আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অডিও পাইরেসির নতুন কৌশল

পাইরেসির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত দেশের অডিও শিল্প। প্রায় ধ্বংসের পথে সংগীতাঙ্গন। সম্প্রতি ধ্বংসের পথে আরও একধাপ এগিয়েছে সংগীতাঙ্গন। আর এ জন্য দায়ী পাইরেসির নতুন কৌশল। আজ অল্প টাকায় পাওয়া যাচ্ছে হাজার হাজার গান। আইনে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সারা দেশে প্রায় লক্ষাধিক দোকানে চলছে পাইরেসির নতুন কৌশলে ব্যবসা।

সম্প্রতি 'ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট লি' শিরোনামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছে দেশের ছোট-বড় প্রায় ৪৫টি অডিও প্রতিষ্ঠান মিলে। এর মধ্যে লেজার ভিশন, সিএমভি ও সিডি চয়েজের মতো প্রতিষ্ঠানও। ২৫০টি দোকান নিয়ে একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছে 'ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট লি.'। যাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে এককালীন ৫০০০ টাকা ও প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে। আর এর বিনিময়ে তাদের হাতে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার গানের সফট কপি। আর সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে মোবাইল ও কম্পিউটারে।

সম্প্রতি এ খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সংগীতাঙ্গনে দেখা দেয় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। শিল্পীরা বিষয়টিকে অনৈতিক হিসেবে দেখছেন। কিন্তু যারা এর সঙ্গে যুক্ত তারা বলছেন উল্টো কথা। লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান বলেন, 'ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট লি. কোনো অবৈধ প্রতিষ্ঠান নয়। আমরা সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই যাত্রা শুরু করেছি। কিন্তু আমরা এখনো কাউকে বিষয়টি জানাইনি। আমরা সরকার ও প্রশাসনকে নিয়ে পাইরেসি বন্ধের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। তাই প্রতিষ্ঠান শিল্পীর স্বার্থে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা বাজারে সেই সব গানই দিচ্ছি যারা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। সময় হলে আমরা বিষয়টি সবাইকে জানাব।'

সিএমভির মালিক এম কে শাহেদ আলী পাপ্পু বলেন, 'আমরা সারা দেশে পাইরেসি বন্ধের জন্য বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রম চালিয়েছি। পুলিশকে নিয়ে অনেক কম্পিউটার জব্দ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কয়েকদিন পর তারা আবার নতুন কম্পিউটার কিনে আবার সেই ব্যবসা শুরু করেছে। দোকানিরা আমাদের বলেছেন আপনারা এমন একটি পদ্ধতি বের করেন যাতে করে আমরাও কিছু টাকা পাব আর আপনারাও কিছু টাকা পান। কারণ আমরা বাঁচলে শিল্পীরা বাঁচবে। আর তাই আমরা প্রায় ৪৫টি প্রতিষ্ঠার মিলে একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছি। আমরা যদি মনে করি এটি আমাদের অডিও শিল্পের জন্য ভালো হবে তাহলে আমরা সামনে এগোব, না হলে সামনে আর এগোব না।'

ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্তরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও সংগীতশিল্পীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বিষয়টিকে পাইরেসির নতুন কৌশল হিসেবেই দেখছেন। আর এতে করে শিল্পীরা আরও বেশি ঠকছেন বলে দাবি করেন তারা। যাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে শুধু তাদের গানই মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে বলে যে দাবি অভিযুক্তরা করছেন তার বিপক্ষে গীতিকার-প্রযোজক জুলফিকার রাসেল বলেন, শেষ অ্যালবাম নিয়ে আমার চুক্তি হয়েছে লেজার ভিশনের সঙ্গে। এখানে ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিঃ কারা? আমি এদের চিনি না। তাহলে আমার গান কেন তারা মোমোরি কার্ডের মাধ্যমে বিক্রি করবে? যদি চুক্তির কথা বলেই তাহলে বলব, এভাবে গান বিক্রি করা হবে এটা জানিয়ে কিন্তু আমার সঙ্গে চুক্তি হয়নি। আমি মনে করি এ পদ্ধতিতে শিল্পীদের ক্ষতি আরও বেশি হচ্ছে। কারণ আমি কি করে বুঝব আমার অ্যালবাম কেনার জন্য কোন শ্রোতা কত টাকা দিয়েছে?'

এদিকে শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এ পদ্ধতির সুফল এবং কুফলের সম্ভাবনা মিলিয়ে বলেন, 'একেবারেই না পাওয়ার চাইতে কিছু পাওয়া ভালো। আমি মনে করি ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্ট যদি শিল্পীর স্বার্থের কথা চিন্তা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তবে সুফল বয়ে আনবে। তবে সবকিছুর মধ্যে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। সবাইকে জানিয়ে করতে হবে। আসুন আমরা এক টেবিলে বসে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে কাজ করতে পারি সেই আলোচনা করি।'

সবমিলিয়ে ওয়ার্ল্ড এন্টারটেইনমেন্টের পদ্ধতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। এই প্রতিষ্ঠানটির দাবি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধদের গানই শুধু নতুন কৌশলে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর বাইরের শিল্পীদের গানও তারা এভাবে বিক্রি করছেন। তাই শিল্পীদের ক্ষোভের পরিমাণও বেশি। আবার কিছু শিল্পী এই কৌশলের সুফল খোঁজার চেষ্টা করায় সৃষ্ট ধূম্রজালের ধোঁয়ায় বিভ্রান্ত অনেকে। তাই বিষয়টি সময়ের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন সবাই। সময়ই নির্ধারণ করবে বিষয়টি কোন পথে যাবে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.