আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্দুস সালাম ও তাঁর আন্দোলন



ফেনী জেলার দাগনভুঁইঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে ১৯২৫ সালে আব্দুস সালাম জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। মাতার নাম দৌলতের নেছা। স্থানীয় মাতুভঁইঞা করিমুল্লা জুনিয়র হাই স্কুলে নবম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন।

পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগে পিয়ন হিসাবে চাকরি পান। ঢাকায় ৩৬বি, নীলক্ষেত ব্যারাকে বাস করতেন। ২১শে ফেব্রয়ারী (১৯৫২) ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় সরকার কর্তৃক জারিকৃত ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ছাত্র-জনতা বাংলা ভাষার দাবীতে যে মিছিল করে আব্দুস সালাম সে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় পুলিশের গোলাগুলির ভেতর তিনি গুলি বিদ্ধ হন। গুরতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারী বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক (২০০০) প্রদান করেন। শহীদ আব্দুস সালাম ছিলেন পিতা-মাতার বড় সন্তান। দুই ভাই একবোন এখনো জীবিত।

বর্তমান দুই ভাইয়ের নাম আব্দুস সোবহান (৭২) আব্দুল করিম (৫০) বোনের নাম বলকিয়ত নেছা (৫২)। বলকিয়ত নেছা শহীদ সালামের চেহারার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন ভাই বোনের মধ্যে সালামের গায়ের রঙ ছিল বেশ ফর্সা। ছোট বেলায় স্থানীয় মসজিদে পড়তে গিয়ে তিনি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলেন ফলে তাঁর কপাল কেটে গিয়েছিল। সেই কাটা দাগটি তাঁ চেহারার একটি বিশেষ চিহ্ন হিসাবে থেকে যায়। যখন আব্দুস সালাম শহীদ হন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেইশ কি চব্বিশ বছর।

৬০ এর দশকে তত্কালীন স্থানীয় সংসদ জনাব খাজা আহমদ শহীদের পিতা ফাজিল মিয়াকে দুই হাজার টাকা দিয়ে আব্দুস সালামের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত শার্টটি ও তাঁর দুটি আলোকচিত্র জাতীয় জাদুঘরে দেবেন বলে নিয়ে যান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ পর্যন্ত সেগুলোর কোন হদিন পাওয়া যায়নি। ভাস্কর রাসা শহীদ আব্দুস সালামের ছবি তৈরী করা ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হারিয়ে যাওয়া অবয়বটি পুনরুদ্ধার হয়। এই মহতী উদ্যোগ নিতে গিয়ে ভাস্কর রাসাকে বহু প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম জানতে পারেন ভাষা শহীদ আব্দুর সালামের কোন ছবি নেই।

এ কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য শহীদ সালামের পরিবার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের সংগে তখন তিনি যোগাযোগ করেন। তারপর থেকে তিনি চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে শহীদের হারানো প্রতিকৃতি উদ্ধার করা যায়। এভাবে বেশ কিছু সময় চলে যায়। ১৯৯০ সালে তাঁর ছবি জোগাড়ের চেষ্টা অর্থনৈতিক কারণে পিছিয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে একটি প্রামাণ্য চিত্রের পরিকল্পনা করে তিনি তত্কালীন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

তাঁর উত্সাহ ও অর্থায়ণে ভাস্কর রাসা "অস্তিত্বের শেকড়ে আলো" শিরোনামে প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণে এগিয়ে যান ও স্থানীয় জনগণ তাঁকে সহযোগিতা করেন। তাঁর অন্যতম সহযোগতায় ছিল সহকারী পরিচালক রানা সিদ্দিকী এবং স্থানীয় প্রতিনিধি শিমুল ও সমীর। ১৯ ফেব্রুয়ারী শহীদের স্বজনদের ঢাকা নিয়ে আসা হয়। যোগাযোগ বিষয়ক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান 'স্বপ্ন দশীর' মাধ্যমে টি,এস,সি সুইমিং পুল এলাকায় ছবি আকার অনুমতি মিলে। ২০ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টায় উক্ত স্থানে শহীদের ভাই-বোনদের বর্ণনা শুনে ছবি আঁকা শুরু হয় এবং দিনব্যাপি তা চলে।

এ ধরণের কর্মসূচী বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন। ছবি আঁকা শেষ হলে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর শহীদের ভাই বোনেরা জনশিল্পী সাহজাহান আহমেদ বিকাশের তৈল চিত্রটিকে ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। মহান দেশপ্রেমে অন্তঃপ্রাণ ভাস্কার রাসা ও খন্দকার জামিল ছবিটি জাতীয় যাদুঘরে দান করেন। উক্ত ছবিটি বর্তমানে জাতীয় যাদুঘরের একুশে গ্যালারীতে শোভা পাচ্ছে।

অংশগ্রহণকারী সম্মানীত শিল্পীদের নাম : (১) আব্দুল মান্নান। (২) অলকেশ ঘোষ। (৩) আহাম্মেদ সামসুজ্জোহা। (৪) শেখ আবজাল। (৫) সাহজাহান আহামেদ বিকাশ।

(৬) রাজিব সিদ্দিকী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.