অন্তরের আলোয় দেখেছি যারে - ৩
আমার বুকের গহীনে লালন করা এসব কথামালা প্রকাশ করার আগেই মনের আঙ্গিনায় একরাশ কষ্টের নীল পাহাড় জমা হয়ে আছে। এরপর কোন এক স্বাভাবিক রাতে তোমার সাথে আমার প্রথম কথা হলো। প্রতিটা রাতের মতই ছিল সেই রাত, ভিন্নতা ছিলনা মোটেও। ছিলনা থৈ থৈ জোছনার হাতছানি, কিংবা উজ্জ্বল কোন নক্ষত্রের উপস্থিতি। স্বাভাবিক একটা রাতের মতই এসেছিল সেই রাত।
পরিচয়ের সূত্রটা গোধূলি লগ্নে ছিল বলেই দেখতে না দেখতেই আঁধারের ঘোমটায় ঢাকা পরে গেল চারিধার। কণে দেখা আলোয় ভাল করে দেখা হতে না হতেই অন্ধকার নেমে এলো। আকাশে চাঁদ নেই, তাই জোছনারও বালাই নেই। জোনাকীর সাথে আমার সখ্য নেই তেমন। তোমার উজ্জ্বল মুখশ্রী জোনাকীর বিচ্ছুরিত আলোকে ম্লান করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারিনা।
এমনকি হিংসায় তারা না'ও জ্বলতে পারে, যেমন অন্যেরা হিংসেয় জ্বলে ওঠে আলো ছাড়াই। অতঃপর বিষ্ময়ভরা যৌবন আধফোটা কুসুমকলির মতো আরমোড়া ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই কারো বন্ধুত্বের সান্নিধ্য পেতে মন অধীর আগ্রহে বিচলিত হয়ে ওঠে। মনকে বুঝাই, বন্ধু সেতো শুধু আমারি- আছে, থাকবে। এও জানি একসময় তার মন থেকে অবিশ্বাসের সকল কৃত্তিম আবরণগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে।
সেই আবরণ খুলেছে এক সময়।
আমি অবাক বিষ্ময়ে পড়েছি তার লেখা, অপরূপ সে বর্ণনা। সৌন্দর্যের ডালিতে সাজানো তার শাশ্বত সুন্দর কথামালা। আমি মন পেতে শুনেছি তার সেসব কথা, শুনেছি তার মন থেকে জেগে ওঠা অনুপম সুরের নিখাদ অনুরণন। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ফাগুনের কোন এক আগুনঝরা রাতে। শুক্লা পক্ষের রাতে আকাশে সেদিন আকাশে ছিলনা জ্বলজ্বলে চাঁদ, লগ্ন কী ছিল জানিনা, তিথি কী ছিল তা'ও মনে নেই।
মুক্ত প্রকৃতির কোলে ওয়ার্ডস ওয়ার্থের "লুসি" যেমন ফুল হয়ে ফুটেছিল, তেমনি মুক্ত পরিবেশে তার অবাক করা কথামালা আমার মনে ভালবাসার মাধবীলতা হয়ে বিকশিত হয়েছিল। অনুভবের পরতে পরতে তার ছিল আবেগ ছড়ানো রঙ।
দুটো মন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে একদিন একই বাসনা নিয়ে দু'জনে এক হয়ে যাবো- এমন কোন স্বপ্ন আমরা কখনো দেখিনি। দুটো জীবন একই স্বপ্ন লালন করে একদিন মিলিত হবো একই মোহনায়- এমন কোন প্রত্যাশা মনে রাখিনি। বরং ঘুনে ধরা এই সমাজের দুই মেরুতে দুজন বাস করেও দুটো মানবিক আত্মা, দুটো আবেগতাড়িত হৃদয় বন্ধুত্বের প্রত্যাশা নিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে হেঁটে যাবে, উচ্চারণ করবে শাশ্বত সুন্দরের শব্দাবলী, এমনটাই আশা করেছিলাম।
মনের অগোছালো ভাবনাগুলো ইচ্ছেমতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াবে প্রজাপতির মতন এমন আশাবাদ নিয়েই আমাদের কথা শুরু হয়েছিল। সেই শুরু হওয়া কথা আজ হয়তো শুকিয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীর মত গতিহীন, পথহারা- সময়ের ভারে ক্লান্ত, দূরত্ব অতিক্রমে পরিশ্রান্ত। সেই নির্মল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজ হয়তো রূপে কিংবা মাধুর্যে আগের মত তেমন বহমান নয়। বন্ধুত্বের দাবী আর ভালবাসা কী কখনও হৃদয় নামের জলাশয়ে অবিশ্বাসের কচুরীপানায় ভরে যেতে পারে?
আমি মানুষের মাঝে যেমন মানবীয় ও মহৎ কিছু দেখেছি, আবার তেমনি পাশবিক ও দানবীয় অনেক কিছুই লক্ষ্য করেছি। লক্ষ্য করেছি স্বার্থের কারণে মানুষ কতটা নোংরা হতে পারে, কতটা হীন ও জঘন্য কাজ করতে পারে।
বাহ্যিক ভদ্রতার খোলসে কতটা কদাকার রূপ তারা ধারণ করতে পারে। কারো সরলতাকে পুঁজি করে মানুষ তাকে কতটা হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। মানসিকতার এই পরিবর্তন নতুন কিছু নয়, অবিশ্বাস্য কিছু নয়। এই বন্ধুত্বের চড়াই উত্ড়াই পথ মাড়িয়ে আমি নিজে যেমন অনেক ঠোকর খেয়েছি তেমনি অন্যকেও ঠোকর খেতে দেখেছি। তাই একসময় বন্ধুত্বের সকল পথ গুটিয়ে এনেছিলাম।
হয়তো এভাবেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম। এমনি এক মহেন্দ্র ক্ষণে, আমার মনের রুদ্ধ দ্বারে তোমার সচকিত কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। অতীতের প্রতীজ্ঞা ভুলে মনের সেই রুদ্ধদ্বার খুলতে বাধ্য হলাম। দেখলাম তুমি, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছো আমারি দ্বার প্রান্তে। চোখে মুখে বিশ্বাসের ছায়া।
পারলাম না, তোমার বন্ধুত্বে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। কোন এক অবসন্ন চেতনার গোধূলিবেলায় তোমাকে হঠাৎ করেই পেয়ে গেলাম তোমাকে। ঠিক তোমাকে নয়, তোমার বন্ধুত্বপূর্ণ হৃদয়ের একান্ত উষ্ণ ছোঁয়াটুকু আপন করে পেয়ে গেলাম।
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।