন্টারভিউ ছাপিয়েছে। পাঠকদের জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হল। হয়তো দেশের পাঁচ কোটি টাকা বাঁচিয়ে দেওয়াই 'অভ্র'র অপরাধ- মেহদী হাসান খানবাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে যে কয়টি তুলনামূলক তথ্যবহুল এবং নিয়মিত আপডেট করা হয়, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটটি সেগুলোর অন্যতম। প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা আছে বলেই সাধারণ্যে ধারণা করা হয়।

বিশেষ করে খুব কম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রবর্তনে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ ও সাফল্য সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের কলামে অভিযোগ করা হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রবর্তনে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার বাংলা লেখার অংশটুকু একটি পাইরেটেড সফটওয়্যার। শুধু তা-ই নয়, এই পাইরেসিতে সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে ইউএনডিপির বিরুদ্ধেও। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজকূট যোগাযোগ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের বাংলা অংশটুকুতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার 'অভ্র'র প্রধান ডেভেলপার মেহদী হাসান খান-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কামরুল আহবাব জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কাহিনীটুকু যদি বলেন! দ্রুততম সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র চালু করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কাজ করছিল।

এই কাজ করতে গিয়ে একটি সমস্যা দেখা দেয়। নির্বাচন কমিশন এ সময়ে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছিল সেটিতে সরাসরি বাংলা লেখা যেত, কিন্তু প্রতিটি ল্যাপটপের জন্য সেটির লাইসেন্স কিনতে হতো আলাদা আলাদাভাবে। যখন বড় আকারে কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হলো, তখন দেখা গেল নির্বাচন কমিশন এই কাজে হাজার হাজার ল্যাপটপ ব্যবহার করবে। এবং ওইসব ল্যাপটপের জন্য আলাদা করে সফটওয়্যার কিনতে গেলে সেখানেই কয়েক কোটি টাকার প্রয়োজন। তখন কমিশন উদ্যোগ নেয় নিজেরাই একটি সফটওয়্যার তৈরি করার।

এ সময় এই নতুন সফটওয়্যারে ডাটা এন্ট্রির জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। ততদিন 'অভ্র' এ দেশে বাংলা লেখালেখির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, সুতরাং তারা নতুন করে বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরি না করে 'অভ্র'কেই বেছে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিল। নির্বাচন কমিশন এরপর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আমরা সানন্দে 'অভ্র' ব্যবহারের সম্মতি দিই এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করি। সম্প্রতি একটি পত্রিকার কলামে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এটি একটি পাইরেটেড সফটওয়্যার।

এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? হাস্যকর ও দুঃখজনক মন্তব্য। ব্যক্তিগত এবং কমার্শিয়াল যে কোনো কাজে ব্যবহার করার জন্য অভ্র বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, এ জন্য এমনকি আমাদের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশনের কাজে ব্যবহারের জন্য আমরা 'অভ্র' বাবদ কোনো টাকা নিইনি বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধাও চাইনি। যেখানে আর্থিক কোনো সুবিধার প্রশ্ন নেই, সেখানে পাইরেসি করার প্রয়োজন পড়েছে কার? আপনারা কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন! কেন? দেখুন, আমরা কাজ করছি বাংলা কম্পিউটিং নিয়ে, কিভাবে কম্পিউটারে বাংলা লেখার পদ্ধতি আরো সহজ করা যায়, কিভাবে সেটা বিনা মূল্যে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ছিল আমাদের দেশের জন্য একটি মাইলফলক।

সাধারণ ব্যবহারকারীরা উপকৃত হওয়ার সঙ্গে দেশের এত বড় একটা কাজে অংশগ্রহণ করাই ছিল আমাদের জন্য আনন্দের এবং গর্বের বিষয়। বাংলা ভাষা জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগের সঙ্গে, টাকা-পয়সার কোন সম্পর্ক এখানে নেই, কোনোদিন আসবেও না। তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে পাইরেসির অভিযোগ উঠছে কেন? এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কেউ হয়তো মনে করতে পারেন, দেশের পাঁচ কোটি টাকার খরচ বাঁচিয়ে দিয়ে আমরা কারো ব্যবসায় হস্তক্ষেপ করেছি, এ জন্য ক্ষুব্ধ হতে পারেন। এটাই হয়তো 'অভ্র'র অপরাধ।

