দ্য ইনভিজিবল
ছন্দ হারিয়ে যায়....।
অতীতের মোহময়ী সময়ের আকুল আবেদনে জেগে উঠে সুখপাখি । যখন সব আলো নিভে যায়, তখন ছড়িয়ে যায় জোছনার ধবল আলো। পথিকের ধূলোমাখা পা' থেকে দুরের নিমগাছের পাতায়, হলুদ কদমফুলের ফুলকিতে।
বালিকা,
জোছনা রাতের তারায় ভীষন উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
হয়ে উঠে তারা। বালিকা তারা।
তার মানসলোকে জেগে থাকে অমিমাংসিত রূপকথার ঝুলি আর নিশীথে জেগে জেগে উপুড় হয়ে পড়ার কাব্য। পায়ের নূপুর রিনিঝিনি বাজে। নাকফুল ছড়ায় সোনালী আলো।
বালিকা নিজেই হয়ে উঠে রূপকথা,কাব্যের উৎস।
আস্ত কবিতা।
তার অস্থির কালো চোখের তারা নাচে অবিরত। চোখ তুলে আকাশ,জোছনা আর তারার আলো দ্যাখে। কখনো নিজেই হয়ে উঠে আকাশ,জোছনা আর তারার আলো।
লাল টিপ জেগে থাকে গনগনে সূর্য্য হয়ে। কপালে হাত চালিয়ে পরখ করে লাল টিপের স্থানচ্যুতি। বালিকা হয়ে উঠে লাল টিপ। তার দীঘল কালো চুল, নরম খোঁপার বাঁধন খুলে যায় বাতাসে।
বালিকা বাতাস হয়ে উঠে।
হয়ে উঠে নূপুরবাদক।
............................................................................................
আমি চাঁদ।
প্রতি আঁধারে চারদিকে বিলিয়ে যাই। আমার আলোর ছায়া জমে নিম গাছের মগ ডালে, পথিকের পায়ের ধূলোয় আর বালিকার নাকফুলে, রুপোর নূপুরে। কাছে টেনে নিই দীঘির জলের মায়া।
স্নিগ্ধ কলাপাতার গায়ে মেখে যাই রঙ। চিকমিক সোনালী ধানের ক্ষেতের শেষে যে ভরা নদী পড়ে, যেখানে কাশফুল ফুটে আছে, যেখানে বালিকাদের বাস, সেখানে চলে যাই এক লহমায়। বালিকার নুপুরের শব্দ, তার 'তারা হয়ে উঠা দেখে আমি কাছে টানি নাকফুলের আলোকচ্ছটা। আমার ভিতরের প্রভা জেগে উঠে কদম ফুলের ঘ্রাণে।
তাকিয়ে থাকি বালিকাদের বাঁধা নৌকার ছইয়ে আর বেদিনীর সাপের ঝুড়ির বাঁধনে।
তার কবিতা পড়া কিংবা আস্ত কবিতা হয়ে উঠা, লাল টিপের স্থানচ্যুতি দেখে হেসে গড়িয়ে যাই।
............................................................................................
বালিকা কবিতা পড়ে।
"ভরা সাঁজে আঁধার হয়ে এসে আমি এসে শুধাই ডেকে তারে,
'তোমার ঘরে সকল আলো জ্বেলে এ দীপখানি সঁপিতে যাও কারে ?
আমার ঘরে হয়নি আলো জ্বালা,
দেউটি তব হেথায় রাখো বালা!'
আমার মুখে দুটি নয়ন কালো ক্ষণেক-তরে রইল চেয়ে ভুলে;
সে কহিল, 'আমার এ যে আলো
আকাশপ্রদীপ শূন্যে দিব তুলে!'
চেয়ে দেখি শূন্য গগনকোণে
প্রদীপখানি জ্বলে অকারণে। "
............................................................................................
একদিন আমি পথিক হয়েছিলাম।
বালিকাদের বসতি যে গাঁয়ে, সে গাঁয়ের পথে হেঁটে ছিলাম।
কতশত নীল ফুল ফুটে আছে ভরা যৌবনা বিলের পাড়ে । কত ধূলা জমে গেছে রাঙা পথের ধারে। আমি অনবরত হেঁটেছি। শাপলা ফুল তুলে নিয়ে মালা বানাতে পারি না। বালিকা নিশ্চয় মালা বানায়।
যখন একাকী নিশ্চুপ রাতে জোছনা পোহায়, তখন অলস ক্ষণে গড়ে তোলে নীল ফুলের মালা। আমি তার হাতে মালা বানাবো। একা হাঁটছি হলুদ সরষে ফুলের ক্ষেত মাড়িয়ে, কদমফুলের ফুলকি ঝরিয়ে। পথে যেতে যেতে
পথের ধারে কুড়িয়ে পেলাম সোনার নাকফুল।
............................................................................................
সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমেছে গভীর হয়ে।
মেলে দিলাম আলোর পাখনা। জেগে উঠলো চরাচর,নদীর পাড়, বালিকার পৃথিবী। আমি হাসলাম তার চোখে।
বালিকা হাসলো না আজ মুক্তঝরা। মন খারাপ।
তার নাকফুল হারিয়ে গেছে কোন ধূলোমাখা পথের ধারে। চোখের তারা জ্বালিয়ে খুঁজে ফিরেছে মিছে। বালিকার হাসি নিস্প্রভ। হয়ে উঠেছে ধূসর। তার হাতের নীল ফুল শুকিয়ে গেছে।
মালা গাঁথা হয়নি। কবিতার খাতা পড়ে আছে ব্যাকুল। অবিন্যস্ত কালো চুল,খোঁপা। কপালের লালসূর্য্য স্থানচ্যুত কি না, বালিকা চেয়ে দেখেনি। আমার কষ্ট হতে লাগলো।
বালিকা কেন ধূসর হলে? হেসে ফেল কুটিকুটি।
বালিকা হাসে না। আমার কান্না জমে সবুজ ঘাসে শিশির হয়ে। আমি রেগে উঠি। নিয়ে আসি একখন্ড উড়াল মেঘ।
ঢেকে যাই। বালিকার চোখের আড়াল হতে থাকি নিমিষেই।
ব্যস্ত হয়ে উঠে সে। অস্থির চোখের তার 'তারা জেগে উঠে ।
আমি রেগে যেতে থাকি,
যেতেই থাকি।
কদমের ফুলকি ছুঁড়ে মারি তার নাগের ডগায়।
..................
বালিকা খুঁজে নেয় নাকফুল, কবিতার খাতা, জ্বালিয়ে নেয় চোখের তারা, হাতে তোলে নীল ফুল, পরখ করে লালটিপ। অতি ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাসে কুটিকুটি। ভীষন মলিন।
.................................
আমি হাসি না।
ভীষন রেগে যাই। ঢেকে যাই ।
বালিকাকে চন্দ্রগ্রস্থ করে রাখি রাতভর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।