আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পথিক

দ্যা ব্লগার অলসো.....

লেখালেখির একেবারে শুরুর দিকের কাজ এটি। অবাক হয়ে ভাবি, মানুষ দিন দিন পরিপক্ক হয়, অথচ আমার বেলায় ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। যতোই দিন যাচ্ছে, লেখনী সত্তা আমাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে দুরে সরে যাচ্ছে। লেখাটা পেন্টিয়াম ১ এর হৃদয়ে ছিলো। ভেবেছিলাম, পাওয়া যাবেনা।

কিন্তু খুলু ঠিকই বের করে ফেললো। ধন্যবাদ তাকে। টিক্ টিক্ ...! এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা ! ঘুরছে যান্ত্রিক নিয়মে, এবং জানিয়ে দিচ্ছে সময় থেমে নেই । একমনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ফাহিম । গত দু’মাস ধরে এই একটি কাজই করছে সে।

রিপোর্টটা পাওয়ার পর ড. ফারহান খান যখন বললেন : ‘ কথাটা তোমাকে বলতাম না, ফাহিম । তোমার কোনো নিকটাত্মীয় নেই যাকে ব্যাপারটা বলা যায়, তাই বাধ্য হয়ে তোমাকেই বলতে হচ্ছে। তোমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে ! অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও বিদেশে এর একটি চিকিৎসা আছে “বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট” ! কিন্তু এমন একটা স্টেজে এসে তোমার রোগটা ধরা পড়লো, যখন আর কিছুই করার নেই । তোমাকে বলতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে যে, খুব বেশি হলে আর দু’মাস বাঁচবে তুমি !’ ড.ফারহান এদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের একজন । তিনি ফাহিমকে বলেছিলেন,‘ মন খারাপ কোরো না, ফাহিম, এ পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না; তুমি না হয় একটু আগেই গেলে ! রিয়েলিটিকে মানতেই হবে ! তবুও তুমি একজন ভালো ডাক্তারকে দিয়ে চেক করিয়ে দেখতে পারো।

’ কথাগুলো ফাহিমের কানে যায় নি । সে ভাবছে দু’মাস খুব অল্প সময় ! বিধাতা তার জন্যে দু’টি মাস বরাদ্দ করেছেন। ষাটদিন এ পৃথিবীর আলো-হাওয়া সে উপভোগ করতে পারবে, তারপরই সব শেষ! বাসায় আসার পর হঠাৎ করেই ফাহিমের মনে হলো, দু’মাস যদি পৃথিবীর আলো-হাওয়া সে উপভোগ করে তাহলে লোভ বেড়ে যাবে। কী লাভ মায়া বাড়িয়ে ! সিদ্ধান্ত নিলো,যাবে না, বাইরে যাবে না সে ! দেখবে না পৃথিবীর রঙ-রূপ ! তারপর থেকেই চারদেয়ালের ভিতর নিজেকে বন্দি করেছে সে ! প্রথমেই সে বাসা বদল করেছে,তারপর রিজাইন দিয়েছে চাকরিতে। বস্ চোখ কপালে তুলে বলেছিলেন,‘কী ব্যাপার,ফাহিম? ইজ অ্যানিথিং রং?’ ‘না স্যার,চাকরি ভালো লাগছে না।

’ ম্লান হেসে জবাব দিয়েছিলো সে। মনে মনে বলেছিলো- ইয়েস স্যার, এভরিথিং ইজ রং ! কোনো কিছুই ঠিক নেই। মায়ের পেটে থাকতেই পিতৃহারা হয়েছি, জন্মের পাঁচ বছরের মাথায় হারিয়েছি মাকেও ! তারপর বড়ো হয়েছি এতিমখানায় । তিলতিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছি, লেখা-পড়া শিখে অনেক কষ্টে পেয়েছিলাম এই চাকরিটা; ভেবেছিলাম নাহিনকে বিয়ে করে ছোট্ট একটা সংসার গড়ে তুলবো। হলো না ,কিছুই হলো না ! দিন-রাত এখন রূমের মধ্যেই কাটায় ফাহিম।

