অন্তরের আলোয় দেখেছি যারে - ২
তোমাদের ব্যস্ততম নগরীর তুমুল কোলাহল, তীব্র যানজট, কালো ধোঁয়া আর বর্জ্য দূষণের থাবা থেকে আমি এখন অনেক দূরে। একদম মুক্ত আর খোলামেলা পরিবেশে নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করছি। প্রাণভরে উপভোগ করছি আমার প্রিয়তম প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য, অপরূপ সবুজে ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ আর মিহি হাওয়ায় দোলানো এক একটি চকিত লহমা। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ শেষে বর্ষার ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ভিজে ওঠা প্রকৃতির গাঢ় সবুজের ছোঁয়ায় মনটা অসম্ভব ভাললাগায় ভরে উঠছে। সেই নিরাভরণ শোভাটুকু দু'চোখ মেলে দেখছি- এই সবকিছুর মাঝে যা কিছু সুন্দর তার সবটুকু অবগাহনে সিক্ত হয়ে লিখছি আমার মনের অব্যক্ত কিছু কথা।
না লিখলে আমার মনের এলোমেলো আবেগ আর অনুভূতিগুলোকে তাচ্ছিল্য করা হবে। নত করা হবে আমার এক জনমের সঞ্চিত সুকুমার চিন্তা আর চেতনার শৈল্পিক সত্ত্বাকে, প্রশান্তির নান্দনিক সুবাতাসকে।
তোমার প্রতি আমার শুভেচ্ছা বরাবরই আন্তরিকতার, কখনোই বৈরিতার নয়। তোমাকে বন্ধু ভাবি সর্বদাই, শত্রু ভাববার অবকাশ পাইনি কখনো। তোমাকে লিখবার ইচ্ছেটা সেই কবে থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল।
কিন্তু নানা ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে আর লেখা হয়ে ওঠেনি। মনকে প্রস্তুত করতেই হয়তো এই অহেতুক বিলম্ব।
আমি এখন উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকার সবুজ ছায়াঘেরা ছোট্ট একটা গ্রামে। বলতে পারো একটা অজ পাড়াগাঁয়ে আস্তানা গেড়েছি। বাড়ীর পাশেই পুরোনো এক অশ্বথ গাছ।
সেই অশ্বথ গাছের নীচে একটা শীতল পাটি বিছিয়ে আধশোয়া অবস্থায় তোমাকে লিখতে বসেছি। এখানে বিদ্যুৎ যাবার কোন আশঙ্কা নেই। কানের কাছে নেই সুতীব্র গাড়ীর হর্ণ। যানজট নেই, নেই সেই যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ত কোলাহল। মশার তেমন কোন উপদ্রপ নেই, নেই কোন মিটিং-মিছিল।
নেই চীৎকার, গলাবাজি আর হরতালের বিক্ষুব্ধ দাপাদাপি। এখনকার পরিবেশ একদম শান্ত ধীর-স্থির। স্নিগ্ধ সবুজের ছোঁয়া চারিদিকে। উৎফুল্ল পাখীর নানান ধরণের কিচির মিচির। বাতাসে দোদুল দোলানো তাল-সুপারি গাছ, আলোছায়ার লুকোচুরি।
বিকেল গড়িয়ে এখন প্রায় নিভু নিভু সন্ধ্যা। তবুও লেখায় আমার মন নিবিষ্ট। বৃদ্ধ মালি একসময় জ্বালানো লন্ঠন রেখে গেল।
রাতের একলা বিষন্ন তারাগুলোকে আমি দুহাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেষ্টা করি। তারাগুলো আমার সমব্যথী হয়ে যায় মুহূর্তে।
আমরা একসঙ্গে দুঃখ আর কষ্টগুলো ভাগাভাগি করি সূর্য জেগে ওঠার আগ পর্যন্ত। মাঝে মাঝে এমন হয় তারাগুলো ভীষণ অভিমান করে। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায় কিছু না বলেই। আমি তখন আরো একলা হয়ে যাই, দারুণ নিঃসঙ্গতা অনুভব করি। নির্জনতম প্রহরে আমার জাগ্রত সত্ত্বা ফেলে আসা স্মৃতির ঢেউ গুনতে থাকে।
গুনতে থাকে হারিয়ে যাওয়া বসন্তের বয়স। কতইবা হবে এদের সমষ্টি। আমার বয়সের চেয়ে বেশীতো আর নয়! অথচ মনে হয় প্রতিটি বসন্ত যেন আমার বয়সের তুলনায় যথেষ্ট প্রবীন, অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।
আমি কান্ত, অসহায়, পরাজিত এক স্বপ্ন-প্রেমিক। ঐ দূরের বিশাল গৃহিণী আকাশের তারা ঝিলমিল আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আমার নির্বাসিত মন তোমার অংশীদারিত্ব চায়।
দুহাতে ছুঁতে চায় লাল, নীল, বেগুনী নানা রঙের কল্প-ঘুড়ি। কখনো এমনও মনে হয় হৃদয়ে যে শব্দের নৌকা জন্ম নেয় তা ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে মানবীয় কোন চলমান নদীর স্রোতে। নোঙ্গর ফেলতে সাধ করে বিশ্বস্ত ভালবাসার কোন এক বন্দরে। তা আর হয়ে ওঠে না। কথার নৌকা পড়ে থাকে হৃদয়ের শুন্য বেলাভূমিতে।
বেলা-অবেলায় কেউ ফিরে তাকায় না সেদিকে। আমি তাই কারও হতে পারিনা, কেউ আমার হয়না। কথার পিঠে সূতো বুনে শব্দের যে নকশি কাঁথা বুনেছি তা আর কারো জন্য পেতে দিতে পারিনা। জীবন সৈকত থেকে ছোট ছোট নুড়ি কুড়িয়ে যদি কারও হাতে দিয়ে বলা যেত, "যতনে রেখ, এগুলো আমার স্বপ্ন"। তবুও মনে হয় কোন একদিন মাঝরাতে স্বপ্ন দেখবো- কেউ আমাকে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছে।
কেউ আমাকে এক ঝাঁক হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে বলছে, "এই শোন, তুমি আমার বন্ধু হবে"?
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।