আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তরের আরেক আপনঃ মুগ্ধ জানালার সেই মানুষদের ডাক আজ রবীন্দ্র সরোবরে...

কেবল সমুদ্র পারে শুষে নিতে সব, যা কিছু বিপ্রতীপ, ভেসে আসে নিদারুণ কষ্টের নীলজলে..

বেশ কিছুদিন আগে মৃত্যু বিষয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম। সেখানে কয়েকটা লাইন ছিলো এরকম- জোর করে কেউ দিওনা পাঠিয়ে অতল, অসার দীর্ঘ অজানা সেই অন্ধকারে। আমি নিভে গেলে এই নীলাকাশ, নীলাঞ্জণা, নীল নদী গাঢ় নীল কষ্টে ভুগবে.... আমি নিভে গেলে এই নিশি-ভোর, নিত্য দুপুর নীরার চোখের জলে যাবে ভিজে..... আমার এ কবিতা পড়ার পর আমার এক বন্ধু হাসতে হাসতে দুষ্টুমী করে জিজ্ঞেস করেছিলো- ‘তুমি নিভে গেলে শুধু কি এরাই কষ্ট পাবে আর কাঁদবে? আর কেউ নয়?’ আমিও হাসতে হাসতে বলেছিলাম- আরো কেউ কেউ হয়তো কাঁদবে, বিষন্ন হবে- আমি ঠিক সিওর নই....আমি ঠিক জানিনা.....। হ্যা, অবস্থাটা এরকমই ছিলো । এইতো কয়েকবছর আগেও আমি জানতাম- আমার অন্তরের একান্ত আপন, একান্ত কাছের মানুষগুলো বলতে আছে শুধু নিজের ফ্যামিলি, নিজের বন্ধু-বান্ধব আর নিকটাত্মীয় কিছু মানুষ।

... এর বাইরে এ জগতের আর কে-ই বা আমাকে চিনে? আর কে-ই বা আমাকে মনে রাখবে? আর কে-ই বা কোন বিষন্ন বিকেলে ভাববে- একমুঠো ফুল রেখে আসি- এই মানুষটির শেষ শয্যার পাশে?... কিন্তু ধারণাটা বদলে গেলো সেদিনই - যেদিন হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেলো- ব্লগার নুরুন্নবী হাসিবের সাথে। আমি মৌচাক মোড়ে দাড়িয়ে আছি আগারগাঁও যাবো বলে। .. একটা সিএন জি খুঁজছি। চতুর্দিকের ভীষণ রোদে ঘামছি। ...হঠাৎ করেই কানে ভেসে এলো এক ডাক- কেমন আছেন ভাইয়া?... আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম।

সুন্দর হাসিমুখের এক উজ্জল তরুণ। খুব পরিচিত একটা মুখ। অথচ আমি যেন ঠিক চিনতে পারছি না....। আমার যেন ঠিক মনে পড়ছে না...। কাছে এসে সে-ই বিনম্র স্বরে তার পরিচয় বলে ফেললো।

সাথে সাথে আমিও চিনে ফেললাম তাকে। সে আর কেউ নয়। আমাদের নূরুন্নবী হাসিব। আমাদের সামহয়্যারইন ব্লগের প্রমিনেন্ট উজ্জল ব্লগার। আমাদের প্রতিদিনের মুগ্ধ জানালার আরেক সঙ্গী।

আমাদের প্রতিদিনের অজস্র কথামালার আরেক কথক। আমাদের অন্তরের আরেক আপন। ... আমি তখন ভেতরে ভেতরে খুব লজ্জা আর বিব্রত বোধ করছি। কেন আমি পরিচয় দেবার আগেই চিনতে পারলামনা ব্লগার হাসিব-কে? তবে কি সত্যিই শেষপর্যন্ত বয়সের ভার আমাকে আক্রান্ত করতে শুরু করেছে?... হাসিব ততোক্ষণে নানা কুশল জিজ্ঞাসা শুরু করেছে আমাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলাম দুজন।

পরে দুজনেই স্বকল্প বাসে উঠলাম। আমি নামলাম আগারগাঁওয়ে। কিন্তু হাসিব তারো আগের এক ষ্টেশনে নামলো। তাই খুব বেশিক্ষণ কথা বলার সুযোগ হলোনা। ... কিন্তু যতোক্ষণ কথা বলেছি- ততোক্ষণ কেবলই অনুভব করেছি- এই ধরণের মানুষদের সাথে কথা বলতে পেরে আমি একধরণের তৃপ্তি অনুভব করছি।