আমাদের কাছে যখন সুযোগ এসেছে বিনা মূল্যে অভ্র দিয়ে এ টাকা বাঁচিয়ে দেওয়ার, সেটি আমরা করেছি। যে সফটওয়্যারের কীবোর্ড লে-আউট আমরা পাইরেসি করেছি বলে সফটওয়্যার নির্মাতা অভিযোগ করছেন, তা কোনো অবস্থাতেই ধোপে টিকবে না। ব্যাখ্যা করে বলি, অভ্রতে ফনেটিক, ফিক্সড এবং মাউসভিত্তিক_এই তিনভাবেই বাংলা লেখা যায়। যে লেআউটের ব্যাপারে এই মন্তব্য করা হয়েছে, সেই সফটওয়্যারের সঙ্গে আমাদের এই লেআউটের অন্তত আটটি কী'র তফাৎ আছে। ব্যবহার পদ্ধতিতে আছে অসংখ্য পার্থক্য।

একটি কী'র তফাতেই যেখানে নতুন কীবোর্ডের জন্ম হতে পারে, সেখানে এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সেটি কিভাবে পাইরেসি হয়, সেটা আমি কেন, তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত কোনো মানুষেরই বোধগম্য হবে না। মাইক্রোসফটের অফিস আর ওপেন অফিসের মাঝে মিল আছে প্রচুর, তাই বলে ওপেন অফিস কি মাইক্রোসফট অফিসের পাইরেটেড কপি? ইউনিকোডে বাংলা লেখায় উইন্ডোজে অভ্র সফটওয়্যারটিই প্রথম এসেছিল। এখন যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, ব্লগগুলোতে, ফেইসবুকে বাংলা লেখার জোয়ার এসেছে, বিনা মূল্যে সহজ একটি বাংলা লেখার সফটওয়্যার না থাকলে কোনোদিন তা সম্ভব হতো না। ধীরে ধীরে এই জোয়ার ছড়িয়ে পড়বে প্রিন্ট মিডিয়াতেও। এখন যেহেতু আমাদের এই সফটওয়্যারটি বিনা মূল্যে যে কেউ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন, তখন অনেকেই আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

সরকার এখন 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' স্লোগান দিচ্ছে_এ বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি? এ দেশের আউটসোর্সিংয়ে এখন বিশ্বমানের কাজ হয়। ইউরোপ বা আমেরিকার যে সাইটটি আপনি ব্যবহার করছেন, খুব বেশি সম্ভাবনা আছে সেটা এ দেশেরই কোনো মেধাবী তরুণের ডেভেলপ করা। আমার এই কথা বলার কারণ হলো, দেশের সরকারি-বেসরকারি কাজগুলো যদি যোগ্য লোক দিয়ে দেশেই করানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনার আশঙ্কা কমে আসবে অনেক। সুদূর ইউরোপ-আমেরিকা থেকে মানুষ যদি বাংলাদেশের এক জন ডেভেলপারকে খুঁজে বের করে কাজ দিতে পারে, এদেশের সরকার সেটা পারবে না কেন? যথাসম্ভব মুক্ত সফটওয়্যারের ওপর এখন থেকেই গুরুত্বারোপ করা দরকার। দেশে যখন সব কিছু কম্পিউটারের আওতায় আনা হবে, তখন প্রচুর সফটওয়্যারের প্রয়োজন পড়বে।

আমাদের মতো গরিব দেশের পক্ষে এত ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন। আমাদের দেশের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে ওপেন সোর্সের ওপর জোর দেওয়া খুবই প্রয়োজন। সরকারের উচিত হবে ভবিষ্যতে কোনো সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের হাতে কুক্ষিগত না হয়ে দেশের তরুণদের বেশি বেশি করে কাজে লাগানো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।