আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্দুস সামাদ: একটি জীবন দর্শন



বৈচিত্রময় আমাদের জীবন। বৈচিত্রময় জীবনে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় নানা ভাবে নানা উপায়ে । এখানে কারো রয়েছে মানসিক শ্রম কারো রয়েছে শারীরিক শ্রম। এই দুই শ্রমে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। কেউবা মানসিক শ্রমে ঘন্টায় যা আয় করে অন্যজন শারীরিক শ্রমে তা দিনে আয় করে থাকে।

শারীরিক শ্রমে রয়েছে অবিরাম খাটুনি। সারাদিন পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। বর্তমান তৃতীয় বিশ্বে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে শারীরিক শ্রম দিয়ে জীবিকা করে এদের সংখ্য্ইা বেশী। এমনি একজন পরিশ্রমী ব্যক্তি নাম আব্দুস সামাদ। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানার চকপাড়া খাড়িজাগাতি গ্রামে।

চেহারায় যেন কঠোর পরিশ্রমের ছাপ দেখা যায় । যে কেউ দেখলে মনে হবে যেন ব্যন্ততা তার নিত্য সঙ্গী। কথা হয় তার সাথে। কথা হয় সবিস্তারে তার জীবিকা নির্বাহের প্রারম্ভিকতা নিয়ে। লেখা পড়া তেমন জানা নেই ।

জীবনে বাঁচার তাগিদে প্রথমে রাজশাহীর একটি স্থানীয় কারখায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। এ থেকে যা পারশ্রমিক পায় তা দিয়েই কোন রকম দিন চলে যায়। এভাবে অতিবাহিত হয় প্রায় ছয় বছর। এভাবে আর কতদিন চলে? পরিবর্তন হয় তার পেশায় । সে মনে মনে ভাবে এভাবে আর জীবন চলে না ।

শুরু করে অন্যরকম জীবন। শুরুটা হয় রাজশাহীর সাহেববাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সাগর পত্রিকার বিক্রেতা হিসেবে। যাকে বলা হয় পত্রিকা হকার। এ পেশায় তার আগ্রহ ও কৌতূহল আরো বেড়ে যায়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় আয় যৎ সামান্য তবুও এ পথেই যেন তার এগিয়ে চলা।

পরে সহকর্মীদের পরামর্শে সে চলে আসে দৈনিক রাজশাহী বার্তা পত্রিকায় । দৈনিক পত্রিকা বিলি ও বিক্রি করতে থাকে প্রায় ৬০ টি করে। পত্রিকা বিক্রি করে তার দৈনিক আয় হয় ১৭ টাকা। এই সামান্য কটা টাকা উপার্জন করতে তাকে প্রতিদিন ১৮ কিলোমিটার গোদাগাড়ি থানা চষে বেড়াতে হয়। সে এতেই আনন্দ অনুভব করে।

ঘুরে ঘুরে পত্রিকা বিলি করা এক অন্যরকম অনুভূতি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার পত্রিকা বিলির এলাকা। এলাকা বৃদ্ধি পায় রোজবাড়ী থেকে সুলতানগঞ্জ, সুইসগেট পর্যন্ত। এতে করে তাকে প্রতিদিন সাইকেলে করে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে তার পত্রিকা বিলির অঞ্চল দাড়ায় ১২৫ কিলোমিটার।

প্রতিদিন তাকে সাইকেলে করে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। আশ্চর্য বটে! পরিশ্রমের তুলনায় আয়ের পরিমাণ যৎসামান্যই বৃদ্ধি পায়। তার বর্তমান দৈনিক আয় ১৫০ টাকা। এত পরিশ্রম , স্বল্প আয় তথাপিও তার এই পেশার প্রতি প্রবল আকর্ষণ। এই পেশায় তার প্রবল আকর্ষণের কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলে সে বলে পত্রিকা বিলি করা আমার মূল উদ্দেশ্য নয়।

আমি চাই প্রতিটি মানুষ পত্রিকা পড়–ক। দেশ ও জাতির তথ্য জনগণ জানুক। তারা এসব পড়বে, জানবে। এতে করে তারা সচেতন হবে। সুনাগরিক হয়ে উঠবে।

কি অদ্ভুদ ভিন্ন রকম মনোভাব তার। তার এ্ই কথা শুনে আমাদের হতবাক হতে হয়। যে পেশায় অবিরাম খাটুনি, যৎসামান্য আয় তাতে সে শুধূ এই পেশায় জড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র সমাজ সচেতন নাগরিক তৈরির লক্ষে। সত্যি এই ভিন্ন রকম মনোভাব সম্পন্ন মানুষ আমাদের সমাজে খুব কমই লক্ষ্য করা যায়।

সবচেয়ে মজার কথা হল তার বর্তমান বয়স ৩৮ এ পৌছলেও সে এখন অবিবাহিত। বিবাহ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম সে যখন সমাজে সৎ, সচেতনও সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। তখনই সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। সত্যিই তাই এমন দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন ব্যক্তি যদি আমাদের পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে থাকে তাহলে আমাদের সমাজ পরিবর্তনের আর সময় লাগার কথা নয়। আমরা চাই হকার আব্দুস সামাদের মত সৎ, পরিশ্রমী নাগরিক যারা আমাদের দেশকে উন্নত, স্বনির্ভও এমনকি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক করে তুলবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.