.. আমি একধরণের আনন্দ অনুভবের মধ্যে সময় যাপন করছি। ... সবসময়ই লক্ষ্য করেছি, ব্লগারদের সাথে সাক্ষাতের সময় আমার ভেতরে এ ধরণের অনুভূতিটাই জেগে ওঠে। এ ধরনের অদ্ভুত ভালোলাগা বোধটাই কাজ করে। ... আমি কখনোই ব্লগারদের সাধারণ মানের মানুষ হিসেবে ভাবিনা। যারা প্রতিদিন নানা কথামালায় প্রকাশ করছে নিজেকে, যারা প্রতিদিন নিজ মাতৃভাষায় নানা অনুভবের আঙ্গীকে তুলে ধরছে তার নিজস্ব অনুভব, তাদের সবাইকে আমার উচ্চ মনের মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করতে ভালো লাগে।

আমি তাদের সবাইকে অন্তরের অভিবাদন জানাতে চাই। বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ আর বাংলার মানুষদের জন্য তাদের লেখনী শক্তির সকল ক্ষীপ্রতা আর অবদানকে আমি মাথায় তুলে রাখতে চাই। প্রতিদিন সকালে সামহয়্যারইনের মুগ্ধ জানালায় মুখ রেখে আমার তাই খুব বলতে ইচ্ছে করে, হে অনলাইনের শক্তিধর লেখকেরা, তোমরা যারা তোমাদের মেধা আর লেখনী শক্তির জোরে উপকার করে যাচ্ছো এই ভাষার, এই সমাজ ও এই রাষ্ট্রের, তারা আজ অভিনন্দন নাও। অভিনন্দন নাও মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে- মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে তোমাদের অসাধারণ সব কর্মযজ্ঞ আর নিঃস্বার্থ অবদানের জন্যে....। হাসিব এর সাথে দেখা হওয়ার দিনটাতেই আগারগাঁও থেকে ফেরার পথে আমি ছোটখাটো একটি দুর্ঘটনায় পড়ে গেলাম।

যে বাসে উঠেছিলাম তার ছাদে ঝোলানো একটি ফ্যানে লেগে আমার মাথার মাঝখানে প্রচন্ড আঘাত পেলাম। কিছুটা কেটেও গেলো। .... বেশ কিছুক্ষণ মনে হয় চোখে কিছু দেখছিলামনা। ... সমস্ত পৃথিবী আঁধার হয়ে আসছিলো। .... সেদিন রাত্রিতেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে সারাদিনের সবগুলো কথা নতুন করে ভাবতে গিয়ে প্রথম আমি অনুভব করলাম- সেদিনের সেই দুর্ঘটনায় আমার খারাপ কিছু হলে শুধু আমার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু- বান্ধব আর পরিবারের একান্ত সদস্যরাই শুধু সেকথা জানতে পারতো তা নয়- নিশ্চয়ই সামহয়্যারইন ব্লগেও পৌছে যেতো সে খবর.....হয়তো হাসিবই তার বিষন্ন কলম দিয়ে লিখতো -দুর্ঘটনার মাত্র কয়েকঘন্টা আগেই আমার দেখা হয়েছিলো সুনীল সমুদ্র’দার সঙ্গে.... ।

..... এরকম একটি ভাবনা বা কল্পনা থেকেই আমি অনুভব করলাম, আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবের সীমানা ছাড়িয়ে আমার প্রতিদিনের এ পৃথিবীতে- আমার অজান্তেই সৃষ্টি হয়ে গেছে আমার অন্তরের আরেক আপন। আমার ভালোবাসার আরেক সোপান -সামহয়্যারইনের প্রিয় যতো ব্লগার ! সেইসব প্রিয় মানুষেরা আসলেই আমার কতোটা প্রিয় আমি সবসময় তা ঠিক বোঝাতে পারিনা। তবে আমি চেষ্টা করেছি আমার কয়েকটি লেখায় আমার সেই নীরব ভালোবাসাকে তুলে ধরতে। সামহয়্যারে নিয়মিত হতে না পারার যন্ত্রনা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি সেই কষ্টকে তুলে ধরেছি কেমন আছো প্রিয় সামহয়্যার ইন? (1) এবং কেমন আছো প্রিয় সামহয়্যার ইন? (2) শীষর্ক দুটি লেখার বিস্তৃত পরিসরে ।

