খাগড়াছড়িতে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার পর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় শহরের শালবন এলাকা থেকে আনোয়ার হোসেন নামে এক পৌর কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে দুপুরে খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ইউপিডিএফের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলার সময়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এদিকে, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাটে সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফের ডাকে গতকাল অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। কাউখালীতে অবরোধকারী ইউপিডিএফ কর্মীরা ৬টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
তাদের হামলায় কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়। পুলিশ এসময় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। খাগড়াছড়িতে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে ভোরের কাগজ ও দেশটিভির সাংবাদিক মংসাপ্র“ মার্মাসহ ৫ জন সাংবাদিক আহত হন। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাগড়াছড়ি শহরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। সন্ধ্যায় জারি করা হয় কারফিউ।
নিহত ব্যক্তি খাগড়াছড়ি পৌরসভার কর্মচারী। সংঘর্ষে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাগড়াছড়ি শহরে ব্যাপক পুলিশের পাশাপাশি সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২১ জনকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহতদের মধ্যে ২ জন গুলিবিদ্ধ, ও বাকিরা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছে।
এদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ পুলিশ সদস্য হলেন কনেস্টবেল তুহিন (৩০) ও বাদল (৩৬)। অন্যান্য আহতরা হলেন পংকজ (২২), বাবু (৩৪), পলাশ বড়-য়া (১৯), শাহীন (২১), আপন চাকমা (২৮), সোহেল চাকমা (১৮), মোহাম্মদ আলী (৩৬), মোঃ জাহাঙ্গীর (২৫), মোঃ মোস্তফা (৩২), মোঃ ফরিদ (৩১), মোঃ রাসেল (৩৫), সাইফুল ইসলাম (১৬), কামাল (৩১), আহাম্মদ উল্লা (৪৫), আবুল কাশেম ২৫, সেলিম ২৫, তপন চাকমা (৩৮), নান্টু চাকমা (২৪), নীলাপ্র“ মারমা (২৯) ও মাহিদুল ইসলাম (২৯)। খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়া, বাস টার্মিনাল এলাকা, রসুলপুর, সাতবাড়িয়া পাড়া, মধুপুর, খবং পুড়িয়া এলাকা, হরিণা পাড়া, নারিকেল বাগানসহ বেশ কিছু এলাকায় অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এতে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় পক্ষের শতাধিক বাড়ি ভষ্মীভূত হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ কারফিউ জারি হওয়ায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় সংবাদকর্মীসহ শত শত মানুষ আটকা পড়েন। দুপুরে অবরোধ চলাকালে অবরোধকারীরা শহরের শাপলা চত্ত্বর, মহাজন পাড়া, খবং পুড়িয়াসহ বেশ কিছু এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। এ সময় অবরোধকারীরা বেশ কিছু দোকানপাট, গাড়ি ও রিকশা ভাঙচুর করলে অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সংঘর্ষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।