সারা ঘর অন্ধকার করে রাখে। সারা ঘরের মধ্যে একটা জিনিসই শুধু আলোকিত,সেটা হচ্ছে ঘড়ি। রেডিয়াম লাগানো ঘড়ির কাঁটা রাতের অন্ধকারেও নির্দয়ভাবে জানিয়ে দিচ্ছে : সময় ফুরিয়ে আসছে ! শুয়ে-শুয়ে ঘড়ির দিকে একমনে তাকিয়ে আছে ফাহিম ;ভাবছে সময়ের সাথে সাথে আয়ুও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত! আশ্চর্যের ব্যাপার, ফাহিমের কোনোকিছুর জন্যে এতোটুকু মায়া হচ্ছে না ! ও ভেবে দেখেছে ওর কোনো পিছুটান নেই,শুধু একজন, শুধু একটা মানুষের জন্যে প্রচন্ড ইচ্ছে করছে বেঁচে থাকতে । ওর কথা ভাবলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে ! ও না থাকলে মরে যাওয়াটা কোনো সমস্যা ছিলো না ফাহিমের জন্যে । ওর নাম নাহিন ।

ফাহিম ভেবে পায় না একটা মেয়ে নিজের মধ্যে এতোটা মায়া কিভাবে ধারন করে !ওর প্রতি নাহিনের ভালোবাসা মাঝে-মধ্যে প্রচন্ড বিস্ময়ের জন্ম দেয় ফাহিমের মনে। একবার ফাহিম মজা করে বলেছিলো,‘আচ্ছা,নাহিন, আমি যদি হঠাৎ মরে যাই, তুমি কী করবে ?’ নাহিন কোনো কথা বলেনি। এরপর একসপ্তাহ ওর সাথে দেখা করেনি , কোনো যোগাযোগও করেনি । একসপ্তাহ পর ফাহিমের ফোন রিসিভ করে ও। ফাহিম জিজ্ঞেস করে,‘নাহিন,কী ব্যাপার,তুমি কোনো যোগাযোগ করোনি কেন এতোদিন?' টেলিফোনে শোনা গেলো কান্নার শব্দ! বললো,‘তুমি আমাকে কেন কষ্ট দিলে ?’ ফাহিম কিছুই বুঝতে পারে না,বলে ‘নাহিন,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!’ ‘তুমি যদি আর কখনো মরার কথা বলো,তাহলে আমি কোনোদিন তোমার সামনে যাবো না !’ ফাহিম হতভম্ব হয়ে পড়ে ।

বুঝতে পারে, নাহিন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে ওকে। আর আজ ! সেই মজা করে বলা কথাটাই সত্যি হতে চলেছে। বেচারি নাহিন ! না জানি এখন কতো কষ্ট করছে ওর খোঁজ পাওয়ার জন্যে ! ডাক্তারি রিপোর্ট পাওযার পর আজ একমাস পেরিয়ে গেছে। একটু-একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ফাহিম। চোখ দুটো গর্তে বসে গেছে, অনিদ্রায় চোখের নিচে পড়েছে কালি।

শরীরে আগের মতো বল পায় না। শুয়ে-শুয়ে শুধু নাহিনের কথা ভাবে,আর ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কাটে। নাহিনকে খুব মনে পড়ে। ওর সুন্দর চোখ দুটো দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছে করতো ফাহিমের। একদিন নাহিনকে সে বলেছিলো, ‘নাহিন, তোমার চোখ দুটো খোদা নিশ্চয়ই অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছেন, নইলে ও দুটো এতো সুন্দর হবে কেন ?’ এই দেখো ! ওর কথা ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো ফাহিমের।