সামহয়্যারের ব্লগাররা আমার অজান্তেই আমার কতোটা আপন হয়ে গেছে তা তুলে ধরেছি তুমি ভালো আছো? তুমি ভালো আছো, প্রিয় সামহয়্যার ইন? শিরোণামের লেখাটির মাঝে....। তারপরেও কখনো কখনো মনে হয়- সেই ভালোবাসার সঠিক বহিঃপ্রকাশ এখনো সম্পন্ন হয়নি যথাযথভাবে। ... হয়তো এখনো অনেক কিছুই বলার বাকী রয়ে গেছে সেইসব প্রিয় ব্লগারদের। ... বলতে চাইলেও অনেকসময় আর বলা হয়ে ওঠে না- কোন কোন ব্লগারের লেখা কীভাবে কেমন করে আমাকে এ বৈরী পৃথিবীতে নতুনভাবে বাঁচতে উৎসাহিত করে ! লিখতে চাইলেও অনেকসময় আর লেখা হয়ে ওঠে না- কোন কোন ব্লগারের লেখা পড়তে পড়তে আমি কীভাবে কেমন করে আবেগ আপ্লুত হয়ে ভেবেছি- “আমি সবকিছু ছাড়তে পারি, তবু হে ব্লগ, শুধু তোমাকেই ছাড়তে পারবোনা। “..... ব্লগারদের অপরূপ অসাধারন সংসর্গ ইদানীং আমাকে অন্যায় আর অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতেও সাহস যোগাচ্ছে।

এইতো কিছুদিন আগেই এক সরকারী কার্যালয়ে এক কাজে গিয়ে সেখানকার তীব্র অনিয়ম ও বিশৃংখলা দেখে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠলাম। তখন সাথে ছিলো আমার এক বন্ধু। আমাকে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করতে দেখে আমার সেই বন্ধু আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বললো- সব ব্যাপারে সবখানে এভাবে প্রতিবাদ করতে যেয়োনা- পরে তুমি নিজেই বিপদে পড়বে। আমি চট করে বলে বসলাম- আমার আবার কিসের বিপদ? দরকার হলে আমি এসব অনিয়মের কথা ছবি সহ ব্লগে তুলে নিয়ে আসবো। ইন্টারনেট বিশ্বের হাজার হাজার সমাজ-সচেতন দেশ-প্রেমিক ব্লগার নিশ্চয়ই আমাকে সমর্থন দেবে! আমার আবার কিসের ভয়?... বন্ধুকে এ কথা বলে উত্তর দেবার পর আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম।

কি আশ্চর্য্য ! কী ভীষণ আশ্চর্য্য ! কয়েকবছর আগেও আমি নিজেকে খুব একা ভাবতাম। দেশ অথবা সমাজের কোন অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন সাহস আমার ছিলোনা.... । অথচ এখন আমি আর নিজেকে একা ভাবিনা....। যে কোন কঠিন পদক্ষেপের সময় মনে হয়- অজস্র সমাজ সচেতন দেশপ্রেমিক ব্লগারদের ভালোবাসা আমার সবচেয়ে সুকঠিন সাহসী সঙ্গী। ********************************** অন্তরের আরেক আপন, হৃদয়ের একান্ত কাছাকাছি সেইসব মানুষদের ডাক এলো মোবাইলে।

মেসেজ পাঠিয়েছে ব্লগার রাতমজুর। Hello mate, Oct 2 Friday @ 5 pm ejta gooltani adda hoibo dhanmondi lake. Aile Khushi hoitam…..With wishes- RAATMOJUR আমি বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসেজটি পড়লাম। একবার দুবার অজস্রবার....। আমি কি যাবো ? আমি কি যেতে পারবো তাদের সবার সাথে দেখা করতে ? অনেক্ষণ ধরে অদ্ভুত এক আনন্দ অনুভব আমার সমস্ত সত্তাকে গ্রাস করলো। .... আসলে এই মেসেজ আমার কাছে সাধারণ কোন মেসেজ নয়।

এই ডাক আমার কাছে সাধারণ কোন ডাক নয় । এই ডাক অন্তরের আরেক আপন- প্রতিদিনের মুগ্ধ জানালার সেইসব প্রিয় মানুষদের ডাক। এই ডাক - অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা একান্ত আন্তরিকতার এক ডাক। এই ডাক - বিশুদ্ধ অনাবিল এক ভালবাসার.....। রোদ হোক।

বৃষ্টি হোক। শহর থমকে থাকুক যানজটে। তবুও এই ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য আমার নেই.....। .............................................................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.