অন্তরের আলোয় দেখেছি যারে - ৭
আমার জীবন থেকে নিঃশব্দে হারিয়ে গ্যাছে আমার প্রিয় কবিতাগুলো। মন থেকে নির্বাসন দিয়ে রেখেছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দকে আর সুকান্তকে। আমার গতানুগতিক জীবনপ্রবাহে "সোনারতরী" আজ আর কোন কূলেই ভিড়ে না। "বিষের বাঁশী"তে আর কখনই বাজেনা "অগ্নীবীণা"র সুর। জীবন থেকে ছুটি নেবার মত কোন "ছাড়পত্র" কেউই হাতে ধরিয়ে দেয়না।
ঘরের শূন্য উঠোনে আর সবুজ ঘাসের গালিচায় শুধুই পরে থাকে জীবনের "ধূসর পান্ডুলিপি"। মাঝে মাঝে অবসন্ন রাত্রির বিস্তৃত আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজে ফিরি সেইসব হারিয়ে যাওয়া কবিতার চরণ, বইয়ের পাতায় জেগে থাকা নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বলে অক্ষরগুলো।
সংসারের মধ্যে থেকেও সন্নাস জীবনের আচার আচরণ রপ্ত করা যে এক ধরণের একাকীত্বকে বরণ করে নেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা বা ভন্ডামি সেটা টের পেতে যথেষ্ট সময় লেগেছিল। শ্বেতবস্ত্র ধারণ করলেই যে তা কোন কুমারীর স্বেচ্ছা বৈধব্য নয় সেটাও বুঝতে দেরী হয়েছিল। আমার চারিপাশে ভন্ড, লোভী আর স্বার্থান্বেষী মানুষগুলো দেখে দেখে সেই ধারণাটাই মনে পোক্ত হয়ে বসেছিল।
আবার এটাও ভাবতাম সময়ের ব্যবধানে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি কোন কিছুই ঠিক হবে না। কারণ, সময় এখন বিপরীত স্রোতের দিকে ধাবমান।
বিপরীত ধারার স্রোতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবার বাসনা আমার নেই। যুদ্ধে জয়ী হবার মত সাহস আর মনবল এখন নেই।
জয়ী হবার মত কৌশলটাও রপ্ত করিনি আর যুদ্ধ করবার মত উপযুক্ত ক্ষেত্র এটা নয়। আমার মনের খোলামেলা জগতে একসময় যে ভাললাগার ছন্দ প্রতিনিয়ত দোল খেতো তা আর কখনই ফিরে আসবেনা। আমার শ্রান্ত, ক্লান্ত মন বেদনার তুলিতে দিনের পর দিন এঁকে যায় হৃদয়ে গ্রথিত প্রতিটি বিষাদময় অনুভূতির খন্ডচিত্র। সেই অনুভবচিত্রে কোন খুশীর উজ্জ্বল পরশ নেই, নেই কোন আনন্দের ছোঁয়া, নেই কোন উচ্ছাসের গাঢ় টান, নেই কোন বাসনার ছিটে ফোটা- আছে শুধু ডানা ভাঙ্গা পাখীর নীড় হারানোর কষ্ট আর বেদনা। এক আহত সৈনিকের যুদ্ধ জয়ের নিষ্ফল স্বপ্ন আর সেই স্বপ্ন ভাঙ্গার সকরুণ হাহাকার।
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।