অন্তরের আলোয় দেখেছি যারে - ৬
তোমাদের আলো ঝলমলে ভূবনে আমার থাকা না থাকা এখন পুরোনো বৃক্ষের মত। বাড়তি উচ্ছাস নেই, অকারণ বিষাদ নেই, ঠিকমত যত্ন নিতে পারিনা আবার মায়ার কারণে কেটে ফেলতেও আপত্তি। এসবই প্রকৃতির বিধান, তাই আলাদা করে ভাল বা মন্দ থাকার কথা লিখতে মন চাইছেনা। বেঁচে আছি এটুকুই সান্তনা। জীবনের বেশীর ভাগ অংশ কেটে গেছে নানান ভুলভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে।
উপলব্ধির সীমানায় পৌঁছানোর আগেই বয়ে গেছে অনেক জলের ধারা। মেধা, সময়, অর্থ এবং ভালবাসা বিলিয়ে যা কিছু অজর্ন করেছি- আমাদের তথাকথিত সমাজে তার কানাকড়ি মূল্য নেই। তাই কোন বন্ধু বা হিতৈষীর পাঠানো একটা মেইল বা একটা এসএমএস পড়ে যখন নিজের অজান্তেই হেসে উঠি তখন সমাজের অতি হিসেবী মানুষগুলো ভ্রু কুঁচকে ভাবে, "কী রকম পাগল আর বোকা মানুষরে বাবা"।
তারা যদি আজ আমার নিকট অতীতে হারিয়ে যাওয়া সময়ের মুখোমুখি এসে আমার শুকনো ফুলের মত নেতিয়ে যাওয়া অনুভূতির সামান্যটুকু ধারণ করতো, তাহলে বুঝে নিতো একটা মেইল বা এসএমএস কী বিপুল পরিমাণ ভাললাগা নিয়ে হাজির হয় আমার হৃদয়ের মরু প্রান্তরে, কী প্রচন্ড নাড়া দেয় আমার হৃদপিন্ডকে। সেটা শুধু আমিই উপলব্ধি করতে পারি।
তৃষ্ণার্ত চাতক পাখীর মত আমার যাযাবর জীবনের বিরান উঠোন সাজিয়ে বসে থাকি, উন্মুখ হয়ে থাকি- একটা মেইল বা একটা এসএমএস-এর জন্য। পৃথিবীর নানা প্রান্তে আমার যে সব প্রিয়জনেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদেরকে নিমিষে কাছে পেয়ে যাই। অনুভব করি তাদের একান্ত সান্নিধ্য। ভাবি দূরে থেকেও তারা এই মুহূর্তে কত কাছে।
অনেক প্রতীক্ষার পর মনে হয় এই বুঝি এলো সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি, আমি যার অপেক্ষায় আছি।
সেই তরঙ্গবাহী ইথারের বার্তা আমার মনের শুষ্ক জমিন ভিজিয়ে দিয়ে যায় এক পশলা আন্তরিক উষ্ণ জলের ধারা হয়ে। আমি সেই জলে মিটিয়ে নেই আমার বুকে জমে থাকা প্রচন্ড তৃষ্ণা। বার্তা পড়া শেষ হলেই বুকের মধ্যে জেগে ওঠে এক চাপা হাহাকার। মনে মনে ভাবি, একদিন আমিওতো ছিলাম সবার জন্য এমনি এক সিঞ্চিত জলের উৎস। এমনও ভাবি- আবার কখনও কী ফেরা হবে সেই শেকড়ে? আবার কী জমবে সেই উৎসবের মেলা? আবার কী প্রিয় কোন চেনা মুখ হাজার মানুষের ভীড়ে হাত নেড়ে ডেকে বলবে, তোমাকে খুঁজে পাব ভাবিনি।
আবারও কী কারও বিশ্বস্ত কাঁধে হাত রেখে হেসে উঠতে পারবো- ফেলে আসা সেই অতীতের মত?
কালের বির্বতনে অতীত ফিরে আসে শুনেছি। তবে এক জীবদ্দশায় তা হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই চলার পথে আমি যতসব অদ্ভুত আর বিচিত্র দুঃখবোধগুলো কুড়িয়ে নেই। সময়ের কোলে কোলে একদিন তা বড় হবে এই ভেবে। একদিন সব দুঃখ পালকগুলো এক এক করে খসে পড়বে জানি।
আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের মাথায় একদিন শোভা পাবে হীরক উজ্জ্বল মানবতার মুকুট। সেদিন তারা ঘরের কোণে রেড ইন্ডিয়ানদের মত সৌভাগ্যের প্রতীক ভেবে সাজিয়ে রাখবে সেই সব দুঃখ পালক।
আমার চারিপাশে সময় নামের কাঁটাতারের বেড়া। আমি হাজার চেষ্টা করেও সেই বেড়া টপকাতে পারিনা। তাই কাছে দূরের অনেকের সাথেই পাশাপাশি বসে প্রাণভরে কথা বলতে পারিনা।
আমার হাতে কোন শেকল নেই, পায়ে কোন বেড়ী নেই- তবুও কী অদ্ভুত এক বন্দীশালায় আমার জীবন কেটে যাচ্ছে। মনের মত মানুষ বিবর্জিত কোন জায়গা যে বন্দীত্বের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে তা এই প্রথম টের পেলাম। আমার চারিপাশের মানুষের সাথে আমার মানবিক দূরত্ব হয়তো তেমন একটা নেই। তবে মানসিক দূরত্বটা অনেক বিশাল। মানুষের মাঝে থেকেও নিজেকে মানুষ ভাবতে ভয় হয়।
কী এক অদ্ভুত মানসিকতা আমার ভেতর সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিজেকে মনে হয় পরিবেশের সাথে খাপ না খাইয়ে নিতে পারা বিলীন কোন মানব ডাইনোসোর।
মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। শ্রেষ্ঠত্ব বাদ দিলে শুধুই জীব। আর জীব মানেইতো পশু।
আমি পশুত্বকে বর্জন করতে চাই। পশুত্ববাদ দিলে তবেই আমি পরিপূর্ণ মানুষ । আমার কাছের সবাইকে আমি মানুষ ভাবতে চেষ্টা করি। পরিচিত অধিকাংশই এসেছে একটা নির্দ্দিষ্ট সামাজিক গন্ডির আবর্তে ঘুরপাক খেয়ে। তাদের বলয় ভিন্ন।
তাই তাদের সাথে আমার মানসিক তফাৎ থাকাই স্বাভাবিক। তবুও কাউকে এড়িয়ে যেতে পারিনা। তারা অনেকেই সম্পর্কের সূক্ষ্ম দেয়াল তুলে দেয়ালের ওপাড়েই রয়ে যায়। আমি কিছুতেই সেই দেয়াল ভাঙ্গতে পারিনা। আর পারিনা বলেই মানসিক বৈষম্যের এই অদৃশ্য পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে নষ্ট করে দেয়।
চলবে-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।