লিখতে তো দেখি ভালোই লাগে.......
বেচারী মা টা একা। এসেছে অনেক দূর থেকে। সেই টেকনাফ থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে শুধু নিজের মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। মেডিকেল এর একটি জেনারেল বেডে শুয়ে আছে তার মেয়েটি। খুবই শঙ্কা জনক অবস্থা।
ডাক্তার রা তাকে এই ঔষুধ সেই ঔষুধ আনার জন্য স্লিপ লিখে দিচ্ছে। কিন্তু তার সামর্থ খুবই কম। তবুও সে যতটুকু পারছে করছে। বৃদ্ধা মা টি ঔষুধ আনতে গেলে কোথায় উদাও হয়ে যায়। আসে অনেক ক্ষণ পরে।
কোন সময় হয়ত ঔষুধ আনতে পারে কখনও বা আসে খালি হাতে। ডাক্তার রা ঝাঁড়ি দিয়ে উঠে বলে এমন করলে তো আপনার মেয়েকে আপনি বাঁচাতে পারবেন না। বেচারী কিছুই বলে না। কি করতে পারে সে। সেতো অক্ষম।
শুধু যে টাকা পয়সা দিয়েই অক্ষম তাই নয় বুদ্ধি বিবেচনায়ও সে অক্ষম। এই শহরের বড় বড় ডাক্তারদের কথা তার বোধগম্য হয়না। সে কি করতে কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা।
ডাক্তার রা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। ঔষুধ পত্র যা মেয়েটির মা সরবরাহ করতে পারছেনা তা মেডিকেল এর সীমিত স্টক থেকে সরবরাহ করে চিকিৎসা চালিয়ে যায়।
হঠাৎ করে আমার বড় বোনের ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়ে খিঁচুনী চলে আসল। সিজার হয়েছে ১ সপ্তাহ হয়ে গেছে। অর্থাৎ রিস্ক পিরিয়ড পাড় হয়ে গেছে। এই ধরণের সমস্যা রেয়ারলি হয়। আমার ডাক্তার বোন তড়িঘড়ি করে ওকে মেডিকেল নিয়ে গেল।
কারণ এই ধরণের জটিলতার উপযুক্ত চিকিৎসা মেডিকেলেই সম্ভব। আপুকে নানান ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হল। আমাদের কাজ হচ্ছে ২৪ ঘন্টা ওকে অবজারভেশনে রাখা। তাড়াতাড়ি ২/৩ টি প্লাস্টিকের মোড়া কিনে এনে আপুর পাশে বসে গেলাম আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে ঘুমাতে সাহায্য করতে লাগলাম। এভাবে আমাদের একটা পুরো দিন ও রাত কাটল।
আমার ডাক্তার বোন অন্য ডাক্তার দের সাথে কথা বলে জানতে চাইল ওকে কেবিনে নিতে পারব কিনা। ডাক্তার জানাল যেহেতু তুমি (আমার বোন) ডাক্তার সেহেতু তোমার ভরসায় আমরা উনাকে কেবিনে দিতে পারি। তবে তোমাকে সার্বক্ষণিক প্রেসার মেপে আমাদের জানাতে হবে এবং সন্ধ্যার আগে নিতে পারবে না। অতএব আমার বোনটি আমাকে আপুর পাশে বসিয়ে বাসায় গেল ফ্রেশ হতে। আমি আপুর পাশে বসে বসে দোয়া দরুদ পড়ছি আর আসে পাশের রুগীদের অবস্থা দেখছি।
বৃদ্ধা মা আর তার মেয়ের অবস্থা এখানে এসেই দেখা। ডাক্তার রা কিছু পর পর মেয়েটিকে দেখে যাচ্ছে। মেয়েটি পাঁচটি সন্তানের জননী। বয়স খুব বেশি বলে মনে হয়নি। এটি তার সিক্সথ টাইম প্রেগনেন্সী পিরিয়ড।
সে পাঁচ মাসের অন্তর্সত্ত্বা। যতটুকু শুনেছি ঘুমের ঔষুধ নাকি কি ঔষুধ খেয়ে ফেলেছে সে । ওকে চেকআপ করে এসে ডাক্তার আমার আপুর ব্লাড প্রেসার দেখতে এলেন। শুনলাম বলতে বলতে আসছে মেয়েটির মা কই? উনাকে স্ট্রিপ আনতে দিলাম উনি কোথায় উদাও হয়ে গেছে। মেয়েটি কি শেষ পর্যন্ত মারাই যাবে! আপুর প্রেসার দেখে ডাক্তার আমার থেকে স্টিপ চাইলেন ব্লাড সুগার টেস্ট করার জন্য।
আমি স্ট্রীপ এর প্যাকেটটি দিলাম। আপুর ব্লাড সুগার নরমাল আসল। এন্টার্নি ডাক্তার আমার থেকে একটি স্ট্রীপ চেয়ে নিল। বলল ওর মা নিয়ে এলে রিটার্ন করবে। ডিউটি ডাক্তার বলল রুগীটি খুব গরীব স্ট্রীপ আনতে পারবে না আপনাদের কোন সমস্যা নেই তো।
আমি বললাম না না কোন সমস্যা নেই।
আমি আপুর পাশে বসে আছি। ইফতারের সময় হয়েছে। বাসা থেকে পাঠানো ইফতার খাচ্ছিলাম। ।
দেখলাম একের পর এক ডাক্তার আসছে। মেয়েটির পালস দেখছে, চোখ দেখছে। আমার খুবই ভয় লাগল। আমি মেয়েটির জন্য দোয়া করতে লাগলাম আবার নিজের বোনের মাথায় হাত দিয়ে দেখে নিলাম ও ঘুমাচ্ছে কিনা। ডাক্তার রা একে একে মেয়েটিকে পরীক্ষা করে চেয়ারে মন খারাপ করে বসে পড়ে।
মেয়েটির মা কোথায় জিজ্ঞেস করাতে একজন বলল ইফতার করতে গেছে। ডাক্তার বলল তাড়াতাড়ি ওর মাকে খবর দাও। অক্সিজেন, স্যালাইন সব খুলে নেওয়া হল। বেচারী মা কাঁদতে কাঁদতে মেয়ের লাশের সাথে চলে গেল। আমি খেয়াল করলাম আমার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলাম। বেচারী মা আর মেয়েটির পাঁচটি সন্তানের জন্য খুব কষ্ট হতে লাগল। জানি আল্লাহ ই ওদের দেখবেন।
সেদিন রাতেই আমরা আপুকে নিয়ে কেবিনে চলে আসছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার আপু এখন অনেকটাই ভালো আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।