মনের জোর কমে আসছে ওর। আস্তে-আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বুঝতে পারছে ফাহিম,সময় শেষ হয়ে আসছে ! প্রথম প্রথম তেমন সমস্যা মনে হচ্ছিলো না মৃত্যুকে। ;নাহিনই সব ওলট-পালট করে দিচ্ছে! ওকে ছেড়ে যেতে হবে ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। হঠাৎ মনের পর্দায় অন্যরকম একটা দৃশ্য ফুটে উঠলো ফাহিমের।

বধূ বেশে নাহিনকে দেখতে পেলো ও কল্পনায়। কী সুন্দরই না লাগছে ওকে ! লাল রঙের বিয়ের শাড়ি,খোঁপা-করা চুল, চোখে কাজল, সিঁথির মাঝখানে খুব সুন্দর করে বসানো টিকলি, কপালে টিপ ! নাহিনের পাশে নিজেকে দেখতে পেলো ফাহিম। দেখতে খুব ভালো লাগছে ওর। হঠাৎ ফাহিম আবিস্কার করলো,নাহিনের পাশে যে-লোকটা বসে আছে সে ও নয় ! সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন লোক ! নাহিনের ফর্সা অনাবৃত কাঁধে হাত রেখেছে লোকটা,আস্তে-আস্তে টানছে নিজের দিকে। তারপর সজোরে ওকে জড়িয়ে ধরলো লোকটা,নেমে আসছে কামনা মদির একজোড়া ঠোঁট ! ‘নাহ!’ চিৎকার করে উঠলো ফাহিম ।

আর ভাবতে পারছে না সে। নাহিন অন্য কারো হয়ে যাবে, এই নিষ্ঠুর সত্যটা উপলব্ধি করে মনের ভেতরটা গুমরে কেঁদে উঠলো তার। *** ফ্যানের হাওয়ায় কাগজগুলো এদিক সেদিক উড়তে লাগলো । টুকরো টুকরো কাগজগুলোয় এলোমেলো করে লেখা‘নাহিন শুধু আমার, নাহিন শুধু আমার’। একটা করে লিখছে আর বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে।

সময়সীমা দু’মাসের মধ্যে আজ ১ মাস ১৫দিন অতিবাহিত হতে চললো। ইতিমধ্যে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে ফাহিম। হঠাৎ মোবাইলে রিং হলো। রিসিভ করলোনা ফাহিম। তারস্বরে খানিক চিৎকার করে ক্ষ্যান্ত দিলো ওটা।

এই একটা জিনিস,মোবাইল-এখনো ত্যাগ করেনি ফাহিম। কেন নিজেই জানে না। প্রতিদিন কয়েকটা ফোন আসে । ধরে না ও। হাওয়ায় উড়ে একটা কাগজ এসে মুখে লাগলো।

লেখা ‘নাহিন শুধু আমার’। হাসল ও। নাহিন আমার থাকবেনা। হয়ে যাবে অন্য কারো। যতোই ভালোবাসা থাকুক,মরা মানুষকে বেশিদিন কেউ মনে রাখেনা।

ভাবতেই ক্রোধে ফুঁসে উঠলো ভেতরটা। না, নাহিনকে ছেড়ে আমি যাবো না। ওকে ছাড়া আমার কোনো মতেই চলবেনা। অসহায়ের মতো ভাবনাটা অস্থির করে তোলে ফাহিমকে। ‘মরতে হবে নাহিনকেও!’ বিদ্যুৎচমকের মতো ভাবনাটা অবশ করে দেয় ফাহিমকে।

ম্যানিয়াক বলে গাল দেয় নিজেকে। এতোটা নীচ চিন্তা কিভাবে মাথায় এলো ওর। সন্দেহ নেই পাগল হয়ে গেছি আমি,ভাবলো ফাহিম। নইলে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় যে তাকে খুন করার কথা ভাবে কেউ? আগামী পর্বে সমাপ্য

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।