গতকালও তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে দাবি আদায়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গতকাল বিকালে শিক্ষা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যৌথ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে 'পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় সুপারভাইজার নন বরং দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে
বিবেচিত হবেন' বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ঘোষণার পর ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। তারা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সময় দিয়েছেন ১৫ দিন।
সভা শেষে এ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী ছাত্রদের সংগঠন বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন। জাকির হোসেন বলেন, সরকার আমাদের দাবি পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবি যেন ১৫ দিনের মধ্যে পূরণ করা হয়। সে পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে। শিক্ষার্থীরা এ সময় রাজপথে থাকবে না।
তবে যেসব শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ যৌথ সভা শেষে শিক্ষা সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও গৃহায়ন সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তারা জানান, পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। এ বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। গৃহায়ন সচিব বলেন, একটা ভুল ধারণা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এরই মধ্যে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আমরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবেই বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনোভাবেই সুপারভাইজার পদ তৈরি করিনি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চাকরিতে যোগদানের সময় তাদের পদ হবে উপসহকারী প্রকৌশলী। শিক্ষা সচিব বলেন, আশা করি শিক্ষার্থীরা এখন তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেবেন। তারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবেই বিবেচিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব পরীক্ষা বর্জন করেছেন, সেসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। সভায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইসলামপুরে শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালান ও গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়। এ সময় ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
পরে পুলিশ ২৯ রাউন্ড টিয়ার শেল ও ৮৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন, এসআই শাহ আলম, এসআই খায়রুল বাশারসহ সাতজন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে অর্ধশত ছাত্র আহত হন। এ সময় রাস্তার উভয় পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ফেনী : সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা লাঠি হাতে বিক্ষোভসহকারে শহরের ট্রাঙ্ক রোডের দিকে যান। এ সময় তারা ফেনী মডেল থানার পরিদর্শকের গাড়িসহ রাস্তার দুই পাশে চলাচল করা প্রায় ১০০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
পরে পুলিশ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ওপর চড়াও হয়ে প্রায় ১৫০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ ও চার সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করে।
সিলেট : বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে শ্রমিকরা ধাওয়া করেন।
এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর বেলা দেড়টায় পিছু হটেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। পরে গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিকাল ৪টায় পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। ভোলা : বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধ, যাত্রীবাহী বাসে হামলা, ভাঙচুর ও অধ্যক্ষের কার্যালয় ভাঙচুর করেন।
একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
রাজশাহী : রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হওয়া প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৩৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কিছু চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ। এ ছাড়া রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পটুয়াখালী : বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী-কলাপাড়া মহাসড়কের করমজাতলা এলাকায় একটি বিআরটিসি বাসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হন। অন্যদিকে, পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পুলিশের মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাত ১ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশ পৃথক দুটি মামলা করেছে। কুমিল্লা : কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষ এবং ইউএনওর গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে ২ হাজার জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে।
২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে ফের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এবং বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় সড়কের উভয় পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে অবরোধ।
চুয়াডাঙ্গা : শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বগুড়া : বগুড়া পলিটেকনিক ও টিটিসির কারিগরি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান।
পুলিশ ৩ রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়েছে। এদিকে ছাত্রদের ভাঙচুরের প্রতিবাদে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিকরা একটি লাঠিমিছিল বের করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।